জেলা সীমানায় উত্তেজনা বাড়ায় চলছে টহল
খায়রুল আনাম: এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতারের পরেও, বীরভূমের ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া দুবরাজপুর-সদাইপুর এলাকার পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে৷ ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া এই এলাকাটি মাওবাদী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত৷ তাই লোকসভা ভোটের মুখে এমন একটি এলাকায় এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন৷ পরিস্থিতি যাতে কোনওভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে জন্য পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে টহল শুরু হয়েছে৷ এই ঘটনার জেরে আসানসোলের নুনি মোড় এলাকায় ধৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিজেপি অবস্থান বিক্ষোভ দেখানোর পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের বারাবনি থানায় কিশোরীকে গণধর্ষণের দায়ে ছয় জনের নামে এফআইআর দায়ের করেছেন ওই নির্যাতিতার বাবা৷ নির্যাতিতার বাবা অবশ্য বলছেন, তাঁর কিশোরী কন্যাকে গণধর্ষণের ঘটনায় আরও দু’জন যুক্ত রয়েছে৷ পুলিশকে তাঁদেরও গ্রেফতার করতে হবে৷
বীরভূমের দুবরাজপুর-সদাইপুর এলাকার পাশেই পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনি থানা এলাকায় কয়েক দিন ধরে একটি ধর্মীয় মেলা চলছে৷ ওই মেলায় সদাইপুর এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকানও করেছেন৷ দুই এলাকার মানুষই ওই মেলায় যান৷ বৃহস্পতিবার ৪ এপ্রিল রাত্রি একটা নাগাদ বীরভূমের সদাইপুর এলাকার ওই কিশোরী বাড়ির বাইরে আসে প্রকৃতির ডাকে৷ তারপর সে আর বাড়িতে না আসায় পরিবারের লোকজন খোঁজখবর শুরু করেন৷ খোঁজখবর করতে গিয়েই ওই কিশোরীকে পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনির ওই মেলার কাছে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যেতেই উত্তেজনা ছড়িছে পড়ে৷ ওই কিশোরীর জ্ঞান ফিরলে সে তাঁকে গণধর্ষণের কথা জানায়৷ ওই কিশোরীর পরিবারের লোকজন এবং গ্রামবাসীরা মেলা কমিটিকে বিষয়টি জানালেও তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে কোনও গুরুত্ব না দেওয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়৷ খবর পেয়ে বারাবনি থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়৷ বারাবনি থানার পুলিশ তারপরই বীরভূমের সদাইপুর থেকে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে শেখ ফয়জল, শেখ আফজল, শেখ রবিউল, শেখ মাজহারুল ও শেখ আতিকুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়৷ এঁদের আদালতে হাজির করলে আদালত তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়৷ ভোট পর্বের মুখে ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় এই রকম একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত বিষয়টি নিয়ে তদন্তে হাত দেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) ইপ্সিতা দত্ত৷ তিনি জানিয়েছেন, ওই কিশোরীকে আসানসোল হাসপাতালে নিয়ে এসে সেখানে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে৷ কিশোরীটির অবস্থা স্থিতিশীল৷ একটি ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়েছে৷ পুলিশ ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করার পরে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে৷ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে৷ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷