নো আধার, নো সিটিজেনশিপ, নো ভোট টু বিজেপি
রথীন পালচৌধুরী
অসমে কাছাড় জেলার ডলু চা বাগান ধ্বংস করে আন্তর্জাতিক গ্রীন ফিল্ড বিমানবন্দর তৈরির বিরুদ্ধে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভে ফঁুসছেন৷ তারা এবার ডবল ইঞ্জিন বিজেপিকে ডাক দিলেন৷ ২০২২ সালের ১১ মে সন্ধেবেলা কাছাড় জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ নোটিশ ও ১৪৪ ধারা জারি করে ডলু সংলগ্ন এলাকায়৷ ১২ মে কাকভোরে শ্রমিকরা যখন বস্তিতে আঘোর ঘুমে তখন শতাধিক বুলডোজার, রণসাজে বিরাট সংখ্যক পুলিশ, আধা সামরিকবাহিনী ও এসপি র্যাঙ্কের অফিসারদের উপস্থিতিতে লক্ষ-লক্ষ চা গাছ উপড়ে ফেলার কাজ শুরু হয়৷ প্রায় বিয়াল্লিশ লক্ষ চাগাছ উৎপাটন এবং দশ হাজারের উপর ছায়া তরু কাটার কাজ চলে৷ ৮২৭ এবার জমি অধিগ্রহণ হয়৷ আঠারো হাজার শ্রমিক পরিবার কাজ হারায়৷ পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকরা মিলিতভাবে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিবাদ জানান, কিন্ত্ত রাষ্ট্রের প্রচণ্ড আগ্রাসনের সামনে তারা পিছু হটেন৷ শিলচর শহরের নাগরিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক মহল গড়ে তোলেন ডলু চা বাগান বাঁচাও কমিটি৷ ছাত্র-যুবরা গড়ে তোলে ফেন্ডস অব ডলু৷ অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গৌহাটি, মুম্বই, কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন গড়ে তোলে৷ সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি, কলকাতা শাখার আহ্বায়ক প্রদীপ রায় শান্তি গণতন্ত্র সংহতি মঞ্চের সম্পাদক তাপস গুহ এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত সমাজবিজ্ঞান ও প্রকৃতি পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক বৈদ্যনাথ সেনগুপ্ত৷
এদিকে গত ৮ এপ্রিল ২০২৮ সুপ্রিম কোর্টের তিনজনের ডিভিশন বেঞ্চ ডলু চা বাগানের জমিতে এয়ারপোর্ট তৈরির জন্য নতুন জমি অধিগ্রহণ সহ সব ধরনের কাজের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন৷ প্রখ্যাত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ কাছাড়ের ডলু চা বাগানের পরিবেশ ধ্বংস ও উচ্ছেদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের পক্ষে সওয়াল জবাব করেন৷ শ্রমিকদের দাবি, বিমানবন্দর বরাকের অন্যত্র অব্যবহূত ও পরিত্যক্ত স্থানে করা হোক৷ অধিগৃহীত জমিতে পুনরায় চা গাছ ফলনের কাজে শ্রমিকদের নিয়োগ করা হোক৷
অন্যদিকে শিলচরে ডলু চা বাগানে এয়ারপোর্ট এবং ডবল ইঞ্জিন সরকার মানে বেআইনি ধ্বংসাত্মক দখলদারি এমনটাই অভিযোগ৷ তাই অসমে ক্ষমতাহীন বিজেপির হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার ও কেন্দ্রের মোদি সরকারকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে চান শতাব্দী প্রাচীন ডলু চা বাগানের কাজ হারানো শ্রমিকরা৷ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে শ্রমিকেরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও ডবল ইঞ্জিনের এক ইঞ্জিন হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং আরেক ইঞ্জিন কেন্দ্রের মোদি সরকার৷ তাদের হারানোর জন্য জোরালো হচ্ছে নো ভোট টু বিজেপি প্রচার৷ ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমানির অন্যতম আহ্বায়ক অরিন্দম দেব শিলচর থেকে টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অসমে ইন্ডিয়া জোট ঠিকঠাক হয়নি৷ কিন্ত্ত যে দল বিজেপিকে হারাতে পারবে আমরা তাকেই ভোট দেব৷ আমরা নো ভোট টু বিজেপির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছি৷’ শিলচরে কংগ্রেস বা তৃণমূল যে বিজেপিকে হারাতে পারবে তাকেই ভোট দেব৷’
শিলচরে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে বুধবার মিটিং করেন পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি৷ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর এজলাস প্রশান্ত ভূষণের সওয়াল জবাব শুনে পুরো ঘটনা প্রবাহে বিস্ময় প্রকাশ করে ডলু চা বাগানের জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন৷ ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে শিলচরে সমর্থন জানান তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য সুস্মিতা দেব৷ কিন্ত্ত মমতার মিটিংয়ে ডলু চা বাগানের বক্তব্য না আসায় খানিকটা অভিমানের সুর শোনা গেল ডলু চা বাগানের আন্দোলনকারী নেতাদের গলায়৷ পাশাপাশি অসমে এনআরসি-তে উনিশ লক্ষ মানুষের নাম বাদ যাওয়া ইত্যাদি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দাবি উঠেছে— নো আধার, নো সিটিজেনশিপ৷ সো, নো ভোট টু বিজেপি৷ আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন ড. তপোধির ভট্টাচার্য, মৃণালকান্তি সোম, অ্যাডভোকেট সুব্রত পাল, অরিন্দম দেব, হিল্লোল ভট্টাচার্য সহ অসমের এক ঝাঁক বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক আন্দোলনের নেতৃত্ব৷