দিল্লি, ১১ এপ্রিল— বিপদে দিল্লির শাসকদল আপ৷ দলের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জেলে৷ আবগারি দূর্নীতিকাণ্ডে দেড় বছর ধরে কারাগারে বন্দি উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া৷ দুর্নীতির অভিযোগে বছর তিন জেলে আটক দিল্লির প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন৷ এছাড়া আপের একাধিক নেতা-মন্ত্রী ইডি-সিবিআইয়ের রাডারে রয়েছেন বলে খবর৷ এরপরও আরও বেশ কিছু আপ নেতা প্রকাশ্যেই গ্রেফতারের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ যাদের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে মন্ত্রী আতিশীর নাম৷ তবুও আতিশী এখনও রয়েছেন দলের সঙ্গে৷
কিন্ত্ত আপের এমন অনেক নেতা আছেন যারা দলের বিপদ বুঝেই গা ঢাকা দিয়েছেন৷ জানা গিয়েছে দল ও সরকারের এমন বিপদের দিনে দেখা নেই আম আদমি পার্টির রাজ্যসভায় দশ সাংসদের সাতজনের৷ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের পর পথে নেমেছে গোটা আপ পরিবার৷ দিল্লি ছাড়াও দেশের একাধিক শহরে প্রতিবাদ মিছিল, সমাবেশ হয়েছে৷ দু’সপ্তাহ আগে দিল্লির রামলীলা ময়দানের প্রতিবাদ সভায় হাজির ছিল ইন্ডিয়া জোটের সব শরিক৷ কিন্ত্ত আপের সেই সাত সাংসদকে দলের প্রতিবাদের কর্মসূচিগুলিতে দেখা যাচ্ছে না৷ লোকসভায় আপের একজন এমপি ছিলেন৷ তিনি গতমাসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷ রাজ্যসভার দশ সাংসদের মধ্যে মদকাণ্ডে প্রায় ছয়মাস জেলে ছিলেন দলের শীর্ষ নেতাদের একজন সঞ্জয় সিং৷ তিনি সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে দলের প্রতিবাদ কর্মসূচির হাল ধরেছেন৷ তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন আরও দুই সাংসদ যাঁরা আবার রাজনীতির জগতের মানুষ নন৷ যদিও দলের সব কর্মসূচিতে তাঁদের দেখা যাচ্ছে৷ অথচ বাকি সাতজন নীরব৷
বেপাত্তা সাতজনের মধ্যে একমাত্র প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি দলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হবেন না৷ সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের এই অবস্থানের কথা জানালেও ব্যাখ্যা দেননি হরভজন৷ বোঝাই যাচ্ছে তিনি বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চাইছেন না এবং পদত্যাগী মন্ত্রী রাজকুমার আনন্দের মতো জাতীয় ক্রিকেট দলের এই প্রাক্তন তারকা মনে করেন কেজরিওয়াল-সহ দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুনীতির অভিযোগ সত্য৷ বুধবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পাশাপাশি আপের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন মাঝবয়সি রাজকুমার৷ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পাশাপাশি বলেন, দিল্লি হাই কোর্ট বলে দিয়েছে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারে অন্যায় কিছু হয়নি৷ ইডির কাছে আপ কর্তার দুর্নীতির প্রচুর তথ্যপ্রমাণ আছে৷
বেপাত্তা সাংসদদের নিয়ে দলে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সঞ্জয় সিং৷ তাঁর বক্তব্য, সাত সাংসদ কেন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হচ্ছেন না সে ব্যাপারে দলকে তাঁরা কিছু জানাননি৷ বেপাত্তা সাংসদের অন্যতম হলেন রাঘব চাড্ডা ও স্বাতী মালিওয়াল৷ রাঘব পাঞ্জাব এবং স্বাতী দিল্লি থেকে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন৷ রাঘব চোখের অপারেশন করাতে লন্ডন গিয়েছেন৷ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হওয়ার আগে লন্ডন গেলেও এখনও সেখানেই রয়েছেন৷ যদিও তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী ফিরে এসেছেন৷ রাঘবের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়ে গিয়েছেন রাঘব৷ স্বাতী মালিওয়াল রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার আগে ছিলেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন৷ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি দেশ ছেডে়ছেন৷ স্বাতীর বক্তব্য তিনি নিউইয়র্কে বোনের বাডি়তে আছেন৷ বোন অসুস্থ৷ তাঁর শুশ্রূষার জন্য থেকে যেতে হয়েছে৷
কেজরিওয়ালের মন্ত্রী আতিশী সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অভিযোগ করেছেন, ইডির থাবা থেকে বাঁচতে তাঁকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ প্রমাণ দিতে আতিশীকে আইনের নোটিস ধরিয়েছে বিজেপি৷ কিন্ত্ত বেপাত্তা সাংসদের সঙ্গে বিজেপির কোনও বোঝাপড়া হয়েছে কিনা তা নিয়ে আপের অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে৷