• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

এবার কি আরও শোচনীয় ফল সিপিএমের?

আরও একটা লোকসভা নির্বাচন এসে গেল৷ এখন জোরকদমে প্রচারযুদ্ধে নেমে পড়েছেন সবকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা৷ বাম-ডান সব শিবিরেই তৎপরতা তুঙ্গে৷ তবে এই মুহূর্তে একেবারে দিশাহীন অবস্থা সিপিএমের৷ নিজেদের চরম বিজেপি বিরোধী প্রমাণ গিয়ে এই দলটির একেবারে ল্যাজেগোবরে অবস্থা৷ সুবিধাবাদী রাজনীতি একটা দলকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হল এই সিপিএম৷ যে দলটি

আরও একটা লোকসভা নির্বাচন এসে গেল৷ এখন জোরকদমে প্রচারযুদ্ধে নেমে পড়েছেন সবকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা৷ বাম-ডান সব শিবিরেই তৎপরতা তুঙ্গে৷ তবে এই মুহূর্তে একেবারে দিশাহীন অবস্থা সিপিএমের৷ নিজেদের চরম বিজেপি বিরোধী প্রমাণ গিয়ে এই দলটির একেবারে ল্যাজেগোবরে অবস্থা৷ সুবিধাবাদী রাজনীতি একটা দলকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হল এই সিপিএম৷

যে দলটি পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর রাজত্ব করেছে, রাজ্যপাট খোয়ানোর ১০ বছরের মধ্যেই বিধানসভায় সেই দলের আসন সংখ্যা শূন্যে এসে ঠেকেছে৷ গত লোকসভাতেও এই রাজ্য থেকে একটি আসনেও জিততে পারেনি সিপিএম৷ স্বাধীনতার পর ভারতে সিপিএমের এমন দুরবস্থা আগে কখনও দেখা যায়নি৷
এমনকী এই দলটির এখন জাতীয় দলের স্বীকৃতি থাকবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে৷ ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে যে পুস্তিকা প্রকাশ করেছে, তাতে জাতীয় দলের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
১. চারটি বা তার বেশি রাজ্যে রাজ্য দল হিসেবে স্বীকৃতি
অথবা
২. পূর্ববর্তী লোকসভা বা বিধানসভার নির্বাচনে মোট বৈধ ভোটের অন্তত ৬ শতাংশ পেতে হবে, সেইসঙ্গে লোকসভায় কমপক্ষে ৪ জন জয়ী প্রার্থী থাকতে হবে

অথবা
৩. অন্তত ৩টি রাজ্য মিলিয়ে লোকসভার মোট আসনের মধ্যে ২ শতাংশ, অর্থাৎ ১১টি আসনে জয়
২০০৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সিপিএমের আসন প্রাপ্তির হিসেব হল:
২০০৪: ৪৩টি আসন (পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৬টি, কেরালা থেকে ১২, তামিলনাড়ু থেকে ২, ত্রিপুরা থেকে ২, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ১; ভোটের হার ৫.৬৬%)
২০০৯: ১৬টি আসন (পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৯, কেরালা থেকে ৪, ত্রিপুরা থেকে ২, তামিলনাড়ু থেকে ১; ভোটের হার ৫.৩৩%)

২০১৪: ৯টি আসন (কেরালা থেকে ৫, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে ২টি করে; ভোটের হার ৩.৬ শতাংশ)
২০১৯: ৩টি আসন (তামিলনাড়ু থেকে ২, কেরালা থেকে ১; ভোটের হার ১.৭৫%)
বর্তমানে কেরালায় ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম৷ আর তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের দল হিসেবে তাদের স্বীকৃতি রয়েছে৷ অর্থাৎ শুধুমাত্র কেরলে টিমটিম করে জ্বলছে৷
এরই মধ্যে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ৫০টির মতো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷
সেই হিসেবে গত পাঁচ দশকের মধ্যে এই প্রথম লোকসভা নির্বাচনে সব চেয়ে কম আসনে প্রার্থী দিচ্ছে ৬০ বছরের পুরনো এই দল৷
২০০৪-এর নির্বাচনে ৬৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪৩টিতে জিতেছিল৷ তার পর থেকে সিপিএমের শক্তি শুধু ক্ষয়ই হয়েছে৷

দেখা যাচ্ছে, ২০০৯ সালের পর থেকে সিপিএমের যে অবনমন শুরু হয়েছিল, এখন তা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ৫৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল৷ এরপর ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ৬৩ থেকে ৬৪টি আসনে লড়াই করেছিল৷ ১৯৯৬ সালে সিপিএম ৭৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল৷ এরপর ২০১৪ সালে ৯৩টি এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ৬৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল৷

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তেমন কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকলেও, দলের নেতাদের ঔদ্ধত্য আর অহংকার কিন্ত্ত এখনও এতটুকু কমেনি৷ সেইসঙ্গে দলের বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে৷ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করেছিল সিপিএম, যা দলের পুরনো নেতা, কর্মীরা মেনে নিতে পারেননি৷ সিপিএমের কৌশল ছিল, আইএসএফ-কে সামনে রেখে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরানো৷ দলের এই সুবিধাবাদী অবস্থান খুব একটা কাজে আসেনি৷ মুসলিমরা উজাড় করে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, ২০১৯-এ সিপিএমের যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, ২০২১-এ তাঁরাই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন৷ তাই অপ্রত্যাশিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল৷

কংগ্রেসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক হয়েছে সিপিএম৷ অন্যদিকে, এই জোটে সামিল হয়েছে তৃণমূলও৷ বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে এই জোট তৈরি হলেও, সিপিএমের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, বিজেপি নয়, তৃণমূলই সবচেয়ে বড় শত্রু৷ বিভিন্ন প্রচার সভায় সিপিএম নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে যতটা বলছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি চড়া সুরে তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন৷

এই রাজ্যে এখন কংগ্রেস-সিপিএমের সখ্যতা দেখে ভিরমি খেতে হচ্ছে৷ মনে পড়ছে, ২০০৮ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার থেকে সিপিএমের বেরিয়ে আসার কথা৷ শুধুমাত্র পরমাণু চুক্তির মতো একটা বিষয় নিয়ে একটা সরকারকে বিপদে ফেলতে পিছপা হয়নি এই বামদল৷ কেরালার দিকে তাকান৷ সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়৷ কেরলে কংগ্রেস চরম শত্রু, আর পশ্চিমবঙ্গে পরম বন্ধু৷

পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ বাম জমানায় সিপিএমের হাতে কংগ্রেসের অসংখ্য নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন৷ তখন কংগ্রেস ছিল শ্রেণি শত্রু৷ আবার ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর সেই শ্রেণিশত্রুই কী করে কাছের বন্ধু হয়ে উঠল, তার কী ব্যাখ্যা দেবেন সিপিএম নেতারা?

তরুণ প্রজন্মের ওপর ভর করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সিপিএম৷ কিন্ত্ত তা সম্ভব হবে কি? মনে হয় না৷ কারণ, একবার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে গেলে, তা ফেরানো কঠিন৷ সিপিএমের অত্যাচার কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, দীর্ঘ সাড়ে ৩ দশকের বাম শাসনে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের নামে নৈরাজ্য, হাসপাতালগুলির নরক দশা, সরকারি অফিসগুলিতে কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতাদের দৌরাত্ম্য, বেহাল কর্মসংস্কৃতি, রাস্তাঘাটের শোচনীয় চেহারা, কী করে ভুলবেন রাজ্যের মানুষ? সিপিএম জমানার এই কলঙ্কিত অধ্যায় সম্পর্কে আজকের তরুণ প্রজন্মের অবশ্য ততটা জানার কথা নয়৷ তাই তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনার কথা বারবার সিপিএম নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে৷ এটাই সিপিএমের কৌশলী রাজনীতি৷
কিন্ত্ত বাস্তব বড় রূঢ়, কঠিন৷ শুধুমাত্র মুখে আদর্শের বুলি আউরে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায় না৷ সত্যিটা সত্যি, মিথ্যেটা মিথ্যেই৷

এবার আসি লোকসভা ভোটে সিপিএমের ফলাফল প্রসঙ্গে৷ একটি সমীক্ষায় এই রাজ্যে ৩টি আসনে সিপিএমের জয়ের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্ত্ত, বাস্তব অঙ্ক বলছে, কেরালা বাদ দিলে, অন্য কোনও রাজ্য থেকে একটি আসনেও সিপিএমের জয়ের সম্ভাবনা নেই৷ দেখা যাক, ৪ জুন ভোটের ফল বেরনোর পর, অবস্থা কী দাঁড়ায়?