দিল্লি, ৪ মে– তৃতীয় দফার লোকসভার ভোট ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে ফের এবার বিতর্কের মুখে দাঁড় করাল৷ জানা গিয়েছে, এই ভোটে ১৩৫২ জন প্রার্থীর মধ্যে মহিলা রয়েছেন মাত্র ১২৩ জন৷ যা মোট প্রার্থীর মাত্র ৯ শতাংশ৷ অথচ আগের দু’দফার ভোটে মোট ২৮২৩ প্রার্থীর মধ্যে ছিলেন ২৩৫ জন মহিলা৷ অর্থাৎ ৮ শতাংশ৷ এই পরিসংখ্যানকে ধরে দেশ জুডে় আলোচনা চলছে, ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নিয়ে৷ লোকসভা ভোটে নারী-পুরুষ সাম্য বজায় রাখতে না পারলেও ভারত কিন্তু দেশের রাজনীতিতে নারীশক্তির নেতৃত্বের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে অনেক উঁচুতে বলতে ছাড়ে নি৷
রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিকা কাম্বোজ ভারতে পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থায় নারীশক্তির উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্বের প্রশংসায় বলেন, গ্রামীণ প্রশাসনের মস্ত হাতিয়ার হল পঞ্চায়েতিরাজ৷ তৃণমূলস্তর থেকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে এটাই ভারতের অনন্য সাধারণ ব্যবস্থা৷ আর এই ব্যবস্থায় মহিলারাই অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছেন৷
আন্তর্জাতিক দরবারে ভারতের প্রতিনিধি যখন এইভাবে নারীশক্তির গুণগান গাইছেন তখন অন্যদিকে লোকসভা ভোটে মহিলা প্রতিনিধিত্বের হার কিন্তু অন্য ছবি দেখাচ্ছে৷ সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ তিনটি দফায় মহিলা প্রার্থীর হার মাত্র ১৭ শতাংশ৷ এরথেকেও বড় ভাবনার বিষয় হল, তৃতীয় দফার ভোটে মোট ১৩৫২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৮ শতাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে৷ যা মহিলা প্রতিনিধিত্বের থেকে দ্বিগুণ৷ ৩৮ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মহিলাঘটিত অপরাধের মামলাও চলছে৷ তিনটি দফার ভোটে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪১৭৫ জন৷ তাঁদের মধ্যে মহিলা প্রার্থী হলেন ৩৫৮ জন৷
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের লিঙ্গ-সাম্য অর্থাৎ পুরুষ-নারী সমান সমান চিন্তাভাবনার প্রশংসা করে কাম্বোজ বলেন, ১৯৯২ সালে সংবিধান সংশোধন করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য মিলেছে৷ স্থানীয় প্রশাসনিক কাঠামোয় এক-তৃতীয়াংশ মহিলা প্রতিনিধিত্বকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ এর ফলে গ্রামীণ স্তর থেকে দক্ষ প্রশাসনিক দায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে৷
কাম্বোজ বলেন, আজ পঞ্চায়েতস্তরে ৩১ লক্ষ জনপ্রতিনিধির মধ্যে ১৪ লক্ষের কিছু বেশি মহিলা রয়েছেন৷ এতে সহজেই বোঝা যায়, কীভাবে সমাজের নিচুতলা থেকে পরিবর্তন আসছে৷ মহিলাদের প্রতি সম্মানবোধ, প্রশাসনে তাঁদের অংশীদারিত্ব সমানে সমানে চলে আসছে৷
এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং সমাজকর্মীরা মুখ খুলতে দ্বিধা করেননি৷ রাজনৈতিক দলগুলির ভিতরে যে এখনও মহিলা প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে অনীহা রয়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ৷ মহিলাদের দুর্গা, শক্তি, বিকাশের প্রতীক ইত্যাদি গালভরা কথা বলা দলগুলিই চায় না লোকসভায় নারীশক্তির পূর্ণ সহযোগিতা থাকুক৷