‘বিচারালয়ের কলঙ্ক’ বলে অভিজিতকে তোপ
নিজস্ব প্রতিনিধি — কলমের খোঁচায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করতে কলকাতা হাইকোর্টের রায় নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল৷ নিয়োগ দুর্নীতি রুখতে এই রায়ের নেপথ্যে রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অবদান৷ যে অভিজিতবাবু এখন বিচারপতির পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির টিকিটে তমলুক কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার সেই কেন্দ্রেই প্রচারে গিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অভিজিৎবাবুকে ‘বিচারালয়ের কলঙ্ক’ বলে মন্তব্য করলেন তিনি৷
বৃহস্পতিবার, তমলুকের জনসভায় দাঁড়িয়ে চাকরি বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, এখানে যিনি বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তিনি ভাবছেন, এটা বিচারালয়৷ খালি পদত্যাগের কথা বলছেন৷ আমি তাঁকে বলব, আগে নিজের লজ্জা ঢাকুন, তারপর অন্যের পদত্যাগের কথা বলবেন৷
উল্লেখ্য, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ২০১৬ সালে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল হওয়ার পর থেকেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নিয়োগ দুর্নীতির দায় নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন৷ অভিজিৎবাবু বলেছিলেন, ‘এই মুখ্যমন্ত্রী জোচ্চোর৷ তিনি জোচ্চোরদের আশ্রয় দেন৷’ বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে লোকসভা ভোট হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷
সেই প্রসঙ্গ টেনেই এদিন অভিজিতবাবুকে নিশানা করলেন তৃণমূল নেত্রী৷ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন নিয়োগ দুর্নীতির কারণে বেশ কিছু জনের চাকরি বাতিলের প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন অভিজিতবাবু৷ মমতা অভিযোগ করেন, বিচারপতি থাকাকালীনই তিনি ফোনে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন৷ বিজেপিতে যোগদান করার পরে অভিজিতবাবু তমলুকে টিকিট পেতে পারেন এমন জল্পনা চলছিল৷ ঠিক সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তমলুক কেন্দ্রে প্রার্থী করেন যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে৷
বৃহস্পতিবার দেবাংশুর সমর্থনে তলমুকে জনসভা করতে গিয়ে দেবাংশুকে প্রার্থী করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন৷ বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আগে দেবাংশুর সঙ্গে লড়ে দেখান, তারপর তো অন্য কিছু৷ এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আগে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের জুনিয়র ছিলেন, এখন গদ্দারের সিনিয়র না জুনিয়র তা তিনি নিজেও জানেন না৷ মমতা এদিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মিথ্যে কথা বলে সবচেয়ে বেশি মানুষের চাকরি খেয়েছেন তিনি৷ অভিজিতবাবুকে নিশানা করে মমতা বলেন, বিচারালয়ে বসে বিজেপি করতেন আর ছেলেমেয়েদের চাকরি খেতেন৷ তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে না৷
এদিকে, নাম না নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দাঁতনের ঘোলাই বাজারের নির্বাচনী জনসভা থেকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছে কেবলমাত্র ইডি, সিবিআই, আয়কর হানার হাত থেকে বাঁচতে৷ সবচেয়ে বেশি গদ্দারি যে করেছে সেই মীরজাফরের জন্ম এই মেদিনীপুরে৷ ওর নাম মুখে আনতে আমার লজ্জা লাগে৷
তিনি বলতে পারবেন কতজন তার হাত দিয়ে পেয়েছেন (শিক্ষকের চাকরি)? পুরুলিয়া লোকেরা কেন রাস্তায় বসেছিল? আমার কানে যখন কথাটা এলো তখন আমি বলেছিলাম মেদিনীপুরের ছেলেরা পেয়েছে ঠিক আছে কিন্ত্ত দেখতে হবে পুরুলিয়ার ছেলেরাও যেন বঞ্চিত না হয়৷ তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ আমি আজ চোর বটে৷ এই নির্বাচনে ওর অবস্থা বুঝিয়ে দেবো৷ লোড শেডিং করে ভোট দখল করা, গুন্ডামি করে, টাকা দিয়ে ভোট দখল করা, লোকের চাকরি খেয়ে নেওয়া বের করে দেবো৷ বোমা বিস্ফোরণের নামে চাকরি খাওয়া৷ লিখে বলে দেয় মানুষ যেন চাকরি না পায়৷ ভালো করেই জানে ছেলেরা চাকরি পেলে বিজেপি উঠে যাবে৷ তাই ওদের প্রথম কাজ চাকরি দেওয়া বন্ধ করা৷ তাই বুঝতেই পারছেন চাকরি পেতে হলে আগামী নির্বাচনে আপনাদের কি করতে হবে৷
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিচারপতিদের অসম্মান করি না৷ কিন্ত্ত গণতন্ত্রকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষকদের চাকরি চলে গেলে স্কুল চলবে কি করে, ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করবে কিভাবে? এ প্রশ্নের কোন উত্তর আছে৷ কাজ করতে গেলে ভুল হয়৷ সংশোধন করে নিলেই হয়ে যায়৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ‘তরুণের স্বপ্ন’ বইতে লিখেছিলেন ‘রাইট টু মেক ব্লান্ডার’ মানুষের ভুল করার অধিকার আছে৷ তাই বলে বিস্ফোরণের নামে ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নিতে হবে? বিজেপির আরো একটা লক্ষ্য আছে৷ এইসব ছেলে মেয়েরা যেন ভোটের ডিউটি না পায়৷ কেন্দ্রীয় এজেন্সির লোকদের দিয়ে তাহলে ওরা ভোট করাতে পারবে৷
মেদিনীপুর লোকসভা আসনে বর্তমান সাংসদ দিলীপ ঘোষের টিকিট না পাওয়া প্রসঙ্গেও নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ শোনান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, কার জন্য কিসের জন্য আগের প্রার্থীকে সরিয়ে অন্যজনকে নিয়ে এল বিজেপি৷
আরএসএস প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ওদের নিয়ে ভালো ধারণা ছিল৷ কেশিয়াডি়তে আরএসএস-এর স্কুল আছে৷ অনেক জমি জায়গা আছে৷ ওরা আগে ত্যাগী ছিল৷ কিন্ত্ত এখন ভোগী হয়ে গিয়েছে৷
নির্বাচনী লড়াই নিয়ে দলকে সতর্ক করে মমতা বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বসুন৷ সবাইকে নিয়ে কাজ করুন৷ এমনভাবে কাজ করুন যাতে কোন ত্রুটি না থাকে৷