যুব সমাজকে নিয়ে আক্ষেপে প্রাক্তন গর্ভনর
দিল্লি, ১৭ এপ্রিল– দেশীয় তরুণ উদ্যোগপতিদের প্রশংসায় প্রাক্তন গভর্নর তথা অর্থনীতিবিদ রাজন বরাবরই পঞ্চমুখ৷ কিন্তু সেই তরুণ উদ্যোগপতিদের নিয়েই এবার আক্ষেপের সুর দেখা গেল তাঁর মুখে৷ আক্ষেপ করে অর্থনীতিবিদ ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বললেন, ‘তরুণ উদ্যোগপতি যারা হতে চান, তাঁদের মানসিকতা কিন্ত্ত বিরাট কোহলির মত৷ তাঁরা রীতিমত দাপটের সঙ্গে বলতে পারেন, তাঁরাই শ্রেষ্ঠ, সেটা তাঁরা করে দেখাতেও পারেন! কিন্ত্ত তাঁদের অনেকেই চলে যাচ্ছেন হয় সিঙ্গাপুর বা নয়ত আমেরিকার পশ্চিমে, সিলিকন ভ্যালিতে৷
এই তরুণ প্রজন্মের যে অংশ দেশের বাইরে এত সফল, তাদের সাফল্য কি দেশীয় পরিসরে ঘটতে পারে না? এই প্রসঙ্গেই তাদের উদ্যমকে বিরাটের মারকাটারি ব্যাটিং ও আগ্রাসী ভাবভঙ্গির সঙ্গে তুলনা করেন রাজন৷ ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের উন্নত অর্থনীতি- শীর্ষক এক আলোচনাচক্রে রাজন বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভারতের সোনালি সময় চলছে৷ আর আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশেপাশে৷ এটা উদ্বেগের কারণ, চিন বা কোরিয়ার যখন সোনালি সময় ছিল তখনকার থেকে ভারতের বর্তমান বৃদ্ধির হার অনেক কম৷’ বস্তুত মোদি যে ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশ হিসাবে তুলে ধরার দাবি জানাচ্ছেন, সেটাকে কার্যত খারিজ করে দিয়েছেন রাজন৷ ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যুব সমাজকে কাজের সুযোগ করে দিতে ব্যর্থ মোদি সরকার৷কারণ হিসাবে তিনি বলছেন, যুব সমাজের কাজের সুযোগ না থাকা৷
রাজন আরও বলেছেন, ডেমোক্র্যাটিক ডিভিডেন্ডের পুরো সুবিধে ভারত উশুল করতে পারছে না৷ তাঁর কথায়, ‘এইজন্যই আমি ৬ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম৷ ডেমোক্র্যাটিক ডিভিডেন্ডের মধ্যে থেকেও দিনের শেষে ওই ৬ শতাংশ বৃদ্ধিই হচ্ছে৷ যা চিন বা কোরিয়ার চাইতে অনেক কম৷ এটাকে বিরাট কিছু বলে দেখানোর চেষ্টায় আসলে খামতি আছে৷ তার মানে এই নয় যে আমাদের দেশে ডেমোক্র্যাটিক ডিভিডেন্ড নেই৷ বরং আমি বলতে চাইছি, আমরা ওই তরুণদের সেই জায়গাটা দিতে পারছি না, সেই চাকরিটা দিতে পারছি না, যেটা তাঁদের প্রাপ্য৷’ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরের উদ্বেগ, আজ ভারতের বহু যুবক-যুবতী সিঙ্গাপুর বা সিলিকন ভ্যালি চলে যাচ্ছেন যাতে গোটা বিশ্বের বাজারের সুবিধা পেতে৷ আমাদের ভাবতে হবে, কেন ওরা দেশের বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছে৷ দেশে কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে৷রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরের মতে, ভারতকে উন্নতি করতে গেলে সবার আগে দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে আরও শিক্ষিত এবং দক্ষ করতে হবে৷
রাজন আরও বলেন, ‘তাহলে প্রশ্নটা থেকে যায়, আমরা ওই চাকরি তৈরি করব কীভাবে? আমার যেটা মনে হয়, দু’ভাবে হতে পারে৷ এক, আমরা পরিকাঠামো ও দক্ষতা বাড়ানোর দিকে চেষ্টা করতে পারি৷ দুই, চাকরির চরিত্রও বদল করতে হতে পারে, তাকে আরও উন্নত ও উপযুক্ত করা যেতে পারে৷ দুইভাবেই আমাদের কাজ করতে হবে৷ কিন্ত্ত চাকরি আমরা কীভাবে তৈরি করব? যেমন ধরা যাক, বৈদু্যতিন সরঞ্জামের চিপ তৈরি৷’ রাজন বরাবরই এই ক্ষেত্রে ভারতের বিপুল পরিমাণ খরচের বিরুদ্ধে৷ ‘কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছে চিপ প্রস্তুতিকরণ শিল্পে ভর্তুকি দিতে৷ অথচ চাকরি তৈরি করতে পারে এমন একটা ক্ষেত্র হল চর্মজাত দ্রব্য প্রস্তুতকরণ, যার অবস্থা এই মুহূর্তে ভাল নয়৷ অথচ সেখানে না আছে ভর্তুকি, না আছে বিনিয়োগ!’