নিজস্ব প্রতিনিধি— আইএসএল ফুটবলে ইতিমধ্যেই লিগ ও শিল্ড জয় করেছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস৷ তাই এবারে কোচ হাবাসের পাখির চোখ ভারত সেরা সম্মানকে মোহনবাগানকে তুলে দেওয়া৷ তাই মঙ্গলবার চলতি আইএসএল ফুটবলে প্রথম সেমিফাইনাল লেগে মোহনবাগান মুখোমুখি হচ্ছে ওড়িশা এফসি’র বিরুদ্ধে৷ ওড়িশা এফসি দল বেশ শক্তিশালী, তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই৷ ৬ দলের খেলায় প্রথম দু’টি দল সরাসরি সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে৷ আর চারটি দলের মধ্যে দু’টি দল পরস্পর মুখোমুখি হয়৷ সেই খেলায় ওড়িশা এফসি হারিয়ে দিয়েছে কেরালা ব্লাস্টার্সকে৷ যে দলে রয় কৃষ্ণের মতো ফুটবলার থাকেন, সেই দলকে অবশ্যই সমীহ করা প্রয়োজন রয়েছে৷ তারপরে রয় কৃষ্ণ মোহনবাগানে খেলে গিয়েছেন৷ তাই মোহনবাগান সম্পর্কে তাঁর আলাদা একটা ধারণা রয়েছে৷ কীভাবে আক্রমণ গড়ে তুলতে হবে, সেই বিষয়ে তাঁর জানা আছে৷ এটাও মনে রাখতে হবে, প্রথম সেমিফাইনাল লেগ ওড়িশা খেলছে ঘরের মাঠে৷ ঘরের মাঠে খেলার অর্থই বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেওয়া৷ প্রচুর দর্শক আসবেন মাঠে৷
মাঠের দর্শকরা উৎসাহিত করে খেলোয়াড়দের৷ আর সেই উৎসাহে খেলোয়াড়রাও লড়াই করার একটা আলাদা মানসিকতা তৈরি করে ফেলেন৷ সেই মানসিকতায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে৷ সেই কারণেই সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের বিরুদ্ধে ওড়িশা ছেড়ে কথা বলবে না, তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই৷ আর প্রতিপক্ষ ওড়িশা জানে, দ্বিতীয় সেমিফাইনাল লেগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে তাদের খেলতে হবে হাবাসের দলের বিরুদ্ধে৷ হয়তো সেই কারণেই প্রথম লেগের ম্যাচে জেতার জন্য তারাও মরিয়া হয়ে থাকবে৷
আবার মোহনবাগানের কোচ হাবাস দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন৷ সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতেই সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন৷ একদম ফুরফুরে মেজাজে দেখতে পাওয়া গিয়েছে কোচ হাবাসকে৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অতীতের ঘটনা অতীত৷ সে কথা ভেবে কোনও লাভ হবে না৷ সামনে চোখ রাখতে হবে৷ তাই বর্তমান নিয়ে ভাবতে হবে৷ ওড়িশা যথেষ্ট ভালো দল৷ ওদের কোচও বেশ অভিজ্ঞ৷ এবাদেও অনেক খেলোয়াড় বেশ ভালো খেলছেন৷ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পাশে তরুণ ফুটবলাররাও দারুণ খেলছেন৷ সেই কারণেই আমাদের কাছে এই ম্যাচটা বেশ কঠিন৷ তবে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে যে ৯০ মিনিট খেলা হবে, সেই ৯০ মিনিটের মধ্যেই আমাদের গোল করে এগিয়ে থাকতে হবে৷ এবারে হাবাস বলেন, এটা লিগের খেলা নয়৷ নকআউট পর্যায়ের খেলার আলাদা একটা মানসিকতা থাকে৷ প্রথম লেগে যদি বড় ব্যবধানে জিততে না পারা যায়, তাহলে বেশ কঠিন হবে দ্বিতীয় লেগে৷ প্রথম লেগে হেরে গেলে চলবে না৷ দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে৷ যত কঠিন লড়াই হোক না কেন গোল চাই৷
এদিকে বাংলায় যে তাপপ্রবাহ চলছে, ঠিক সেই গরমও রয়েছে ওড়িশা রাজ্যে৷ ওখানেও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে গেছে তাপমাত্রা৷ যখন মঙ্গলবার রাতে ম্যাচ হবে, হয়তো তখন ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা থাকতে পারে৷ তবে আর্দ্রতা যথেষ্ট বেশি৷ খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন, এই সমস্যা উঁকি দিতে পারে৷ তাই কোনও অজুহাতই শুনতে রাজি নন কোচ হাবাস৷ কোচ আরও বলেন, আবহাওয়া যেরকমই থাকুক না কেন, তা মানিয়ে নিতে হবে৷ এটাও মনে রাখতে হবে, প্রতিপক্ষ দল একই পরিবেশের মধ্যে খেলবে৷ তারা যদি খেলতে পারে, তাহলে আমরা কেন খেলতে পারব না?
কোনও অজুহাত দিয়ে খেলার চরিত্রকে নষ্ট করা চলবে না৷ কৌশল ও টেকনিকে বেশি জোর দিতে হবে৷ এবারে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে তিনি জানিয়েছেন, লিগ-শিল্ড জয় করার তৃপ্তিতে অতি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকলে চলবে না৷ আমাদের সামনেই রয়েছে ভারতসেরা সম্মান৷ এই সম্মানকে তুলে ধরার জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করতে হবে৷ তাই বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল না খেলতে পারলে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে৷ আবার এটাও মনে রাখতে হবে বিপক্ষ দলের রয় কৃষ্ণ কোচ হাবাসের প্রশিক্ষণের খেলোয়াড়৷ তিনি নায়ক হয়ে উঠেছিলেন তাঁরই প্রশিক্ষণে৷ কিন্ত্ত মাঠের মধ্যে খেলার সময় কেউই বন্ধু হতে পারে না৷ লড়াই করেই জবাব দিতে হবে৷
মোহনবাগান ব্রিগেডে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বলতেই দিমিত্রি পেত্রাতোস৷ তাঁর বাড়ানো বলেই আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়রা গোল করে দলকে এগিয়ে রাখার সবসময়ই চেষ্টা করেন৷ তারপরে দুর্দান্ত গোল দেখতে পাওয়া গেছে গত ম্যাচে লিস্টন কোলাসোর পা থেকে৷ এ বাদেও মনবীর সিং ও শুভাশিস বসুর উপর দলের অনেককিছুই নির্ভর করছে৷ এদিকে শোনা গেছে, বেশকিছু সমর্থক কলকাতা থেকে ওড়িশায় রওনা দিয়েছেন মোহনবাগানের খেলা দেখার জন্য৷