অশ্বিনী কুমার প্রামাণিক ও নিত্যানন্দ ঘোষ
এই প্রশ্ন থেকেই দুই সমীক্ষক তিনটি বিশেষ ফুল বাজারে ঘুরে নিম্নের প্রতিবেদনটি প্রস্ত্তত করলেন৷ বাজারগুলি হল— উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর বাজার, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট বাজার এবং গঙ্গার পূর্বপাড়ের মল্লিকঘাট বাজার৷ তিনটি বাজারই দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ-ছটি জেলার ফুলচাষিদের পরিচিত বাজার৷ একডাকেই প্রায় সবাই চেনে, এখানে চাষিরা যেমন তাঁদের ফুলের পসরা নিয়ে হাজির হন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও তাঁদের কাছ থেকে সরাসরি ফুল কিনে নিয়ে কিংবা ফুলচাষের মাঠ-ময়দান থেকে কিনে এনে কখনও পাইকারি হারে, কখনও খুচরো অথবা দু’ভাবেই বিক্রিবাটা করেন. এই ব্যবসায়ীরা মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী৷
সমীক্ষকেরা খুঁটিয়ে দেখতে চেয়েছেন পশ্চিমবাংলার কৃষির সংকটজনক অবস্থার মধ্যেও এই চাষিদের নির্দিষ্ট সমস্যাগুলি কী? বিশেষত সবুজ বিপ্লবোত্তর ভারতীয় কৃষির ক্ষেত্রে শস্যবৈচিত্র্যের যে বিধান বহুজাতিক অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি বাতলে ছিলেন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও চাষিরা একেবারে ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন, ওই ধরনের অর্থকরী শষ্যের চাষ আর একেবারেই করছেন না এমনটা নয়৷ কিন্ত্ত লাভের অঙ্ক সেভাবে আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় সেই ফসলের চাষগুলই লগ্নি টানতে ব্যর্থ হয়েছে৷ আলু চাষ তো একটি সংকটের মধ্যে রয়েইছে, চিরাচরিত কৃষি, পণ্য ধানচাষের থেকে সরে এসে যাঁরা ফুলচাষের মতো পণ্যের দিকে ঝুঁকেছিলেন তাঁরাও যে খুব স্বচ্ছন্দে আছেন এমনটা বলা কঠিন৷ তার পরেও এর সমস্যা অন্য যে কোনও ফসলের থেকে আরও সঙ্গীন হয়ে ওঠে করোনাকালে, যখন স্পর্শদোষ এবং ঘ্রাণদোষ— দুটোই সংক্রমণের সহায়ক ছিল৷ স্বভাবতই কঠিন সেই সময় অন্যান্য ফসলের তুলনায় ফুলচাষ অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবুও সেই মহাকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ফুলচাষ এবং ফুলের বাজারগুলি আবারও জমজমাট হয়ে উঠেছে৷ কেমন আছেন সেইসব চাষি এবং ব্যবসায়ীরা?
ঠাকুরনগর বাজার :
সমীক্ষার শুরু ঠাকুরনগর বাজার দিয়ে৷ শিয়ালদা-বনগাঁ রেললাইনে ঠাকুরনগর রেল স্টেশনের গায়েই ঠাকুরনগর ফুলবাজার৷ মতুয়া ধর্মাবলম্বীদের উপাসনাস্থল অদূরেই৷ প্রান্তিক মানুষজনের অনেকেরই বসবাস চারিদিকে৷ তবে ফুলের বাজারটি বেশ বড়৷ এই বাজারের পশ্চাদভূমি যদি ধরা যায় তবে তা ঠাকুরনগর সংলগ্ন ফুলচাষের খেত যেমন আছে, তেমনি তা বিস্তৃত হয় নদিয়ার কৃষ্ণনগর, চাপড়া, রানাঘাট ইত্যাদি বড় বড় চাষের খেতগুলি পর্যন্ত৷
বিগত ২৯.০৩.২০২৩ তারিখে এই সমীক্ষকদ্বয় ওই বাজারে হাজির হন সরেজমিনে ওই ব্যবসাবাণিজ্যের একটি হদিশ পেতে৷ দুপুর গি..ড়য়ে যাওয়ায় সকালের বাজারের যে উত্তাপ থাকে বিশেষত পাইকারি বাজারে তার অাঁচ পাওয়া গেল না৷ তবু কথা হল ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন সর্দার (বয়স ৩৭)-এর সঙ্গে৷
মনোরঞ্জন সর্দার একজন পাইকারি ব্যবসায়ী৷ উনি ফুলচাষিদের কাছ থেকে ফুল কিনে নিয়ে কলকাতায় পাঠান৷ ২০ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত৷ ফুলের বাজারদর কেমন, জানতে চাইলে বললেন, গাঁদার পাইকারি রেট ৪০-৪৫ টাকা প্রতি কেজি৷ সকালের দিকে ওই রেট ৫০ টাকা প্রতি কেজি থাকে৷ মূলত গাঁদার পাইকারি ব্যবসাই তিনি করে থাকেন৷
পাশের জন প্রণব দালাল৷ তিনি স্থানীয় চাষি৷ আকন্দের মালা বিক্রি করেন৷ প্রতিটি ১ টাকা হিসেবে৷ আমপাতা ১০০টির দাম ৬০ টাকা৷ ফুলের বাজার হলেও আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস, যেমন পাতা— আমপাতা, বেলপাতা, তুলসিপাতাও বিক্রির জন্য তাঁরা দূরদূরান্ত থেকে আসেন এবং এই ব্যাপারে মহিলারাই বেশি যুক্ত৷ আর সব বাজারেই তাঁরা সক্রিয় এই ফুল ছাড়াও অন্যান্য জিনিসপ্তর বিক্রির ব্যাপারে৷ এই বাজারে দু’ধরনের ব্যবসায়ীদেরই দেখা পাওয়া যায়৷ এক, যাঁরা নিজেদের চাষের ফুল বাজারজাত করেন এবং বিক্রি করেন, দুই, যাঁরা মাঠে চাষিদরে কাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করে কিংবা কিনে নিয়ে বাজারে বসেন৷ এই চাষিদের চাষের জমির পরিমাণ দশ-বিশ কাঠা৷ ফুলচাষকে অনেকেই পারিবারিক পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন৷ তেমনই একজন গৌতম সরকার (৩২)৷ তাঁর বাবা দোপাটি ফুলের চাষ করতেন৷ বাবার সূত্রে উনিও এই চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন৷ চাষের খরচ কেমন? একটা হিসেব পাওয়া গেল— সার-ওষুধ-শ্রম তো চাষে লাগেই৷ এছাড়া ফুল তোলার খরচ কেজি প্রতি দশ টাকা৷ দোপাটি ফুল চল্লিশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন৷ আর শ্রমটা যেহেতু পারিবারিক তাই লাভের মুখ দেখতে পান৷
মালার ব্যবসায়ী নিখিল বৈরাগী একটু বড় ব্যবসায়ী৷ বয়স ৫০ বছর৷ কৃষ্ণনগর, বাদকুল্লা থেকে তাঁর মালা আসে৷ ওখানকার ফুলের গুণগত মান বেশ ভালো৷
২০ পিস মালা উনি বিক্রি করেন ২৫-৩০০ টাকায়৷ দু-তিন হাত ফেরতা হলেও মালা বিক্রি করে বৈরাগী মশায়ের মাসে দশ-বারো হাজার টাকা লাভ থাকে৷ তাছাড়া নিজের অল্পস্বল্প জমি আছে৷ এক ছেলে, এক মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার, মোটামুটি চলে যায়৷
আফসার মণ্ডল (৪৪) ব্যবসায়ী৷ চারজনের পরিবার৷ নিজস্ব চার বিঘে জমিতে ফুল নয়, অন্য ফসলের চাষ করেন৷ রজনীগন্থা ৭০ টাকা কেজি দরে কিনে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন৷
নিজের জমিতে ফুলের চাষ করেছেন পাপাই (২৪)৷ এক বিঘে জমি৷ প্রতিদিন সার-ওষুধ-জল বাবদ পাঁচশো টাকা খরচ হয়৷ ধানচাষও আছে৷ সপ্তাহে এক কুইন্টাল ফুল পান৷ প্রতি দুদিন অন্তর ফুল তুলতে হয়৷ ফুলের কেজি ২৫ টাকা৷ কখনও তারও কম, ১৫ টাকা৷ আবার এমন সময় আসে যখন ফুল ফেলে দিতে হয়৷
অপরাজিতার চাষ করেন বিশ্বজিৎ দাস (৫০)৷ জমির পরিমাণ ১০ কাঠা৷ সপ্তাহে ১৫-২০ কেজি ফুল পান৷ দাম ১০০ টাকা প্রতি কেজি৷ তবে প্রতি কেজি ফুল তোলা বাবদ ২৫ টাকা মজুরি দিতে হয়৷ এছাড়া সার-ওষুধ ছাড়া নিয়মিত অন্য খরচ তো আছেই৷
বাজারের নিয়মিত ব্যবসায়ী জুলফিকার মণ্ডল৷ ৫২ বছর বয়স৷ তিনি আসেন নদিয়ার চাকদহ থেকে৷ প্রায় ৩৭ বছর ধরে তিনি রজনীগন্ধার ব্যবসা করে চলেছেন৷ তাঁর কথায়, মাসে আট-দশ হাজার টাকা লাভ থাকে৷ রজনীগন্ধার চাষ মূলত নদিয়ার চাকদহ রানাঘাট অঞ্চলে হয়ে থাকে৷ যেমন ঠাকুরনগরের চারপাশে হয় গাঁদা, দোপাটির চাষ৷
তিনি ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে নিজের বিঘেখানেক জমিতে ফুলের চাষও করেন৷ এ বিঘেয় খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা৷ সার-ওষুধ-জল ছাড়াও জমিতে ঘাস পরিষ্কার বাবদ এই খরচ হয়৷ তিনি জানালেন, ঠাকুরনগরের এই বিশাল ফুলের বাজারের ব্যবসায়ীদের বাজার কমিটিকে প্রতিদিন ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বসার জায়গা বাবদ দিতে হয়৷ তবে কোনও রাজনৈতিক দলের চাপ নেই৷
তিনি জানালেন, ঠাকুরনগর বাজারে প্রায় পাঁচশোর বেশি লোক বসেন চাষি এবং ব্যবসায়ী মিলিয়ে৷ তাঁরা এই বাজার জমিয়ে রেখেছেন৷ সম্ভবত কলকাতার মল্লিকঘাটের পরে এটাই কাঠেপিঠের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার৷
এই বাজারের মালিক সঞ্জীত বিশ্বাস৷ বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে৷ এখানে বাজারটির ছটি ভাগ আছে৷ কোনও কোনও ভাগে ২০০-৩০০ জনও বসেন৷ বাজার চালু থাকে বিকেল তিনটে থেকে সাড়ে তিনটে অবধি৷
বাজারে জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন৷ মোট ৩৭ জনের অংশীদারিত্বে এই বাজার চলছে৷ উল্লেখ করার মতো নাম— পার্থপ্রতিম বিশ্বাস, প্রদীপ মজুমদার৷ এঁদের অনেকে বংশপরম্পরায় পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত৷ এঁদের মতে, এই বাজারের ব্যবসায়ীদের অনেক লড়াই করে, বেঁচে থাকতে হয়৷ ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই বিপিএল তালিকাভুক্ত৷ আবার বড় অংশটাই মহিলা— প্রায় সত্তর শতাংশ৷ তবে বেশিরভাগই বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফুল নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন৷ লাভের অঙ্ক তাই সহজেই অনুমেয়৷ মহিলাদের অনেকেও তাই বললেন৷ আরও জানালেন, এই বাজারকে ঘিরে প্রায় দশ হাজার চাষি এবং ছোট ব্যবসায়ী রয়েছেন৷ চাষের জমিও প্রায় হাজার বিঘে৷ ঠাকুরনগরের বাইরে ধানতলা, কৃষ্ণনগর ছাড়াও মালিদা, নোয়াপাড়া, চাঁদা, সুজাপুর প্রভৃতি জায়গা থেকেও ফুল আসে৷ করোনাকালে লকডাউনের সময় চাষাবাদ ও ব্যবসা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ এখন অনেকটাই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে বলে তাঁরা জানালেন৷
কোলাঘাট বাজার :
ফুলের চাষ এবং বাজারজাতকরণে কোলাঘাট বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে৷ চাষের ক্ষেত্রে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া অঞ্চলে বিবিধ ফুলের চাষ দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে৷ এছাড়া হাওড়ার অনেক জায়গাতেও ফুলের চাষ হয়৷ আর বাজারটি কোলাঘাট স্টেশন সংলগ্ন একটি মাঠে বসে এবং জায়গাটি রেলেরই সম্পত্তি৷ কোনও স্থায়ী দোকানপাট সেভাবে গড়ে ওঠেনি যাতে করে এটিকে একটি বাজার বলা যায়৷ হাটের চেহারাই বলা চলে৷ যদিও প্রতিদিনই ফুলের বাজার বসে৷ চাষি এবং ব্যবসায়ীরা জমায়েত হন৷ বেচাকেনাও বেশ ভালো হয়৷ উল্লেখ্য যে এই বাজারে জড়ো হওয়া ফুলের একটা বড় অংশই আবার মল্লিকঘাটে চলে যায়৷ অনেক চাষিও সরাসরি তাঁদের পসরা নিয়ে মল্লিকঘাটে হাজির হন৷ সকাল থেকেই বাজার বসে যায় আর দুপুর একটা-দেড়টার মধ্যে মোটামুটি সাঙ্গ হয়৷
মে মাসের চার তারিখে (৪.৫.২৩) এই সমীক্ষকেরা তাঁদের বেশ কিছুজনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন৷ চাষি এবং ব্যবসায়ী দুই গোত্রের লোকজনেরই সঙ্গে৷ যেমন চাষি জয়দেব বেরা৷ পাঁশকুড়া থানার দক্ষিণ ময়নাডাল গ্রামের বাসিন্দা তিনি ৫৬ ডেসিমেল জায়গায় গোলাপ চাষ করেন৷ ১০০ পিস গোপালের দাম ২০০ টাকা৷ ৪ঠা মে তাঁর মোট বিক্রি চার হাজার টাকা৷ বিয়ের সিজনে চাহিদা বেশি থাকে৷ তখন দাম আরও বাড়ে৷
আরেক চাষি মলিন কুমার পাত্র (৪০)৷ ১২ বছর ধরে চাষ এবং ব্যবসা, দুয়ের সঙ্গেই তিনি যুক্ত৷ ১০ কাঠা জমিতে গাঁদার চাষ করেন৷ চাষ এবং ব্যবসা মিলিয়ে তাঁর মাসে হাজার বারো টাকা আয় হয়৷ বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে ছ’জনের সংসার৷
গাঁদা ছাড়া পদ্মফুল, মুরগাই প্রভৃতি তিনি বিক্রি করেন৷ তবে গোলাপের চাহিদা বেশি বলে মুরগাইয়ের কদর এবং দাম দুইই কম থাকে৷ তবে বিয়ের মাসে তারও দাম চড়া থাকে৷ ব্যবসায়ী দিলীপ ভৌমিক (৩৮)৷ ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন৷ বালিচক, শ্যামচক, রাধামণি থেকে রজনীগন্থা নিয়ে এসে মালা গেঁথে বিক্রি করেন৷ তাছাড়া আছে ব্যাঙ্গালোর গোলাপ, যা বেশ ছোট সাইজের৷ ব্যাঙ্গালোর থেকে আনার খরচও যথেষ্ট বেশি৷ তবে তারও বাজার আছে৷ বিকোয় একশো পিস ২৫০ টাকায়৷ তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ছোট সংসার৷
অনেকেই পদ্ম, মুরগাই, বেলি ফুল বিক্রি করছেন৷ পদ্মফুল প্রতি পিস তিন টাকা, মুরগাই পঞ্চাশ টাকা বান্ডিল, বেলিফুল ৩৫০ টাকা কিলো৷ সাধারণ সময়ে ১ কেজি ১২০ টাকা৷
কথা হল ব্যবসায়ী গোপাল পাল (৬৫)-এর সঙ্গে৷ কন্যাডিহির বাসিন্দা তিনি৷ গত ৫০ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত৷ তাঁর নিজের চাষের জমি নেই৷ গাঁদা, রজনীগন্ধার মালা গেঁথে বিক্রি করেন৷ প্রতিটি গাঁদার মালা ১৫ টাকা৷ মাসে আয় মোটামুটিভাবে ৫০০০-৬০০০ টাকা৷ পাঁচজনের সংসার৷ অনুমান করতে পারা যায় সংহারের হাল৷
এখানেই দেখা হল উত্তর বালার সঙ্গে৷ বয়স ৫০ বছর৷ ব্যবসায়ী৷ পদ্মফুল কিনে বিক্রি করেন৷ দু’তিন হাজার টাকা মাসে আয়৷ নিজের ১৫ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেন৷ ছ’জনের সংসার তাঁর৷
মিহির বর্মন (৫৩)৷ ব্যবসায়ী, ফুল কিনে বিক্রি করেন৷ কোলাঘাটের গোলাপই তাঁর সামগ্রী৷ ১০০ পিস ২৫০ টাকা৷ মাসে আয় ১০ হাজার টাকা৷ তাঁর নিজের জমি রয়েছে৷ চার কাঠা, তাতে গাঁদার চাষ করেন৷ তাঁর সংসারের সদস্য চারজন৷
ব্যবসায়ী সিদ্ধেশ্বর বেরা (৪৯)৷ হলুদ এবং সাদা গোলাপের ব্যবসা করেন৷ ১০০ পিস ১২০ টাকা৷ নিজের ৭ কাঠা জমি আছে৷ তাতে ধান চাষ হয়৷ প্রতি মাসে আয় ৬০০০-৭০০০ টাকা৷ ঘোড়াঘাটায় বাড়ি৷ জেলা হাওড়া৷ তিনজনের সংসার৷ তিনি জানালেন কোলাঘাট বাজারের ব্যবসায়ীর সংখ্যা ২০০০ আর ফুলচাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন ১০ হাজার মানুষ৷
ব্যবসায়ী হিসেবে নতুন যোগ দিয়েছেন সুরজিৎ মাইতি (২৫)৷ নিজের দেড় বিঘা জমিতে অন্য ফসলের চাষ করেন৷ দোপাটি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন৷ তাঁর পাঁচজনের সংসার৷
এভাবেই আছেন নির্মল মাইতি৷ ব্যবসায়ী৷ হাজার দশেক টাকা যাঁর মাসে নিট আয়৷ আছেন রাধেশ্যাম প্রামাণিক (৫৬)৷ খাড়িমার ব্যবসায়ী তিনি৷ এই ফুলহাটের অন্যতম পত্তনীদারও৷ গুলবাহারের ব্যবসা করেন৷
খাড়িমা থেকে আসা আরেক পুরনো ব্যবসায়ী দুলাল গৌড়ী৷ ৬৯ বছর বয়স৷ তাঁর চাষের জমি এক একর৷ তিনি গুলবাহারের চাষ করেন৷ সঙ্গে ধানচাষও করেন৷ এছাড়া গাঁদা, জুঁই, বেলিফুল ছাড়া বিভিন্ন সিজনের ফুলের চাষও করে থাকেন৷ মজুরি বাবদ খরচ, ফুল তোলার খরচ প্রতি মাসে থাকে৷ তাছাড়া সার, ওষুধতো আছেই৷ সব মিলিয়ে মাসে দশ হাজার টাকা মোট খরচ৷ এসব বাদ দিয়ে মাসে তাঁর নিট আয় দশ হাজার টাকা৷
দুই মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন৷ তবে জামাইরা কেউ এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন৷ তাঁর গ্রামের ১৮-২০ জন ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত, ২৫-৩০ জন কোলাঘাট তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে কাজ করেন৷ বাকিরা বেশিরভাগই লেবারের কাজ করেন৷ কেউ কেউ আবার দূরে সোনার দোকানে কারিগর হিসেবে চলে গেছেন৷
বাজারের কিছু সমস্যার কথা তিনি বললেন৷ যেমন এখানকার মার্কেট বাড়ানো দরকার৷ কিন্ত্ত যাঁদের বাড়ানোর ক্ষমতা আছে, সেই রেল এই ব্যাপারে উদাসীন৷ তবে প্রতিদিন চাষিদের কাছ থেকে দশ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২০ টাকা খাজনা আদায়ে ঘাটতি নেই৷ এর ফলে ছোট চাষিরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ মার্কেটও সেই এক অবস্থায় পড়ে আছে৷ বস্ত্তত দু-একটি গুমটি ঘর ছাড়া এই ‘মার্কেটের’ অসংগঠিত অবস্থা চোখে প.ড়বেই৷ এত মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত৷ প্রশাসনিক কোনও হস্তক্ষেপও নেই এর উন্নতিবিধানে৷
মল্লিকঘাট বাজার :
বস্ত্তত ফুল চাষ এবং এর ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ কী মাত্রায় আছে এবং এর বাজার কী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে কিংবা এর একদা বহুল নিনাদিত রফতানি বাণিজ্য বর্তমানে কী অবস্থায় বিরাজ করছে— এ সবেরই অন্বেষণই এই পর্যবেক্ষকদের এই বাজারের কাছেও টেনে নিয়ে আসেয় ঠাকুরনগর এবং কোলাঘাটের বাজার যে ধারণা উপস্থিত করেছে, মল্লিকঘাটের বাজার ব্যাপ্তিতে সবাইকেই ছাড়িয়ে যায়৷
ফুল চাষের বড় বড় অঞ্চল যেমন রাণাঘাট, পাঁশকুড়া, কৃষ্ণনগর আদি এলাকা থেকে ফুলচাষি এবং ব্যবসায়ী ভালো মানের এবং অধিক পরিমাণে ফুল এই বাজারে হাজির করেন৷ সব ফুল এখানেই যে খুচরো বিক্রি হয় তা নয়৷ বরঞ্চ এর পাইকারি ব্যবসাটাই বড় দিক৷ বস্ত্তত পাড়.ায় পাড়ায় কিংবা ছোট বাজারগুলিতে যে ফুলের সমারোহ লক্ষ্য করা যায় তার অধিকাংশই মল্লিকঘাটের এই বাজার থেকেই যায়৷ সকালবেলার বাসে-ট্রামে মহিলারা যে ফুলের বোঁচকা নিয়ে নিজের নিজের বাজারের দিকে যান তা তো এই বাজার থেকেই সংগ্রহ করা৷ আর কিছু আসে ঠাকুরনগরের বাজার থেকে৷ দক্ষিণ কলকাতা, উল্টোডাঙ্গা, সল্টলেক আদি শহরতলির বাজারগুলিতে ওখান থেকেও ফুল আসে৷
হাওড়া ব্রিজের ঠিক নীচেই নদীর পূর্বপাড়ে মল্লিকঘাটের এই বাজার অনেকটা জায়গা জুড়ে এবং কয়েক সারিতে বিন্যস্ত৷ বেশিরভাগটাই খোলা জায়গার হলেও ভেতরের দিকে স্থায়ী দোকানও অনেক৷ বাইরে তো বন্দর থানার পাশে রাস্তার উপরেই কত না দোকান! সরাসরি চাষিরা যেমন বসেন তেমনি অনেকের দু’পুরুষের দোকানও আছে৷ সকালের দিকে বাজার শুরুর সময়ে রাস্তায় তখন নানান ফুলের মেলা৷ কারা এসেছেন এই মেলায়?
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩’র সেই সকালে এই সমীক্ষকদের প্রথমেই দেখা হল ফুলচাষি দশরথ মণ্ডলের সঙ্গে৷ বয়স ২৬৷ কোলাঘাট থেকে এসে বসেছেন৷ তাঁর পসরা গাঁদা রজনীগন্ধা নিয়ে৷ গাঁদার মালাও বিক্রি করছেন৷ ফুল ৬০ টাকা কেজি৷ নিজের চাষের ফুলের সঙ্গে কিনে আনা কিছু মালাও তিনি বিক্রি করছেন৷ প্রতিদিনের লাভের কথায় জানালেন, তিনশোর বেশি থাকে তাঁর আর পুজোর সময় মালা দ্বিগুণ দামে বিকোয়৷ লাভও সেই মতো বেড়ে যায়৷
প্রায় সমান অভিজ্ঞতা শাজামাল শেখের৷ বয়স ২৪৷ ঘুঁটিয়ারি শরিফ থেকে এসে এখানে ব্যবসা করছেন৷ তবে দোকান তাঁর মায়ের৷ মা-ই এখানে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এখানেই ফুল কিনে নিয়ে বসে পড়েন৷ গাঁদা, জবা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, আকন্দ, দোপাটির মালা, ডালিয়া—কী নেই তাঁর দোকানে৷
বিয়ের বড় মালা ৮০-১০০ টাকা, গোলাপ ২৫ পিসের বান্ডিল ৬০ টাকা প্রতিটি, গাঁদার মালা ১৫-২০ টাকা প্রতিটি, জবার মালা ১০ টাকা প্রতিটি, রজনীগন্ধার মালা ১৫ টাকা প্রতিটি, আকন্দর মালা ১০ টাকা প্রতিটি৷ ডালিয়ার গুচ্ছও আছে৷ তাঁর কাছে কোলাঘাটের ফুলই বেশি, রানাঘাটের ফুলও আসে৷ লাভ প্রতিদিন তিনশো থাকেই৷
রানাঘাট থেকে চার চাকার গাড়িতে করে অনেক ব্যবসায়ী আসেন৷ সেইরকমই একজন ক্ষুদিরাম মোদক (৫১)৷ ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন৷ গাঁদার ব্যবসা করেন৷ ২০ পিস মালা ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন৷ অর্থাৎ ১৫ টাকা প্রতি পিস গড়ে৷
চিরঞ্জিৎ মণ্ডল (২৩) কোলাঘাট থেকে আসেন৷ ৪-৫ বছর হল ব্যবসা করছেন৷ তাঁদের নিজেদের চাষের জমি আছে৷ বাবা চাষ করেন৷ বাড়ির লোকেই ফুল তোলেন৷ তবে মালা গাঁথার জন্য লোক থাকে৷ ২০ পিস মালা গাঁথার জন্য ১২ টাকা মজুরি৷ এই বাজারে ওই মালা বিক্রি হয় ৩৩০ টাকায়৷ তাঁর মতে কোলাঘাট এবং রানাঘাটের ফুলের পার্থক্য আছে৷ আকার এবং গুণমান দুদিক থেকে৷ এমনকী রঙের ঔজ্জল্যেও তফাত নজরে পড়বে৷ স্পষ্টতই কোলাঘাটের ফুল উন্নততর— তাঁর মত৷
খরচ বাদ দিয়ে চাষ ও ব্যবসায় প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ থাকে৷ তবে বাজারের ওঠা-নামা তো আছেই৷ শচীন মাইতি (৪৭) কোলাঘাটের চাষি এবং ব্যবসায়ী৷ নিজের দশ কাটা জমিতে চাষ করেন৷ প্রতি কাঠায় ২৫০০-৩০০০ টাকার উৎপাদন৷ ঠাকুরনগরের লাল গাঁদা বিক্রি করেন ৮০ টাকা কেজি দরে৷ ডালিয়া ১০ পিসের বান্ডিল ২০ টাকায়৷ অপরাজিতার মালা ৮-১০ টাকা প্রতি পিস৷ দোপাটি ২০ টাকা কিলো৷
ফুলের বাজারে এযাবৎ যে সমস্ত ব্যবসায়ীর সঙ্গে এই সমীক্ষকদের কথাবার্তা হয়েছে তাঁরা প্রায় সকলেই বাঙালি৷ চাষি এবং ব্যবসায়ী দু’বিভাগেই৷ তবে মল্লিকঘাটের এই বাজারে বেশ কিছু অবাঙালি ব্যবসায়ীরও সাক্ষাৎ পাওয়া গেল৷ তাঁরা মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অর্ডার মাফিক ফুল সরবরাহ করে থাকেন৷ সেইরকম এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হল৷ রাজন রাজভর৷ উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের বাসিন্দা৷ তাঁর বাবা সন্ত্ত রাজভরেরই দোকান৷ সন্ত্ত রাজভর ৩৫ বছর হল তাঁর দোকান চালাচ্ছেন৷ অর্ডার পেলে আন্দামান সমেত অন্যত্রও পাঠান৷ বরফে প্যাক করে ফ্লাইটে পাঠান৷ মূলত কমিশনজীবী৷ গড়ে দৈনিক অয়া ৮০০-১০০০ টাকা৷
ফুলের রফতানি বাণিজ্য এই সমীক্ষার অন্যতম বিষয় ছিল৷ প্রচার তো ছিলই যে মল্লিকঘাট বাজার থেকেই সেই উদ্যোগ পরিচালিত হয়৷ বাস্তবে এই বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এই সমীক্ষকেরা কোনও ইতিবাচক তথ্য পাননি৷ রফতানির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ যা কিছু তথ্য পাওয়া গেল তা ব্যবসায়ী অর্ধেন্দু জানার কাছ থেকেই৷ অর্ধেন্দু জানা পঞ্চাশোর্ধ এবং দীর্ঘ বাইশ বছরের ব্যবসা তাঁর এবং তাঁর ভাইদের৷ বাজারের ভেতর একটি স্থায়ী দোকানও রয়েছে৷ নিউ মার্কেটেও দোকান আছে৷ যা বললেন তাতে রফতানির ব্যাপারটাই একটি অলীক ব্যাপার বলে প্রতিভাত হল৷ প্রথমত, এখানকার ফুলের গুণগত মানের প্রসঙ্গ৷
উনি বললেন যে, এখানকার ফুল গুণের দিক থেকে একেবারে নীচু মানের৷ ফলে রফতানিযোগ্যই নয়৷ দ্বিতীয়ত, কোনও এক সময়ে তাঁরা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে যে ফুল পাঠিয়েছিলেন তার দাম আর তাঁরা পাননি৷ আর রফতানি প্রসঙ্গে এক বিশিষ্ট প্রাক্তন সাংসদের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তাঁর কথা— নেতা-মন্ত্রীরা অনেক কথাই বলেন৷ আদপে এখান থেকে রফতানিই হয় না৷ আর পশ্চিমের কোনও দেশে তো নয়ই৷
উল্টে তিনি বললেন, তাঁদের ফুল আমদানি করতে হয়৷ দেশের ভেতরে ব্যাঙ্গালোর থেকে আসে ব্যাঙ্গালোর গোলাপ, সাইজে বেশ ছোট, গন্ধ নেই, দাম ২০ পিস ৩০০ টাকা৷ নিউইয়ার্স, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে এর দাম প্রতিটি ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়৷ দেশের বাইরে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর থেকে অর্কিড আমদানি করতে হয়৷ এজেন্টদের মাধ্যমে৷ এজেন্টরা চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোরের৷ অর্কিডের দাম ১০ পিস ২৬০ টাকা৷
অর্ধেন্দুর কথার প্রতিধ্বনি অন্য অনেক দোকান মালিকের কাছ থেকেই পাওয়া গেছে৷ তাছাড়া ওঁনার পাঁশকুড়ায় নিজস্ব জমিতে চাষও আছে৷ বাগানে জারবেরা এবং অর্কিডের চাষও হয়৷ কোয়ালিটি ফুল চাষের জন্য আইআইটি সার্টিফিকেট এবং গভর্নমেন্ট সার্টিফিকেট আছে বলেও দাবি করলেন৷ ছ’সাতজন লোক এখানেই দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকার মজুরিতে তাঁর দোকানের সঙ্গে যুক্ত৷ তাঁরা খাবারও পান৷ তাঁর মাসিক আয় ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ পর্যন্ত বলে জানালেন৷ সমীক্ষকদের উপস্থিতিতেই ফুলের প্যাকিং আসা-যাওয়া চলছে, দেখা গেল৷
বাজারের ভেতরে অনেক সাজানোগোছানো দোকান নজরে এল৷ তবে সকলেই যে অর্ডার সাপ্লাই করেন তা তাঁদের কথাবার্তায় এবং কাজের মাধ্যমে পরিষ্কার৷ এবং তার একটা বড় অংশ যে পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে যায় তা তাঁরা বললেন৷ এ ব্যাপারে রাজন রাজভরের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে৷
অর্থাৎ কিনা কালেভদ্রে কোন অর্ডার আসবে তাতে কোন ভাগ্যবান ব্যবসায়ী তাঁর অর্ডার সরবরাহ করবেন, এটাকে তো কোনও স্থায়ী বাজার বলা যাবে না৷ কিছু পুজোপার্বন, আবার অনুষ্ঠান দিয়ে তো আর ব্যাপক চাষ গড়ে উঠতে পারে না৷ তাই নির্ভর করতে হয় স্থানীয় বাজার যতটুকু আছে তার উপর৷ সেইভাবেই কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ফুলের চাষ গড়ে উঠছে৷ তবে তা একান্তই ক্ষুদ্রচাষি নির্ভর৷ পুঁজি বিনিয়োগের মাত্রা উল্লেখযোগ্য নয়, পুঁজি বিনিয়োগের মাত্রা অতীতেও বেশি ছিল না৷ ভবিষ্যতেও সেরকম কোনও সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না৷ তবুও এটা বাস্তব যে এই স্বল্প পুঁজি নির্ভর চাষের উপর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাঁদের জীবিকার জন্য নির্ভরশীল৷ সেভাবে কোনও উন্নতি প্রযুক্তি নেই৷ একান্তভাবে অভিজ্ঞতানির্ভর জ্ঞানের সাহায্যে তাঁরা গাঁদা-রজনীগন্ধা-গোলাপ-জবা-দোপাটির চাষ করেই চলেছেন কয়েক প্রজন্ম ধরে৷ দশ-বিশ হাজার টাকার উপার্জন দিয়ে কোনওরকমে বেঁচে থাকার এই প্রচেষ্টা কর্মহীনতার এই মরুভূমিতে হয়ত মরূদ্যান তৈরি করে৷ তবে যেটা সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় তা হল এর সঙ্গে জড়িত এই বিশাল সংখ্যক মানুষ একান্তভাবেই সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক শ্রেণির৷ আর তার এক বড় অংশই মহিলা৷ প্রশাসন তবু তাঁদের জীবনযাত্রার উন্নতি তথা এই চাষের উন্নতির জন্য কোনওভাবে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন এমনটা কোথাও পরিলক্ষিত হয়নি৷
বিশেষত কোভিডকালীন লকডাউনের সময়ে চাষ এবং বাজার দুইই যখন বন্ধ, তখনকার পরিস্থিতির বিপরীতে আজ যখন আবার তাঁরা তাঁদের পণ্য বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারছেন সেটাই নতুন করে বাঁচার একটা ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে বইকী৷ আর এখানেই বাংলার চাষের সার্বিক যে সংকট বর্তমান তার সঙ্গে ফুলচাষ এখন একাসনে বসেও হার-না-মানার কথা যেন চাষিদের কানে কানে জানিয়ে দিয়ে যায়৷