• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

‘এক দেশ এক ভোট’ নির্বাচনী ইসু্য হতে পারত, কিন্ত্ত…

ত্রিদিবরঞ্জন ভট্টাচার্য নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে সাত দফায় লোকসভার ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে৷ দিল্লির কুর্সি কার দখলে যাবে তা জানা যাবে ৪ জুন, ভোটগণনার দিন৷ এ বছরের শুরু থেকেই ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল৷ ১৬ মার্চ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট জানিয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী উত্তাপ সারা

ত্রিদিবরঞ্জন ভট্টাচার্য

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে সাত দফায় লোকসভার ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে৷ দিল্লির কুর্সি কার দখলে যাবে তা জানা যাবে ৪ জুন, ভোটগণনার দিন৷ এ বছরের শুরু থেকেই ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল৷ ১৬ মার্চ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট জানিয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী উত্তাপ সারা দেশ জুড়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে৷ আর কয়েকদিনের মধ্যে ‘নির্বাচনী লু’ বইতে শুরু করবে৷ এপ্রিলে দুই দফা (১৯ ও ২৬) মে মাসে চার দফা (৭, ১৩, ২০,২৫) এবং শেষ দফা অর্থাৎ সপ্তম দফা ১ জুন৷

লোকসভার ভোট ঘোষণার ঠিক দু’দিন আগে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন ৯-সদস্যের উচ্চস্তরীয় কমিটি ‘এক দেশ এক ভোট’ সম্পর্কে বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে প্রায় ১৯ হাজার পাতার একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন৷ এই রিপোর্ট তৈরি করতে কমিটির সময় লেগেছে ১৯১ দিন৷ গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর এই কমিটি গঠিত হয়েছিল৷

কমিটির রিপোর্টে ২০১৯ সাল থেকে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরের সুপারিশ করা হয়েছে৷ অন্যান্য দলের এই নীতি কার্যকর করার ব্যাপারে আপত্তি বা দ্বিমত থাকলেও বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরলে এই নীতি কার্যকর করার বিষয়ে মরিয়াভাবে চেষ্টা করবে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ লোকসভা ভোটের ধামাকায় এতবড় একটি বিষয় সেভাবে আলোচনায় এল না, প্রচার পেল না৷ অথচ এবারের নির্বাচনে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য হতে পারত৷ কিন্ত্ত এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী তরজা যেভাবে চলছে তা থেকে অনুমান করা যায় যে আগামী দুই মাসের নির্বাচনী প্রচারে বিষয়টি সেভাবে উঠে আসবে না৷ এই নীতির বিরুদ্ধে যাঁরা তাঁদের উদ্বেগ কতটা, জনমানসে প্রশ্ন৷ হয়তবা সদর্থক ইসু্যতে ভোট বাড়ে না৷

সংশোধনী সহ এগারো অধ্যায়ের ১৮,৬২৬ পাতার ‘এক দেশ এক ভোট’ সম্পর্কে রিপোর্ট নিয়ে এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা আদৌ সম্ভব নয়৷ এই রিপোর্টের ষষ্ঠ অধ্যায়ে ‘এক দেশ এক ভোট’ এই নীতি কার্যকর করার বিরুদ্ধে যেসব সমস্যা ও উদ্বেগের কথা বলা হচ্ছে সে সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে৷ আজকের এই প্রতিবেদনে রিপোর্টে এ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা তুলে ধরার প্রয়াস বলা চলে৷

(১) ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতির যাঁর বিরোধী তাঁরা মনে করেন যে সংসদ বা বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবার আগে ভেঙে দিলে তা হবে জনমতের বিরুদ্ধাচারণ এবং সেই সঙ্গে সংবিধানবহির্ভূত৷ এই নীতি কার্যকর হলে সংবিধানের মূল কাঠামোতে আঘাত লাগবে৷

কমিটি এই নীতির বিরোধীদের উপরের এই মত সম্পর্কে সহমত নন৷ কমিটির মতে সংবিধানের ৮৩ এবং ১৭২ ধারায় বলা আছে যে লোকসভা বা বিধানসভার মেয়াদ হবে সর্বাধিক পাঁচ বছর, তার বেশি হবে না৷ কিন্ত্ত এই দুই ধারায় বলা হয়নি সংসদ বা বিধানসভার মেয়াদ নূ্যনতম পাঁচ বছর৷ এছাড়াও লোকসভা বা বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবার আগেই অনেকবার ভেঙে দিয়ে পুনরায় জনমত নেওয়া হয়েছে৷ কমিটির মতে বিরোধীদের এই যুক্তিতে কোনও ধার নেই৷

এই নীতিতে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ক্ষুণ্ণ হবে বলেও কমিটি মনে করেনি৷ কমিটির মতে, সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২১ ধারা— যা সবিধানের ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ নামে পরিচিত তা সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কথা বলে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন এবং বিচারবিভাগের স্বাধীনতা হল গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক গুণাবলী৷ এক সঙ্গে ভোট হলে নাগরিকদের অধিকার বা সংবিধানের অন্য কোনও মৌলিক বিশিষ্টতা কোনওভাবেই খর্ব হবে না৷

(২) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতিতে কোন সময়ে লোকসভা বা বিধানসভায়, কোন দল/গোষ্ঠীর সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে কী হবে এই নীতিতে তার কোনও দিশা নেই৷

কমিটি এই প্রশ্নে সারকারিয়া কমিশনের সুপারিশের কথা তুলে ধরেছে৷ সারকারিয়া কমিশন কোনও দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে রাষ্ট্রপতি/রাজ্যপাল পছন্দের ক্রমানুসারে যা করতে পারেন— (ক) প্রাক্ নির্বাচনী জোটকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানাতে পারেন, (খ) স্বতন্ত্রসহ অন্যদের সমর্থনসহ বৃহত্তম দলকে সরকার গড়ার জন্য আমন্ত্রণ করতে পারেন, (গ) দলগুলির নির্বাচনী পরবর্তী জোটকে সরকার গড়ার আহ্বান জানাতে পারেন, (ঘ) একটি নির্বাচনী পরবর্তী জোট যেখানে জোটের কিছু দল সরকার গঠন করবে অন্যরা বাইরে থেকে সমর্থন দেবে৷ আর কমিটির পরামর্শ সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আইনসভার (সংসদ/বিধানসভা) প্রতি আস্থা রাখতেই হবে৷ তবে রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে যে একান্তই সরকার গড়া না হলে নির্বাচন হবে আইনসভার বাকি মেয়াদের জন্য৷ রাজ্যগুলির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে৷

(৩) ‘এক দেশ এক ভোট’ এই নীতির যাঁরা পক্ষে নন, তাঁরা মনে করেন যে— এই নীতি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ণ হবে৷ এক সঙ্গে নির্বাচন হলে রাজ্যগুলির অধিকার খর্ব হবে৷ কমিটি এই উদ্বেগ সম্পর্কে সংবিধানের ৩২৭ এবং ৩২৮ ধারার কথা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ৩২৭ ধারা অনুসারে সংসদ নির্বাচনী তালিকা প্রস্ত্ততিকরণ সীমানা নির্ধারণ ইত্যাদি করতে পারে৷ অন্যদিকে ৩২৮ ধারায় রাজ্যগুলি তাদের বিধানসভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করতে পারে৷ এজন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য খর্ব হবে এমন আশঙ্কা অমূলক ছাড়া কিছু নয়৷

(৪) ‘এক দেশ এক ভোট’ এই নীতি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থায় আঘাত হানবে, নাগরিকদের অধিকার হারাতে হবে৷ প্রকৃতপক্ষে এক কথায় কমিটি এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে৷ কমিটি মনে করে এই নীতি কার্যকর হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জড়িতদের সময় এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করা হবে সর্বোত্তম৷ কমিটি আরও মনে করে যে অবাধ নির্বাচনে ‘অর্থের ভূমিকা’ সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা৷ এজন্য এই নীতি কার্যকর হলে অর্থের ভূমিকা হ্রাস পাবে৷ কমিটি আরও মনে করে যে এই নীতি রূপায়িত হলে জনমোহিনী প্রকল্প গ্রহণে বিভিন্ন সরকার ঝাঁপিয়ে পড়বে না, এতে সুশাসনের সম্ভাবনা বাড়বে ছাড়া কমবে না৷ নতুন ব্যবস্থা কায়েম হলে কোনওভাবেই নির্বাচনী বর্তমান প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না৷ অনেকে মনে করেন যে লোকসভা, বিধানসভার ভোট একসঙ্গে হলে জাতীয় ইসু্য প্রাধান্য পাবে, আঞ্চলিক ইসু্য চাপা পড়ে যাবে৷
সংবিধান সংশোধন : অনেকের অভিমত ‘এক দেশ এক ভোট’ এই নীতি কার্যকর করলে হলে সংবিধানের বড় সংশোধনীর প্রয়োজন হবে৷ এছাডা.ও বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার অনুমোদনের দরকার হবে৷

কমিটির প্রস্তাব সংসদের মেয়াদ এবং রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ সংক্রান্ত সংবিধানের দুটি ধারা (৮৩ এবং ১৭২) সংশোধনী করলে নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব৷ আর এই সংশোধনীর জন্য রাজ্য বিধানসভার অনুমোদনেরও প্রয়োজন নেই৷ এছাড়াও সংবিধানের ৮৫, ১৭৪ এবং ৩৫৬ ধারার সংশোধনী প্রয়োজন বলে মনে অনেকের মত৷

দুই স্তরে নির্বাচন : নির্বাচন প্রক্রিয়া হবে দুই স্তরে ৷ প্রথম পর্যায়ে লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন হবে একসঙ্গে৷ আর দ্বিতীয় স্তরে রি্‌নর্বাচন হবে কর্পোরেশন, পুরসভা, পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলির৷ আর এই নির্বাচন হবে লোকসভা/বিধানসভার নির্বাচনের একশো দিনের মধ্যে৷ তবে এজন্য কমপক্ষে অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভার অনুমোদন প্রয়োজন হবে৷

এবার রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের অন্যান্য সুপারিশগুলি অল্পকথায় দেখে নেওয়া যেতে পারে৷

একক ভোটার তালিকা/আইডি : লোকসভা, বিধানসভা এবং স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা— এই তিনটি স্তরের নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য একক ভোটার তালিকা এবং সচিত্র পরিচয়পত্রের সুপারিশ করা হয়েছে৷ এজন্য প্রয়োজন হবে সংবিধান সংশোধনের৷ আর এজন্য নিতে হবে কমপক্ষে অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভার অনুমোদন৷

‘এক দেশ এক ভোট’ এই নীতি কার্যকর হবে, বা হবে না এবং হলেও তা কবে হবে, তা সময়ই বলবে৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ধারণাটি একেবারে আনকোরা একথাও বলা যায় না৷ ১৯৫১ সালে হয় আমাদের দেশে সংবিধান অনুসারে প্রথম সাধারণ নির্বাচন৷ এই বছর লোকসভা ও বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গেই হয়েছিল৷ এরপরে এই ধারা বজায় ছিল ১৯৫৭, ১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালে সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত৷ কিন্ত্ত ১৯৬৮ সাল থেকে এই ধারা ধাক্কা খায়৷ ১৯৬৮-৬৯ সালে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা অকালে ভেঙে যায়৷ আর ১৯৭০ সালে লোকসভা তার পূর্ণ মেয়াদ শেষের আগে ভেঙে যায় এংব ১৯৭১ সালে আবার লোকসভার নির্বাচন হয়৷ এককথয়া বলা যায় ১৯৬৭ সাল থেকেই লোকসভা আর বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসবার নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না৷

‘এক দেশ এক ভোট’ বিষয়টি মোদি সরকার প্রথমে সামনে এনেছে একথা বললে ভুল হবে৷ মোদি সরকারের এ ব্যাপারে উদ্যোগ অনেক বেশি একথা অনস্বীকার্য৷ তবে ১৯৮০ সালেই ভারতের নির্বাচন কমিশন তাদের রিপোর্টে এই ধারণার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়৷ বছর বছর নির্বাচন, ব্যয় সংকোচন ছিল এই প্রস্তাবের পটভূমি৷ আইন কমিশনও বিভিন্ন সময়ে এই ধারণা পর্যালোচনা করেছে এবং লোকসভার সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে করার ব্যাপারে তারাও দ্বিমত পোষণ করেনি৷ ২০১৭ সালে নীতি আয়োগও ‘ইলেকশন টাইম টেবিল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে একসঙ্গে ভোট কার্যকর করার বিষয়ে ‘প্র্যাকটিক্যাল রোডম্যাপ’ করার পরামর্শ দেয়৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ বছরের চক্রে জাতীয় পরিষদ, প্রাদেশিক আইনসভা এবং পৌর কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ‘দল-তালিকার’ আনুপাতিক পদ্ধতির ভিত্তিতে৷ সুইডেনেও কাউন্টি কাউন্সিল এংব মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে একসঙ্গে হয়৷
কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এই প্রতিবেদন তৈরির আগে ৪৭টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে৷ ৩২টি রাজনৈতিক দল একসঙ্গে নির্বাচনে সমর্থন জানিয়েছে৷ কংগ্রেস, ডিএমকে, আমআদমি পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টির মতো ১৫টি রাজনৈতিক দল একসঙ্গে ভোটের বিরোধিতা করেছে৷ আর ১৫টি দল তাদের মতামত জানায়নি৷ সংবাদপত্রে মতামত দেবার জন্য যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল তাতে প্রায় সাড়ে একুশ হাজার নাগরিক সাড়া দিয়ে মতামত জানায়৷ এদের ৮০ শতাংশই একযোগে ভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন৷ কমিটি বেশ কয়েকজন প্রাক্তন বিচারপতি, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন৷ সিআইআই, ফিকি, অ্যাসোচেমের মতো বণিক সংস্থা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিটির সদস্যরা৷ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বণিক সংস্থাগুলি জানিয়েছেন, একসঙেঙ্গ নির্বাচন করলে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা হবে৷ কারণ বর্তমানে যেভাবে নির্বাচন হয় তাতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, অর্থনীতিও শ্লথ হয়ে পড়ে৷

‘এক দেশ এক ভোট’ অবশ্যই বিতর্কিত ইসু্য৷ যাঁরা একযোগে লোকসভা, বিধানসভার ভোটের পক্ষে সওয়াল করছেন তাঁদের যুক্তির সারবত্তা নেই একথা বলা সম্ভব নয়৷ এই প্রসঙ্গে শুধুমাত্র লোকসভা নির্বাচনের ব্যয় কীভাবে বাড়ছে তা দেখা যেতে পারে৷ ১৯৫১ সালে যখন প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় তখন ভোটার পিছু খরচ ছিল ৬০ পয়সা, ২০১৪ সালে ভোটার পিছু সরকারি খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ টাকা, আর এবার তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে হবে প্রায় ৭২ টাকা৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনের জন্য ৬৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তবে একসঙ্গে ভোট হলে সরকারি ব্যয় কিছুটা কমলেও প্রথমে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ইভিএমের জন্য বাড়তি খরচ, ভোটার তালিকা তৈরি ইত্যাদির জন্য খরচের ধাক্কা আসবে বেশ বড়ভাবেই৷
২০২৯ থেকে একসঙ্গে লোকসভা, বিধানসভার ভোট করার প্রস্তাব রয়েছে কমিটির রিপোর্টে৷ এই প্রস্তাব কার্যকরী হলে ২০২৪ থেকে ২০২৮ এর মধ্যে যেসব রাজ্যের নির্বাচন হবে সেসব রাজ্যের বিধানসভা পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারবে না৷ যেমন আমাদের রাজ্যের পরবর্তী বিধানসভা ভোট ২০২৬-এ৷ কিন্ত্ত এই নীতি কার্যকর হলে ২০২৯-এ লোকসভার সঙ্গে আবার বিধানসভার ভোট হবে৷

লোকসভা, বিধানসভার ভোট একসঙ্গে হলে আর্থিক, প্রশাসনিক কিছু সুবিধা অবশ্যই হবে৷ তবে কালো টাকা, মুদ্রাস্ফীতি, পেশিশক্তির আস্ফালন কমবে— এইসব যুক্তির কতটা ধার আছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই৷ একযোগে নির্বাচন বাস্তবায়নে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি কতটা বিঘ্নিত হবে তার চুলচেরা নিরপেক্ষ মূল্যায়ন প্রয়োজন৷ বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই নীতি কার্যকর করার কথা ভাবা উচিত৷ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ণ হলে একসঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ কথা হতে পারে না৷