দিল্লি, ৫ এপ্রিল – জোট সঙ্গীদের নিয়ে আসন রফা এবং প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে বিজেপি-সহ অন্যান্য দলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে কংগ্রেস। কিন্তু ইস্তেহার প্রকাশের ক্ষেত্রে শাসকদল-সহ সবাইকে টেক্কা দিল শতাব্দী প্রাচীন এই দল। বিজেপিরও আগে ২০২৪ নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করল কংগ্রেস। এবার নির্বাচনে কংগ্রেসের মূল থিম ‘ন্যায়’। ইস্তেহারের নামকরণ হয়েছে ‘ন্যায়পত্র’। দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে ইস্তেহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি-সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা ।
কংগ্রেসের ইস্তেহারে ন্যায়বিচারের পাঁচটি স্তম্ভের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। মূলত জোর দেওয়া হয়েছে কাজ, সম্পদ এবং কল্যাণের উপর। পাশাপাশি ইস্তেহারে ফোকাসে রাখা হয়েছে বেকারত্ব ইস্যু।পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে ‘যুব ন্যায়’, ‘নারী ন্যায়’, ‘কৃষক ন্যায়’, ‘শ্রমিক ন্যায়’ এবং ‘সামাজিক অধিকারের ন্যায়’। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপালের কথায়, সারা দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর ইস্তেহারে নির্দিষ্ট বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ ন্যায়ের অধীনে মোট ২৫টি গ্যারান্টির কথা ইস্তেহারে বলেছে হাত শিবির। এই ২৫ গ্যারান্টির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল মোদি জমানায় চালু করা অস্থায়ী ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ কর্মসূচি। একে বাতিল করে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী নিয়োগ কর্মসূচি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বেকারদের ‘ন্যায়’ পাইয়ে দিতে ইস্তেহারে ৩০ লক্ষ সরকারি শূন্যপদে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। মহিলা সংরক্ষণ আইনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় হাত শিবির। এবার সরকারি চাকরি ক্ষেত্রেও মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে ইস্তেহারে। পাশাপাশি ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদহীন স্বাস্থ্যবিমা, মহিলাদের আর্থিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে কংগ্রেসের ইস্তেহারে।গরিব মেয়েদের বছরে ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কৃষকদের জন্য ফসলের ন্যূনতম সহায়কমূল্য নিশ্চিত করার আইনি অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষিবিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ মেনে পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে।
ইস্তাহারে রয়েছে, শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করার কথাও। সেই সঙ্গে ২৫ বছরের কমবয়সি স্নাতকদের জন্য এক বছরের জীবিকামুখী শিক্ষানবিশ হওয়ার সুযোগ দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকারের কথা। কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, ২৫ বছরের কমবয়সি স্নাতকদের জন্য এক বছরের ইন্টার্নশিপ, এবং ওই ইন্টার্নশিপ চলার সময় এক বছরে ১ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে বেকারদের। পাশাপাশি, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলে জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জাতীয় সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ নাগরিক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পেনশনে কেন্দ্রীয় সরকারের অবদান মাসিক ২০০-৫০০ টাকা। ইস্তেহারে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি ক্ষমতায় এলে দল এই টাকার অঙ্কের পরিমাণ বাড়িয়ে মাসে ১০০০ টাকা করবে। ক্ষমতায় এলে আগামী ১০ বছরে ২৩ কোটি মানুষের গরিবি থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে জাতিগত জনগণনাকে ইস্যু করতে চাইছে হাত শিবির। ইস্তেহারেও সেই প্রতিশ্রুতি থাকছে। কংগ্রেস বলছে, ক্ষমতায় ফিরলে জাতিগত জনগণনার ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ এবং ১০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণ চালু করা হবে। কংগ্রেসের ইস্তেহারে সংখ্যালঘুদেরও পোশাক, খাবার, ভাষা এবং ব্যক্তিগত আইন পছন্দের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।