বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক — এই তিন চলচ্চিত্রকার ত্রিপাদ ভূমিতে অনেকটা জায়গা অধিকার করেছিলেন বটে, কিন্ত্ত তারই সঙ্গে আরও দুটি নাম সংযুক্ত হয়ে পঞ্চভূজ ভূমি গঠন করতে পারতেন, তার একটি নাম তরুণ মজুমদার, অন্যটি তপন সিনহা৷
এঁদের মধ্যে তরুণ মজুমদার ছিলেন অন্যরকম৷ একেবারে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাকে তিনি জারিত করে ফেলতে পারতেন শিল্পের ফর্মুলায়৷ তার সঙ্গে অনুঘটক হিসেবে থাকত রবীন্দ্রসঙ্গীত৷
আসলে তরুণ মজুমদার শব্দটাই বলে দেয় অনেক কথা৷ একটা ছবি যা পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর, ভালো অভিনয় উপভোগ করার, ভালো গান শোনার সুযোগ৷ এই উপাদানগুলিই ছিল তরুণ মজুমদারের ছবির ভিত৷ ছবির গল্প বলিয়ে হিসেবে খুব সহজ সরলভাবে ছবির গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন তরুণ মজুমদার৷ যদিও প্রথম দিকে নিজের একার নামে ছবি পরিচালনা করেননি৷ যাত্রিক-এর ছত্রছায়ায় ছবি পরিচালনা শুরু করেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত চাওয়া পাওয়া ছবি দিয়ে৷ যথেষ্ট সফল হয় সেই ছবি৷ তিনি শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে ছবি পরিচালনার কাজ শুরু করেন ‘যাত্রিক’ নামে৷ পরে একক নামে ছবি পরিচালনা করেন তিনি৷ গান ছিল তরুণ মজুমদারের ছবির অন্যতম প্রধান উপাদান৷ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন তরুণ মজুমদারের প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার৷
সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন -এর উদ্যোগে আগামী ১১ এপ্রিল, ইউনিভার্সিটি হলে, বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে ‘এক সন্ধ্যা বহু সুর’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান৷ সঙ্গে থাকবে গীতি আলেখ্য — তরুণ গাথা৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় ভাষ্যপাঠে থাকবেন সংস্থার সম্পাদক সঞ্জীব আচার্য৷ পরে সঙ্গীত পরিবেশ করবেন লোকগানের জনপ্রিয় দল ‘দোহার’৷ সকলেই জানেন, তরুণ মজুমদারের ছবি সর্বদাই সঙ্গীতনির্ভর৷ রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর ছবিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে৷ তাঁর ছবিতে সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সব গান সুপারহিট৷ ‘রাহগীর’ নামে একটি হিন্দি ছবিও পরিচালনা করেছেন, সেখানেও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (কুমার)৷ তবে অবশ্য হিন্দি ‘বালিকা বধূ’ সিনেমায় সুরকার ছিলেন রাহুল দেব বর্মন৷ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘বালিকা বধূ’তে৷ দেবশ্রী রায়কে তিনি প্রথমে শিশুশিল্পী হিসেবে ব্যবহার করেছিলনে ‘কুহেলি’ ছবিতে৷ পরে দেবশ্রীকে তিনি কাজে লাগান ‘দাদার কীর্তি’তে৷ সঙ্গে তাপস পালেরও আত্মপ্রকাশ হয় ও ‘দাদার কীতি’ ছবিতেই৷
অমিত কুমারের সর্বপ্রথম জনপ্রিয় গান ‘বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায়’ তরুণ মজুমদারের বালিকা বধূ ছবিতেই পাওয়া যায়৷ জীবনপুরের পথিক রে ভাই হোক বা হরিদাসের বুলবুল ভাজা, কে জেগে আছো, ফুলেশ্বরী ফুলের মতো নাম, খোঁপার ওই গোলাপ দিয়ে, আঁধারে কখন এসে তরুম মজুমদারের ছবির গান চিরকালের৷
সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন -এর উদ্যোগে তরুণ মজুমদারের ছবির গান নিয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে থাকছে আরও চমক৷ বাংলা নববর্ষে তরুণ মজুমদারের ছবির পোস্টার, বুকলেট কভার দিয়ে এক দৃষ্টিনন্দন ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হবে আগামী ১১ এপ্রিল৷ সেখানে থাকবে যাত্রিক -এর ব্যানারে চাওয়া পাওয়া, স্মৃতিটুকু থাক থেকে তরুণ মজুমদারের এককভাবে পরিচালিত ছবি পলাতক, বালিকা বধূ, কুহেলী, ফুলেশ্বরীর মতো ছবির পোস্টার, বুকলেটের ছবি সুদীপ্ত চন্দের সংগ্রহ থেকে৷ ছবির প্রচারে ব্যবহূত বিভিন্ন অভিজ্ঞান দিয়ে ক্যালেন্ডার সাজানো হয়েছে৷ বাংলা ক্যালেন্ডারে প্রকাশ করার এ এক অভিনব বাঙালিয়ানার উদাহরণ৷ গীতি আলেখ্য, তরুণ গাথার বিশেষ পরিকল্পনাও তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে৷ বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডারে তরুণ মজুমদারের ছবির পোস্টার ও বুকলেট৷ সংগ্রহে রাখার মতো ক্যালেন্ডার এটি৷ এই ধরনের উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ভালো রাখতে, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে মানুষের মনকে উন্নত করতে৷