• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা হল প্রিয়াঙ্কা গান্ধির

শােণভদ্র সংঘর্ষের শিকার মানুষগুলাের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি।

শােণভদ্র সংঘর্ষের শিকার মানুষগুলাের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। (Photo: IANS)

ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন, তেমনভাবে না হলেও তাঁর কাঙ্খিত উদ্দেশ্য পূরণ হল-শােণভদ্র সংঘর্ষের শিকার মানুষগুলাের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার পর এমন মন্তব্য করলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। শােণভদ্রের সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করে বিপদের সময় তাঁদের পাশে দাড়ানাের ইচ্ছা নিয়ে তিনি শােণভদ্রে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে জেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলির থেকে আসা পরিজনদের মধ্যে দু’জনকে গেস্ট হাউসে আমার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা দেখা করেছেন। আরও জনা পনেরােকে আমার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমাকেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি’।

মির্জাপুরের চুনার গেস্ট হাউসে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে আটক করে রাখা হয়েছিল। প্রশাসনের তরফে প্রিয়াঙ্কাকে ওই গেস্ট হাউস চত্বরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। শােণভদ্র সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা গেস্ট হাউসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারাই বলেন, ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলির থেকে বারাে জন সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।

প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘শেণভদ্র সংঘর্ষে নিহতদের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমার শােণভদ্র আসার উদ্দেশ্য পূরণ হল। আমাকে এখনও আটক করে রাখা হয়েছে। দেখা যাক প্রশাসন কি করে। দলের তরফে ঘটনায় নিহতদের পরিজনদের দশ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে’।

শােণভদ্র জেলার ঘােরওয়ালে গ্রাম প্রধান ও তার সমর্থকরা বিতর্কিত ৯০ বিঘা জমির দখল নিতে গেলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা পরে ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। দু’তরফে সংঘর্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম ২৮।

উত্তরপ্রদেশের যােগী প্রশাসনের তরফে প্রিয়াঙ্কাকে শেণভদ্র জেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশের ডিজিপি সিং বলেন, শােণভদ্র জেলায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে যেতে দেওয়া হয়নি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘সংঘর্ষে মৃতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে না দিলে ধর্না চালিয়ে যাবেন। টানা ২৪ ঘন্টা হয়ে গেল। নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে না দিলে আমি ধর্না চালিয়ে যাব’।

তিনি একটি ভিডিও পােস্ট করেন। পরে টুইট করে লেখেন, ‘ভিডিওটি দেখে কি মনে হচ্ছে, প্রিয়জনকে হারিয়ে পরিবারের লােকজনরা শােক করছেন। কে তাঁদের চোখের জল মুছবে। প্রশাসনের উচিত ছিল এই পরিবারগুলাের নিরাপত্তা দেওয়া। তাদের দেখভাল করা। ঘটনার সময়ে মানুষগুলােকে সাহায্য করা উচিত ছিল। প্রশাসন কি করতে চায় তা আমার বােধগম্যের বাইরে’।

চুনার গেস্ট হাউসে প্রিয়াঙ্কা ও কংগ্রেসের নেতাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলেও গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে বিদ্যুৎ ছিল। কংগ্রেসের তরফে অভিযােগ করা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে লােডশেডিং করে দেওয়া হয়েছিল। দলের কর্মীরা ছবি পােস্ট করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে মােবাইলের আলােয় প্রিয়াঙ্কা গান্ধি তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।

কংগ্রেস নেতা রাজ ববুর টুইট করে লেখেন, ‘চুনার গেস্ট হাউসে প্রশাসনের তরফে ইচ্ছাকৃতভাবে জল ও আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন যদি ভাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি এই সব দেখে ভয় পেয়ে ফিরে যাবেন, তাহলে ভুল করছেন’।

গভীর রাতে প্রিয়াঙ্কা নিজে টুইট করে লেখেন, ‘শােণভদ্রে যেতে না দেওয়া হলে জেলে যেতেও প্রস্তুত। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের তরফে এডিজি বারাণসী ব্রিজ ভূষণ, কমিশনার আগরওয়াল, ডিআইজিকে গেস্ট হাউসে পাঠানাে হয়েছিল। তারা আমাকে ওই নিহতদের পরিবারের লােকজনের সঙ্গে দেখা না করে ফেরত যেতে বলেছিল’।

তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, কোনও ধরণের আইন-শৃঙ্খলা লঙঘন করতে আমি এখানে আসিনি। আমি নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি’। তিনি রাত ১.১৫ মিনিটে চুনার দুর্গ থেকে অফিসারদের বেড়িয়ে যাওয়ার ভিডিওটি পোস্ট করেন।

প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ‘আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন, আমাকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা আমার সঙ্গে প্রায় একঘন্টা বসেছিলেন, কিন্তু আমাকে কেন আটক করা হয়েছে, তা বলতে পারেননি। কোনও পেপারও দেখাতে পারেননি’।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ সরকার নিজেদের স্বৈরতান্ত্রিক মনােভাব প্রকাশ করেছে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা গণতন্ত্রকে পদদলিত করার সামিল’। তিনি ফেসবুকে লেখেন, কংগ্রেস এই ধরণের কূটকাচালিতে ভয় পায় না। দলিত ও উপজাতিদের হয়ে লড়াই চলবে’।

কংগ্রেস নেতা দীপেন্দ্র সিং হুডা, মুকুল ওয়াসনিক, রাজ বর্বর, রণজিৎ প্রতাপ নারায়ন সিং, জিনি প্রসাদ, রাজীব শুক্লাকে বারাণসী বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। তারাও নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে শােণভদ্র যাচ্ছিলেন। কংগ্রেস নেতা প্রমােদ তিওয়াড়ি বলেন, ‘যােগী প্রশাসন চায় না শােণভদ্রের ঘটনায় নিহতদের পরিজনদের চোখের জল কেউ মুছে দিক’।