নিজস্ব প্রতিনিধি– পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথিতে ধৃত দুই জঙ্গির সূত্র ধরেই রাঁচিতে আইএস জঙ্গি মডিউলের সন্ধান পেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ৷ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম কাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে গ্রেপ্তার হয় দুই আইএস জঙ্গি আবদুল মতিন আহমেদ তাহা ও মুসাভির হুসেন শাজিব৷ কলকাতায় চারদিন ধর্মতলার চারটি হোটেলে গা ঢাকা দেওয়ার পরই ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে পালিয়ে যায় তারা৷ রাঁচিতে আইএস-এর একটি স্লিপার সেলে গা ঢাকা দেয় দুই জঙ্গি৷ সেখানে আইএস-এর এক চাঁই রীতিমতো রাঁচি মডিউল তৈরি করেছে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা৷ রাঁচিতে সাতদিন থাকার পর গত ২১ মার্চ কলকাতায় ফেরে দুই জঙ্গি৷ সেদিনই বেঙ্গালুরু থেকে আইএস জঙ্গি সংগঠনের এক মাথা মোজাম্মেল শেরিফ কলকাতায় এসে ধর্মতলা অঞ্চলে তাদের সঙ্গে দেখা করে৷ পলাতক অবস্থায় তাদের প্রত্যেকদিনের খরচ চালানো ও পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নাশকতামূলক পরিকল্পনার জন্য নগদ এক লক্ষ টাকা দু’জনের হাতে তুলে দেয় ওই জঙ্গি নেতা৷ বেঙ্গালুরুতে বিস্ফোরণের তদন্তে ধৃত দুই জঙ্গিকে জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ৷
প্রসঙ্গত, বেঙ্গালুরুর কাফেতে বিস্ফোরণের জন্য এই মোজাম্মেলই আবদুল মতিনদের হাতে তুলে দিয়েছিল বিস্ফোরক৷ আবার বিস্ফোরণের ঘটনায় মোজাম্মেল শরিফকে গত ২৭ মার্চ এনআইএ গ্রেপ্তার করে৷ তাকে জেরা করে আবদুল মতিন ও মুসাভির হোসেনের কলকাতায় আসার তথ্য জানতে পারেন গোয়েন্দারা৷ এর পর বেঙ্গালুরু থেকে এনআইএর টিম এই মাসের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় এসে দুই জঙ্গির সন্ধানে তল্লাশি শুরু করে৷
এদিকে, কলকাতায় থাকাকালীন গোয়েন্দারা যাতে তাদের সন্ধান না পান, তার জন্য মোবাইলের সফটওয়্যার পালটানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা৷ এই পদ্ধতিতে পুরনো আইএমইআই নম্বর মুছে ফেলা সম্ভব৷ সেই ক্ষেত্রে নতুন আইএমইআই নম্বরের হদিশ পাওয়া খুব সহজ নয় গোয়েন্দাদের পক্ষেও৷ তাই মধ্য কলকাতার বউবাজারের চাঁদনি চকের একটি মোবাইলের দোকানেও যায় তারা৷ মোবাইল খারাপ হয়ে গিয়েছে, তাই সারাতে হবে বলে জানায়৷ সারানোর কথা বলার মধ্যেই আবদুল মতিন বলে, একেবারে সফটওয়্যার পালটে দিতে৷ কিন্ত্ত দোকানের মালিকের এতে সন্দেহ হয়৷ তাই তিনি শেষ পর্যন্ত তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি৷ এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷
বিস্ফোরণ ঘটানোর পর বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই ও তেলেঙ্গানা হয়ে গত ১০ মার্চ কলকাতায় এসে পৌঁছয় দুই আইএস জঙ্গি আব্দুল মতিন ও মুসাভির হুসেন৷ তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল বেঙ্গালুরুর দুই আইএস চাঁই মাজ মুনির আহমেদ ও মোজাম্মেল শেরিফের সঙ্গে৷ ‘টর্ক’ নামে অ্যাপটির মাধ্যমে চ্যাট ও কথা বলত তারা৷ মোজাম্মেল তাদের বলে, রাঁচির অন্য এক আইএস মাথার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে গিয়ে গা ঢাকা দিতে৷ গত ১৪ মার্চ ধর্মতলার লেনিন সরণির একটি হোটেল থেকে চেন্নাই যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে বাবুঘাট বাসস্ট্যান্ডে যায়৷ সেখান থেকে দূরপাল্লার বেসরকারি বাসে করে রাঁচিতে পৌঁছয়৷ রাঁচি শহর থেকে দূরে আইএস নেতার সেই ডেরায় যায় তারা৷ গোয়েন্দারা জেনেছেন, রাঁচিকে কেন্দ্র করে ঝাড়খণ্ডে মডিউল তৈরি করে জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগ, তহবিল সংগ্রহের কাছ শুরু করেছে তারা৷ সময়ের ব্যবধানে আরও তথ্য ও সুত্র উঠে আসবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷