রায়পুর, ১৬ এপ্রিল – ২০২৪-এর প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে ১৯ এপ্রিল। তার ঠিক তিন দিন আগে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২৯ জন মাওবাদী। এদের মধ্যে রয়েছে তিন শীর্ষ মাওবাদী নেতা। গত এক দশকে ছত্তিশগড়ে এনকাউন্টারে এটাই এখনও পর্যন্ত সবথেকে বড় মাওবাদী দমনে সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। কাঙ্কের জেলা পুলিশের তরফে মঙ্গলবার রাতে এ কথা জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মাওবাদীদের পুরোপুরি নির্মূল না করা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘নকশালরাই উন্নয়ন এবং শান্তির পথে সবচেয়ে বড় শত্রু। তারা যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানের সাফল্যে নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানান। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদি সরকারের আক্রমণাত্মক নীতি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টার কারণে নকশালপন্থীদের কার্যকলাপের এলাকা এখন সীমাবদ্ধ হয়েছে। শীঘ্রই ছত্তিসগড়-সহ গোটা দেশ সম্পূর্ণ নকশাল মুক্ত হবে। ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে বিপুল সংখ্যক নকশাল নিহত হয়েছে। আমি সমস্ত নিরাপত্তাকর্মীকে অভিনন্দন জানাই, যাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে এই অপারেশন সফল করেছেন। যাঁরা আহত হয়েছেন সেই সাহসী পুলিশকর্মীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’’
বিএসএফের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গোপন সূত্রে খবর এসেছিল কাঙ্কেরের জঙ্গলে প্রথম সারির মাওবাদী কমান্ডারেরা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন। সেই খবরের ভিত্তিতেই যৌথ বাহিনীর ১৮৫ জনের দল এলাকায় অভিযান শুরু করে।
মঙ্গলবার ছত্তিসগড়ের কাঙ্কের জেলায় এনকাউন্টারে কমপক্ষে ২৯ জন মাওবাদীরা মৃত্যু হয়েছে। গুলির লড়াই চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনীর তিন কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমান অস্ত্রশস্ত্র। প্রথম দফা লোকসভা ভোটের আগে মাওবাদী দমনে ছত্তিসগড়ে বড়সড় পদক্ষেপ কেন্দ্রের। মঙ্গলবার দুপুর ২টো থেকে মাওবাদী অধ্যুষিত কাঙ্কের জেলায় ঢুকে বড়সড় অপারেশন শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী। বস্তারে মাওবাদীদের ডেরায় প্রবেশ করার পর এনকাউন্টারে ২৯ জন স্কোয়াড সদস্যকে খতম করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শীর্ষ মাওবাদী শংকর রাও। রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে যার মাথার দাম ধার্য করা ছিল ২৫ লাখ টাকা। রাজনন্দগাঁও এবং মধ্য প্রদেশের সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন বিনোদ। তাঁরও মাথার দাম ছিল ১০ লাখ টাকা। গুলির লড়াইয়ে শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী বিনোদ এবং ললিতাও নিহত হয়েছেন বলে জানানো গিয়েছে। নিহত স্কোয়াড সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সাতটি একে-৪৭, একাধিক লাইট মেশিনগান এবং ৩০০ রাউন্ড গুলি। দু’পক্ষের সংঘর্ষে জখম নিরাপত্তা বাহিনীর তিন জওয়ানের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১০ সালে গোটা দেশের ৯৬টি জেলায় মাওবাদীদের উপদ্রব ছিল। কিন্তু এখন তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৫০-এরও নীচে। লাগাতার অভিযানের পাশাপাশি উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয়দের সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করার যে পন্থা নেওয়া হয়েছে, তাতে সাফল্য মিলেছে।