দ্বিপাক্ষিক আলােচনায় ‘কাশ্মীর সমস্যা’র সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। উল্লেখ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হােয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মঙ্গলবার এক বৈঠকে মিলিত হন।
আলােচনার সময় নাকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থ হওয়ার প্রস্তাব দেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বিদেশ দফতরের পক্ষে ‘ডােনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থ হওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি করেছিলেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা নস্যাৎ করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলােচনার সময় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের জন্য মধ্যস্থ হওয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।
বৈঠকের পর পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানান, পাক জেনারেল পারভেজ মুসারফ এবং ভারতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মধ্যে আলােচনার সময় দুই দেশের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সমাধানে অনেকটাই নৈকট্য দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তার পর আর কোনও অগ্রগতি হয়নি।
এই সমস্য মেটানাের জন্য অবিলম্বে আলােচনায় বসা উচিত দুই দেশের। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এব্যাপারে ডােনাল্ড ট্রাম্প যােগ্য ব্যক্তিত্ব বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান জানান, এই সমস্যা সমাধানের ওপর প্রায় দেড়কোটি মানুষের শান্তি ও স্বস্তি নির্ভর করছে। কিন্তু ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষে দুই দেশের মধ্যে যেকোনও সমস্যা সমাধানে দ্বিপাক্ষিক আলােচনাতেই রাজি বলে সাফ জানিয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক শর্ত হিসেবে অবিলম্বে সীমান্ত পেরিয়ে নাশকতা বন্ধ করতে হবে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সকল সমস্যা সমাধানে শিমলা চুক্তি এবং লাহাের ঘােষণাই যথেষ্ট। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি কখনই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থ হওয়ার প্রস্তাব দেননি।
ডেনাল্ড ট্রাম্প এব্যাপারে যে দাবি করেছেন তা আশ্চর্যজনক বলে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষে মন্তব্য করা হয়েছে।
পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পাক প্রদানমন্ত্রী বলেন, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই দেশকেই সচেতন হতে হবে। কারণ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আড়াই হাজার মাইল সীমান্ত এলাকা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের অর্থ হল নিজেদেরই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা।
পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আবারও বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পারে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে মধ্যস্থ হতে এবং এক্ষেত্রে যােগ্য ব্যক্তি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, সত্তর বছর পার গিয়েছে, কিন্তু সভ্য প্রতিবেশী হিসেবে আমরা একে অপরের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারছি না কেবল কাশ্মীর সমস্যার জন্যই। ২০১৬ সালে পাঠানকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক ঘাঁটিতে আক্রমণের পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলােচনায় বসতে রাজি হয়নি বলে ইমরান মন্তব্য করেন।
ভারতের মত হল আলােচনা ও পাকিস্তানে বসবাসকারী জঙ্গিদের সীমান্ত পেরিয়ে আক্রমণ একযােগে চলতে পারে না। এর পরেও পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জইস-ই-মহম্মদ জঙ্গি গােষ্ঠী নাশকতায় পুলওয়ামা জেলায় ভারতের ৪০ জন জওয়ান নিহত হন। এর পাল্টা হিসেবে ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে জেইএম প্রশিক্ষণ শিবিরে বিমান হানা চালায়।