মুম্বই– আগামি জুনে টি২০ বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়ছেন বিরাট কোহলি ও ঋষভ পন্থ৷ এ মাসের শেষ সপ্তাহে জাতীয় দলের নির্বাচকরা প্রাথমিক দল বাছাই করে নেবেন৷ সম্ভবত ১ মে তাঁরা দল ঘোষণা করে দেবেন৷ কারন সেদিনই ক্রিকেটারদের তালিকা আইসিসি-র কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে৷ পরে দলে কিছু বদল করতে চাইলে ২৫ জুনের মধ্যে তাঁরা তা করতে পারবেন৷ তাই নির্ধারিত দিনের আগে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অন্দরমহল থেকে যে খবর বেরিয়ে এল তা হল প্রচন্ড বিতর্কে থাকা বিরাট কোহলিকে নিয়ে আর কোনও সমস্যা নেই৷ তিনি ১৫ জনের দলে ঢুকে পড়ছেন৷ এবং তাঁর সঙ্গে দলে ঢুকছেন কিপার-ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ৷
বিরাটক নিয়ে ঝড় উঠেছে আইপিএল শুরুর আগে থেকেই৷ তবে তা সাইক্লোনের আকার নেয় রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচের পর৷ সেই ম্যাচে বিরাট ১১৩ রানে অপরাজিত থাকেন৷ তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৮৷ সেই ম্যাচে ১৭২ স্ট্রাইক রেট রেখে জোস বাটলার সেঞ্চুরি করেছিলেন৷ এমন দুটি সেঞ্চুরি দেখার পর কথা উঠে যায় যে এত মন্থর ইনিংস খেললে দল জিতবে কীভাবে! কুডি় ওভার ব্যাটিং করার পর কেন বিরাটের স্ট্রাইক রেট ১৫৮ হবে৷ ওটা তো ২০০-র কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল৷ সেটা না হওয়ার কারনে আরসিবি ম্যাচ জিততে পারেনি৷ বিরাটকে টি২০ ফরম্যাট থেকে বাদ দেওয়ার কারন হিসেবে নির্বাচকরা এই স্ট্রাইক রেটকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন৷ এটা যেন তাঁদের কাজ সহজ করে দিল৷ পাঁচ ম্যাচে বিরাট রান করেছেন ৩১৬৷
ব্যাটিং গড় একশোর উপর৷ স্ট্রাইক রেট ১৪০-এর আশে পাশে৷ কিন্ত্ত এবারের আইপিএলে ১৮০ থেকে ২০০-র উপর স্ট্রাইক রেট রেখে জুনিয়র ক্রিকেটাররা খেলে চলেছেন৷ হয়তো বিরাটের মতো সেঞ্চুরি করতে পারেননি৷ কিন্ত্ত শুরু থেকে ব্যাটে ঝড় তুলে দলের রানকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন৷ তাই আড়াল হতে পারেননি বিরাট৷ তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি ওরকম আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করতে পারব না৷ আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী ক্রিকেট খেলি৷ সেদিন উল্টোদিক থেকে উইকেট পডে় যাচ্ছিল৷ কেউ একজন ধরতে পারলে আমাদের খেলা অন্যরকম হত৷ কিন্ত্ত সেটা কারোর কাছ পাইনি৷ তাই নিজেকে পুরো ইনিংস উইকেটে রেখে দিয়ে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি৷ ভেবেছিলাম আমাদের ১৯০ থেকে ১৯৫ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে৷ কিন্ত্ত সেটা ১৮৩ রানে আটকে গেল৷ তবু হয়তো ম্যাচ জেতা যেত৷ কিন্ত্ত আমরা পারিনি৷
এই ঝডে়র মাঝে সামনে এগিয়ে এলেন জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগারকার৷ তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরাটের মতো ফিট ক্রিকেটার কোথাও দেখতে পাওয়া যায় কি! গত দশ-পনেরো বছর ধরে নিজেকে একটা জায়গায় ধরে রেখেছে বিরাট৷ আজকের ক্রিকেটে ওকে দেখে জুনিয়ার ক্রিকেটাররা মানসিক দিক থেকে উজ্জ্বীবিত হয়ে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করে৷ এখন ১৬-১৭ বছরের একটি ছেলে যতটা ফিট তা আগে দেখা যেত না৷ এটা ওকে দেখেই ক্রিকেটাররা নিজেদের সম্ভব করে তুলেছে৷
নির্বাচক প্রধানের কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি এখন ইউ টার্ন নিয়ে বসেছেন৷ তার উপর আইপিএলে যে রান তিনি করেছেন, যে ব্যাটিং গড় নিয়ে খেলছেন, তারপর বিরাটকে বাইরে রাখা কঠিন৷ তাই হয়তো বিরাট ইসু্যতে অন্য পথে হাঁটার চেষ্টা করছেন তিনি৷
আর শুধু তিনি নন, বিরাটের ছেলেবেলার কোচ রাজকুমার শর্মা এতদিন পর মুখ খুললেন৷ তিনি বলছেন, আগে দেখতে হবে কারা বিরাটকে নিয়ে এ ধরনের কথা বলছেন৷ বিরাট সম্পর্কে কোনও কথা বললে সহজে প্রচারের আলোয় আসা যায়৷ তাই ওকে নিয়ে এ সব কথা চলছে৷ যে ম্যাচ নিয়ে ওরা কথা বলছেন, সেদিন মাঠে ঠিক কি হয়েছিল! একদিকে বিরাট নিজেকে ধরে রেখেছিল৷ অন্যদিকে কাউকে পেল না৷ তখন নিজের আনকা ব্যাট চালিয়ে উইকেট ছুঁডে় দিয়ে এলে কি হত! এটাও তো ভেবে দেখতে হবে৷ সেঞ্চুরি করার পর এভাবে কাউকে কথা শুনতে আগে দেখিনি৷
সে যাই হোক, বিরাটকে বাইরে রেখে বিশ্বকাপের দল গড়তে পারবেন না নির্বাচকরা৷ তিনি থাকবেন৷ এর সঙ্গে ঋষভ পন্থ চলে আসবেন৷ তিনি এখন পুরোপুরি ফিট৷ দিল্লির হয়ে ব্যাট করতে নেমে ১৬০ রান করে ফেলেছেন৷ তাঁর মতো ক্রিকেটার ফিট থাকলে অন্য কেউ ভাবনায় আসতে পারেন না৷ তাই ঋষভ থাকবেন৷ এ নিয়ে কোনও কথা উঠবে না৷ ২০২২ এর ডিসেম্বরে গাডি় দুর্ঘটনার পর দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকার পর তিনি এবারের আইপিএলে ফিরে এসেছেন৷ তারপর জাতীয় দলে৷ এর থেকে ভাল কিছু আর কি হতে পারে৷