নিজস্ব প্রতিনিধি– বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে নিয়োগ দুর্নীতি বিষয়ক মামলা৷ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি দিতে ফের সময় চাইলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকা৷ এর আগে আদালত মুখ্যসচিবকে চারবার সময় দেয়৷ এদিন ছিল শেষ সময়সীমা৷ এদিন আদালতে রাজ্য সরকারের তরফে আরও ৭ সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়৷
এতেই বেজায় ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী৷ বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাধ্য করছেন মুখ্যসচিব৷ এটা কি বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার কৌশল? আমাদের মনে হচ্ছে, তিনি ইচ্ছা করে আমাদের নির্দেশ অমান্য করছেন৷ এই আদালত তো তাঁকে অনুমতি দেওয়ার জন্য বাধ্য করেনি৷ তাঁকে নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে, নিজের দায়িত্ব পালন করতে বলেছে৷ এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে শুরু করা প্রয়োজন রয়েছে৷ গণতন্ত্রে একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের এই ধরনের পদক্ষেপ কাম্য নয়৷ শেষ পর্যন্ত যদি মুখ্যসচিব অনুমতি না দেন, তাহলেও আমরা বিস্মিত হব না’৷ বিচারপতি বাগচী জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্র বলে আমাদের মনে হচ্ছে৷ অভিযুক্তরা এতই প্রভাবশালী যে, রাজ্যের মুখ্যসচিবের কলম কাজ করছে না৷ আদালতকে পর্যন্ত হিমশিম খেতে হচ্ছে নিজের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে৷ এখানে আদৌ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়া সম্ভব কি না সেটা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷
যদিও সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তদন্তকারী সংস্থাকেই নিতে হবে’৷ বিচারপতি বাগচী আরও বলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রী না থাকলেও তাঁর ক্ষমতা আমরা এজলাসে বসে টের পাচ্ছি৷ আমরা ব্যথিত৷ এটা আমলাতান্ত্রিক অলসতা নাকি, এর পিছনে অন্য কিছু আছে?’
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সিবিআই যে অনুমোদন রাজ্যের কাছে চেয়েছিল সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ফের সময় চাইলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব৷ এর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চারবার সময় দিয়েছিল আদালত৷ আজ অর্থাৎ শুক্রবার জামিনের মামলার চূড়ান্ত শুনানি করবে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ৷ সিবিআই সেই অনুমতি চেয়েছিল ২০২২ সালে৷ রাজ্য সরকার ২ বছরের মধ্যে সেই অনুমতি দিয়ে উঠতে পারেনি৷ দফায় দফায় রাজ্যের তরফে সময় চাওয়া হয়েছে৷ আদালতও দফায় দফায় রাজ্য সরকারকে ভৎর্সনা করতে ছাডে়নি৷ এর আগের শুনানিতে আদালত ২ মে মুখ্যসচিবকে রাজ্যের মত জানানোর জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল৷ কিন্ত্ত বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকার আবার সময় চাওয়ায় রাজ্যের সদিচ্ছা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷ শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে৷