• facebook
  • twitter
Sunday, 24 November, 2024

বিজেপি সংবিধান মানে না: মমতা

কোচবিহারের নির্বাচনী সভায় হুঙ্কার সুভাষ মন্ডল, কোচবিহার: বিজেপি থাকলে দেশে আর নির্বাচন হবে না৷ দিল্লিতে তৈরি হবে একটি স্বৈরসন্ত্রাস সরকার৷ কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে সোমবার এক নির্বাচনী জনসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একথা বলেন৷ তিনি বলেন, খুব সাংঘাতিক একটি অবস্থা চলছে ভারতবর্ষে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী রামনবমীর দিন ওরা স্লোগানে স্লোগানে দাঙ্গা লাগাতে পারে

কোচবিহারের নির্বাচনী সভায় হুঙ্কার

সুভাষ মন্ডল, কোচবিহার: বিজেপি থাকলে দেশে আর নির্বাচন হবে না৷ দিল্লিতে তৈরি হবে একটি স্বৈরসন্ত্রাস সরকার৷ কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে সোমবার এক নির্বাচনী জনসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একথা বলেন৷ তিনি বলেন, খুব সাংঘাতিক একটি অবস্থা চলছে ভারতবর্ষে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী রামনবমীর দিন ওরা স্লোগানে স্লোগানে দাঙ্গা লাগাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন৷ তাই তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের ফের মাথা ঠাণ্ডা রাখার কথা বলেন৷ এদিনের সভায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ, প্রাক্তন মন্ত্রী ও কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস দলের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, কোচবিহার জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি আইনজীবী আব্দুল জলিল আহমেদ, মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস দলের জেলা সভানেত্রী সুচিস্মিতা দেব শর্মা প্রমূখ নেতৃবৃন্দ হাজির ছিলেন৷ ভিড় উপচে পড়া মুখ্যমন্ত্রীর সভায় জেলার আশপাশ থেকে বহু মানুষ সভাস্থলে এসে উপস্থিত হয়৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বলেন, বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের সরকার সংবিধানকে ছুঁডে় ফেলে দিয়েছে৷ ওরা সংবিধান মানে না৷ ওরা দেশটাকে বেচে দিচ্ছে৷

বিজেপিকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রে ওরা ফের ক্ষমতায় এলে আদিবাসী ও তপশিলি মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না৷ তিন বছর ধরে বাংলাকে ওরা টাকা দেয় না৷ আটকে রেখেছে সব টাকা৷ ওরা দুর্নীতির কথা বলছে৷ বাংলায় নাকি দুর্নীতি হয়েছে৷ বলুক, কোথায় সেই দুর্নীতি হয়েছে৷ রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশে বহু দুর্নীতি হয়েছে অথচ তার জন্য শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করা হলেও তা করছে না৷ তিনি কেন্দ্রের সরকারের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, বাংলায় কোনও দুর্নীতি হয়নি৷ চ্যালেঞ্জ করে বলছি, কোনও দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারবে না ওরা৷ ইতিহাস থেকে ওরা মোঘলদের মুছে দিয়েছে৷ সব গেরুয়া রং করে গুলিয়ে দিচ্ছে৷ এতে অপমানিত হচ্ছেন সাধুরা৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ কী খাবে তা বিজেপি ঠিক করে দেবে এটা কী করে সম্ভব৷ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের চিপ তৈরি করেছে কে? এখানে বাংলায় সিপিএম, বিজেপি আর কংগ্রেস হাতে হাত ধরে ভাই ভাই করে চলছে৷ তাই এখানে তারা রাজ্যের মানুষকে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহ্বান জানান৷ তৃণমূল কংগ্রেসই দেশের সরকার গঠনে চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে৷ অল ইন্ডিয়ার পলিটিক্স তারাই ঠিক করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃঢ়তার সঙ্গে তা ব্যক্ত করেন৷ তিনি বলেন ইন্ডিয়া জোটের জন্য তিনি বারবার বলেছেন৷

কিন্ত্ত কেউ তাঁর কথা শোনেননি৷ তাই এই বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস দল যত আসন বেশি পাবে ইন্ডিয়া জোট ততই শক্তিশালী হবে৷ ভাষণের মাঝে কোচবিহার জেলার উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বারবার কোচবিহার ছুটে আসি এখানকার মানুষের টানে৷ এখানে এসে পুজো দিই মদনমোহন মন্দিরে৷ কোচবিহারের এয়ারপোর্টের টাকা তিনিই দিয়েছেন৷ কেন্দ্র টাকা দেয়নি৷ ১০০ জনের টাকা আটকে রেখেছে৷ তাদের সরকার ঠিক করেছে ভোটের পর কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করে গ্রামের গরিব মেহনতি মানুষের জন্য ৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দেবে৷

বীর চিলারায়ের মূর্তি থেকে শুরু করে পঞ্চানন বর্মার মূর্তি, কামতাপুর বোর্ড গঠন, রাজবংশী সাংস্কৃতিক বোর্ড গঠন, কোচবিহারকে হেরিটেজ শহর ঘোষণা সবকিছুই তারই হাতে গড়া৷ এছাড়া রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তার হাত দিয়েই বামন হাট থেকে সমগ্র উত্তরবঙ্গে রেলের উন্নয়ন ঘটেছে৷ কটা প্রকল্পের নাম আর তিনি বলবেন৷ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, আজমির এক্সপ্রেস, বিকানির এক্সপ্রেস, নিউ জলপাইগুডি় – কামাখ্যা সব কিছুই তিনি করেছেন৷ দিল্লির ভিক্ষা তিনি নেবেন না৷ কোচবিহারের আর্থিক উন্নয়নে পানাগর থেকে কোচবিহার পর্যন্ত ইকোনমিক করিডর চালু করার ব্যবস্থা করেছেন৷ চকচকায় শিল্প তালুক গডে় তুলেছেন৷ কোচবিহার শহরের বর্তমানের জ্বলন্ত সমস্যা পুর কর নিয়ে তিনি বলেন, কোচবিহার পৌরসভার আর্থিক সমস্যা থাকতে পারে৷ কিন্ত্ত তার জন্য পুরো করানো যাবে না বলে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা পাশে বসে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের প্রতি কড়া বার্তা দেন৷ পৌরসভার আর্থিক সমস্যা থাকলে তিনি অন্যভাবে তা মিটিয়ে দেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষণে উল্লেখ করেন৷ ভাষণ চলাকালীনই তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডারের কথাও তুলে ধরেন৷ সংখ্যালঘু মায়েদের ও বোনেদের নির্দিষ্ট শব্দে সম্বোধন করে বলেন, আম্মারা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন তো৷ তিনি বলেন ৩ কোটি সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে ঐক্যশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে৷ তারা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে৷ ১০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আওতায় এনেছেন৷ অথচ মোদি বলছেন, আয়ুষ্মান ভারতের কথা৷ আলিপুর এই প্রকল্পে মাত্র এক কোটি মানুষ আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড পেয়েছেন৷ তাও সাইকেল কিংবা স্কুটার থাকলে তারা পাননি৷ এই হচ্ছে কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড৷ সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী দল কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার৷ এগারো লক্ষ লোকের ঘরের টাকা দিচ্ছে না৷ ভোটের পর তারাই তা বানিয়ে দেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জোরের সাথে উল্লেখ করেন৷ জলপাইগুডি় ময়নাগুডি় এবং আশপাশ এলাকায় ঝডে়র তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তদের বাডি়ঘর তৈরি করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী৷

নির্বাচনী প্রচারে এসে রাস মেলার মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানকার বিজেপির প্রার্থী একটি গুন্ডা৷ গুন্ডাদের সর্দার তিনি৷ তুমি আবার আগুন লাগাবেন এই কোচবিহারে৷ কোচবিহারের মানুষ ফের বিপদে পড়বেন ওকে ভোট দিলে৷ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমো ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৯০ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে তার রাজ্যে৷ এদের হাতে তৈরি সামগ্রী বাজার যত করার জন্য বড় বড় বাজার তৈরি করে দেওয়া হবে৷
ভোটের পর এই কাজে হাত দেওয়া হবে৷ কেন্দ্র ওদের জন্য টাকা দেয় না৷ যা কিছু দেন তিনি৷ দেশের কালো টাকা ফিরিয়ে আনবেন বলে নোট বন্দি করেছিলেন মোদি৷ আর সেই নোট বন্দি তে বন্দী হয়ে পডে়ন মানুষ৷ কালো টাকা আর আসেনি৷ বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে সব সাদা হয়ে গেছে৷