প্যালেস্তাইনে গণহত্যা রোধে রাষ্ট্রসংঘ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছিল৷ এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বিশ্বের বহু দেশ সম্মতি জানালেও ভারত সামিল হল না৷ বিরত থাকল ভোটাভুটিতে৷ ইজরায়েলে আদানির যুদ্ধাস্ত্রের কারবার সামলাতেই কি প্যালেস্তাইনে গণহত্যা রোধে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সামিল হল না ভারত? রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ইজরায়েলে আদানির যুদ্ধাস্ত্র রফতানির কারবারই কি বড় হয়ে দাঁড়াল মোদির কাছে? গৌণ হয়ে গেল প্যালেস্তাইনে নির্মম গণহত্যা বন্ধের ইসু্য৷ অথচ নেহরুর আমল থেকে ভারতের বিদেশ নীতিতে আগ্রাসী ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াকু প্যালেস্তিনীয় জনগণের পাশে থেকেছে ভারত৷ প্যালেস্তাইনের উপর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ইজরায়েলের হামলায় প্রতিদিন শিশু-বৃদ্ধ সহ বহু মানুষের মৃতু্য হচ্ছে৷ এই মুহূর্তে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে৷ বিশ্বজুড়েই মানুষ ইজরায়েলের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন৷ ইজরায়েলের গণহত্যার অভিযান রুখতে রাষ্ট্রসংঘ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাব গ্রহণ করে ৫ এপ্রিল৷ এতে সমস্ত দেশকে ইজরায়েলে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার প্রস্তাব নেওয়া হয়৷ সেই প্রস্তাব সমর্থন করেনি ভারত৷ ভোটদানে বিরত ছিল ভারত৷ অবাক করার মতো ঘটনা হল, গত বছর ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের আনা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল ভারত৷ অথচ চার মাস বাদে কেন উল্টোপথে হাঁটল ভারত৷ দেখা যাচ্ছে, ইজরায়েলের সঙ্গে আদানির যুদ্ধাস্ত্রের রফতানির কারবারই এর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে৷ যুদ্ধাস্ত্রের কারবারি ১৩টি দেশ যুদ্ধবিরতির অবস্থান থেকে বিরত থাকে৷ একইভাবে ইজরায়েলে আদানির যুদ্ধাস্ত্রের কারবার অব্যাহত রাখতে ভোটদানে বিরত থাকার অবস্থান নেয় ভারত৷ কেন ভারত এভাবে অবস্থান বদল করল, তার কোনও ব্যাখ্যা জানানো হয়নি৷ জানা যাচ্ছে, ইজরায়েলে আদানির ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার জন্যই কর্পোরেট মিডিয়া এই তথ্য গোপন করেছে৷ তবে আদানির স্বার্থ মোদি সরকার কীভাবে দেশের বিদেশনীতি বদল করছে তা সম্প্রতি ফাঁস করে দিয়েছে সংবাদ পোর্টাল ‘দি ওয়ার’৷
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ইজরায়েলে আদানির যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের খবরটি সামনে আসে৷ তাতে বলা হয়, হায়দরাবাদে আদানির প্রতিরক্ষা ও এয়ারোস্পেস কোম্পানি এবং ইজরায়েলের এলভিট কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গঠিত আদানি-এলভিট অ্যাডভান্স সিস্টেম ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তৈরি ২০টি হারমস ৯০০ ড্রোন ইজরায়েলে সরবরাহ করেছে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি-এলভিট এই সংবাদ স্বীকার না করলেও অস্বীকার করেনি৷ এই ড্রোন সামরিক এবং জনপরিষেবা উভয় কাজেই ব্যবহার করা যায়৷ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিমোটের সাহায্যে তা চালানো যায়৷ মাটি থেকে ৪২ হাজার কিলোমিটার ওপরে ৪২০ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ড্রোনগুলি চলাচল করতে পারে৷ আদানির বার্ষিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, যৌথ উদ্যোগে আদানি-এলভিট কোম্পানির উৎপাদিত ড্রোন কেবল ইজরায়েলে রফতানি করা হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, এই যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে ভারতের প্রতিরক্ষা দফতরের নিয়মিত অনুমতিও নিয়েছে আদানি কোম্পানি৷ দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালে একবার, ২০২০ সালে তিনবার, ২০২১ সালে পাঁচবার এবং ২০২২ সালে একবার এই অনুমতি নেওয়া হয়েছে৷ আদানি কোম্পানির বার্ষিক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এলভিট-আদানির যৌথ উদ্যোগে ড্রোন উৎপাদনের কারবার ২০১৯ সালে শুরু হয়৷
যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ বন্ধে রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়ার অর্থই হলো, ইজরায়েলে আদানির অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা যাবে না৷ পাল্টে গেল ভারতের বিদেশনীতিও৷ স্পষ্ট হল, আদানি-এলভিট কোম্পানির যুদ্ধাস্ত্র ইজরায়েলে সরবরাহের লাইসেন্স পর্যালোচনা করতে চায় না মোদি সরকার৷ এমনকি শেষ পর্যন্ত ইজরায়েলে এই ড্রেন কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও পর্যালোচনা করল না ভারত৷ প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলি গণহত্যার অভিযানে এইভাবে মোদি সরকারের পরোক্ষে সমর্থনই স্পষ্ট হয়ে গেল দিনের আলোর মতো৷