• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

গরমে আকছাই ডায়রিয়া, রইল সমাধান

বিশেষত গ্রীষ্মকালে এবং বৃষ্টির সময় ডায়রিয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়৷ এই সময় জল খাওয়ার প্রবনতাও কম৷ তারপর রাস্তাঘাটে জলতেষ্টায় অনেকেই বাইরের ঠান্ডা পানীয়-অাঁখের রস খেয়ে নেন৷ যারফলে পেটের রোগ দেখা দিতে পারে৷ ডায়রিয়া জলবাহিত রোগ৷ অতিরিক্ত গরমের সময় বিভিন্ন কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ এ ছাড়া নানাভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়ায়৷ দূষিত জল পান

বিশেষত গ্রীষ্মকালে এবং বৃষ্টির সময় ডায়রিয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়৷ এই সময় জল খাওয়ার প্রবনতাও কম৷ তারপর রাস্তাঘাটে জলতেষ্টায় অনেকেই বাইরের ঠান্ডা পানীয়-অাঁখের রস খেয়ে নেন৷ যারফলে পেটের রোগ দেখা দিতে পারে৷ ডায়রিয়া জলবাহিত রোগ৷ অতিরিক্ত গরমের সময় বিভিন্ন কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ এ ছাড়া নানাভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়ায়৷ দূষিত জল পান করে অনেকেই ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডসহ জলবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হন৷ ভালোভাবে হাত-মুখ না ধুয়ে খাবার খেলে জলবাহিত রোগের জীবাণু পেটে গিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে৷

হাটবাজারে, রাস্তায়, বিভিন্ন ফুটপাতে অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার রান্নায় বিশুদ্ধ জল ব্যবহার করা হয় না৷ কেউ কেউ আবার ফুটপাতে ফলমূল (পেঁপে, পেয়ারা, শসা ইত্যাদি) কেটে দূষিত জল দিয়ে ধুয়ে বিক্রি করেন৷ এমনকি দূষিত জল দিয়ে শরবতও বানান অনেকে৷ এসব উৎস থেকে লোকজন নানা জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ তাই এসব নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে৷

ডায়রিয়া হলে কী করবেন-
ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে৷ প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর অন্তত ২০০ মি.লি. বা ১ গ্লাসের মতো খাবার স্যালাইন পান করুন৷

ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর জল ও লবণ বেরিয়ে যায়৷ তাই স্যালাইনের পাশাপাশি বারবার বেশি বেশি তরল খাবার যেমন : ভাতের মাড়, চিড়ার জল, ডাবের জল, তাজা ফলের রস (কমলা, মাল্টা, ডালিম কিংবা তরমুজের জুস), সু্যপ, টকদই, ঘোল, লবণ-গুড়ের শরবতসহ যে কোনো তরল খাবার ডায়রিয়া রোগীর জন্য ভালো৷

তরল জাতীয় খাবারের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে (যদি রোগী বমি না করে)৷
বাড়ির কাজের লোক, রেস্তোরাঁর রাঁধুনি কিংবা পরিবেশনকারী অর্থাৎ খাবার তৈরির সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তাদের ডায়রিয়া দেখা গেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কাজ বন্ধ রাখুন কিংবা ছুটির ব্যবস্থা করুন৷ একেবারেই যদি কাজ বন্ধ করা অসম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে তৈরির আগে এবং পরে খুব ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া অবশ্যই নিশ্চিত করুন৷

ডায়রিয়া হলে কী করবেন না—
ডায়রিয়ার শুরুতেই কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একদমই উচিত নয়৷ * আবার অনেকে দ্রুত ডায়রিয়া বন্ধ হওয়ার জন্য ওষুধ খান যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে৷ এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে শিশুদের অন্ত্রনালি পেঁচিয়ে গিয়ে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে৷ * ডায়রিয়া হলে ভাজা-পোড়া বা ঝাল মসলাদার বাইরের খাবার না খেয়ে, বাড়িতে রান্না সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো৷

ডায়রিয়ার চিকিৎসা কী—
মনে রাখতে হবে, খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরের জলশূন্যতা পূরণ করাই ডায়রিয়ার প্রধান চিকিৎসা৷ শুরুতেই ওরস্যালাইন ব্যতীত অন্য কোনো ওষুধ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক খাবার প্রয়োজন নেই৷ ডায়রিয়া শুরু হওয়ার পর রোগীর শরীরে প্রাথমিকভাবে জলের ঘাটতি দেখা যায়৷ তাই ডায়রিয়ার শুরুতে রোগীকে ২-৩ লিটার (৮ থেকে ১২ গ্লাস) স্যালাইন ও তরল খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ পাশাপাশি প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর অন্তত ২০০ মি.লি. বা এক গ্লাসের মতো খাবার স্যালাইন পান করতে হবে৷ মনে রাখতে হবে, যদি মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে জলশূন্যতাকে পূরণ করা সম্ভব হয়, তবে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়ার হয়তো প্রয়োজন হবে না৷ তাই মুখে বারবার খাবার স্যালাইন খাওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে৷ তবে ডায়রিয়া যদি তীব্র হয় বা কলেরা দেখা দেয়, শরীরে তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা যায় তখন রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে৷

কখন হাসপাতালে যাবেন—
ডায়রিয়া রোগীর যথেষ্ট প্রস্রাব হচ্ছে কি না বা পরিমাণ কমে যাচ্ছে কি না তা খুব গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ ডায়রিয়া শুরুর পর যদি প্রস্রাব কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে৷ * এ ছাড়া যদি তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ যেমন : রক্তচাপ কমে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত পিপাসা লাগা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া বা জিহ্বা ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া কিংবা অজ্ঞান হয়ে গেলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি করবেন না৷

শিশুরা ডায়রিয়ায় দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে, এমনকি প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে৷ শিশুদের ক্ষেত্রে নিস্তেজ হয়ে পড়া, প্রস্রাব কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, খিটখিটে মেজাজ বা নিস্তেজ হওয়া, চোখ গর্তে ঢোকা, তৃষ্ণার্ত ভাব বা একেবারেই খেতে না পারা, চামড়া ঢিলা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলোর একটি দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে৷

খাবার স্যালাইন তৈরি ও খাবার নিয়ম : স্যালাইন তৈরিতে বিশুদ্ধ জল ব্যবহার করতে হবে৷ সঠিক পদ্ধতিতে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে স্যালাইন তৈরি করতে হবে৷ * খাবার স্যালাইন অবশ্যই ৫০০ মি.লি. অর্থাৎ আধা লিটার জলে গোলাবেন৷ প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর সেখান থেকে ২০০ মি.লি. বা এক গ্লাসের মতো খাবার স্যালাইন খাবেন৷

জলে গোলানো স্যালাইন ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে, তাই গোলানো স্যালাইন ৬ ঘণ্টা পর ফেলে দিয়ে নতুন করে আবার স্যালাইন তৈরি করা উচিত৷
l যদি স্যালাইন কেনা না থাকে, তবে এক লিটার জলের সঙ্গে এক মুঠো গুড় বা চিনি ও এক চিমটি লবণ মেশালেই তৈরি হয় খাওয়ার স্যালাইন৷ প্রাথমিক চিকিৎসায় এটা ডায়রিয়া রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে৷

ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়—
বিশুদ্ধ জল বা ফুটানো জল পান করুন৷ খাবার ও জল পানের পাত্র বিশুদ্ধ জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
পরিষ্কার স্থানে এবং সঠিক পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণ করুন৷ খাবার সব সময় ঢেকে রাখা উচিত৷
l মলত্যাগ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধুলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ কমে যায়৷ তাই বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে৷ নখের নিচ ও আঙুলের ফাঁকের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে৷ দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন৷ পায়খানার পরেও ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷
l বাড়ির জলের লাইন পরীক্ষা করুন৷ জলের ট্যাংকি পরিষ্কার করুন৷ তাই সচেতন হোন৷