ক্ষমতায় এলে বছরে ২ কোটি করে বেকারদের চাকরি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সালে ভোটের আগে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে এই প্রচার করেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলেন৷ তারপরই ভুলে গেলেন প্রতিশ্রুতির কথা৷ পরের ভোটে জিতেও দিব্যি দশ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন৷ হিসাব মতো এতদিনে ২০ কোটি বেকারের চাকরি হওয়ার কথা৷ সরকারি তথ্য বলছে, দশ বছরে এক কোটি চাকরিও দিতে পারেনি মোদি সরকার৷ বদলে এই সময়কালে কর্মরত ১২ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন৷ বছর বছর হু হু করে বেড়েছে বেকারের সংখ্যা৷ প্রতি বছর এক থেকে দেড় কোটি যুবক-যুবতী নতুন করে শ্রমের বাজারে যোগ দেয়৷ তাই দেশ থেকে বেকারি নির্মূল করতে হলে বা সব বেকারকে কাজ দিতে হলে প্রতি বছর সমপরিমাণ কাজ তৈরি করতে হয়৷ পাশাপাশি পুরনো বেকারদের জন্য দরকার অতিরিক্ত কর্মসংস্থান৷ তাই মোদির প্রতিশ্রুতি মতো যদি বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করা হত তা হলে এতদিনে বেকারির সমস্যা মোটামুটি সমাধানের সুযোগ তৈরি হত৷
কিন্ত্ত মোদি সরকার কাজ সৃষ্টির পথে হাঁটেনি৷ বরং কাজ ধ্বংসের পথই বেছে নিয়েছে৷ ফলে আজ দেশের বেকারের বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে৷ সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার এখন কার্যত মোদির ভারতেই৷ মোদিজি অনেক প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্ত্ত কোনওটাই রক্ষা করেন না৷ বন্ধুদের সঙ্গে নয়, প্রতারণা করেন মানুষের সঙ্গে৷ দশ বছর পর আবার একটি ভোটের মুখে মোদি সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি আনন্ত নাগেশ্বরণ রাখঢাক না করে অকপটে জানিয়ে দিয়েছেন, বেকার সমস্যার সমাধান অর্থাৎ বেকারদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সরকারের কাজ নয়৷ অর্থাৎ মোদির উপদেষ্টা বলে দিলেন দশ বছর আগে বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা আসলে মিথ্যা কথা ছিল৷ মোদি সরকারের কর্মসূচিতে কর্মসংস্থানকে কখনই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা সরকারের অ্যাজেন্ডাতেই নেই৷
মোদি সরকারের গৃহীত নীতি হল কর্পোরেট পুঁজির সেবা করা৷ অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ কিছু কর্পোরেটের একচেটিয়া স্বার্থে অর্থনীতির যাবতীয় পরিকল্পনা সাজানো হয়৷ কর্পোরেট মালিকদের সর্বোচ্চ মুনাফার কথা মাথায় থাকে বলে সাধারণ মানুষের কথা ভাবনায় থাকে না৷ বেকারদের জন্য কাজের কথা ভাবা হয় না৷ শ্রমখাতে ব্যয় সর্বনিম্ন করতে বিনিয়োগের চরিত্র হয়ে ওঠে পুঁজি নিবি.ড়৷ অর্থাৎ বিনিয়োগ হবে বেশি পুঁজি, লাভ হবে বেশি, কিন্ত্ত কর্মী লাগবে যৎসামান্য৷ তাতে বৃদ্ধির হার বড় করে দেখানো যাবে৷ অর্থনীতির আয়তন বাড়বে, বৃদ্ধির হার উচ্চ হবে কিন্ত্ত কর্মসংস্থান হবে না৷
কর্মসংস্থান হয় এমন একটি ক্ষেত্র হল বয়নশিল্প বা টেক্সটাইল৷ এখানে উৎপাদন কমে গিয়েছে ২০ শতাংশ৷ কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে উৎপাদন কমে গেছে ১৫ শতাংশ এই ‘ডিজিটাল’ দেশে৷ কৃষি এবং কৃষির সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্রগুলির বৃদ্ধির হার ২ শতাংশেরও কম৷ মোদি সরকার যথেষ্ট গর্ব করে দেশের অভূতপূর্ব আর্থিক বিকাশের কথা শুনিয়ে চলেছেন দেশবাসীকে৷ সদ্য প্রকাশিত বিশ্ব শ্রম সংস্থা ও ভারতের মানবোন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে প্রকাশ করেছে ভারতের ২০২৪ সালের কর্মসংস্থান রিপোর্ট৷ সেই রিপোর্টের সব তথ্য নেওয়া হয়েছে দেশের পরিসংখ্যান দফতর কর্তৃক প্রকাশিত পিরিয়ডিক লেবার সার্ভে রিপোর্ট থেকে এবং সরকারি পরিসংখ্যান থেকে৷ সেখানে উদ্বেগের সঙ্গে বলা হয়েছে, শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের হাতে কাজ নেই৷ দেশে মারাত্মক হারে বেড়েছে আর্থিক বৈষম্য৷ ওয়ার্ল্ড ইনিকু্যয়ালিটি ল্যাব রিপোর্ট বা বিশ্ব বৈষম্য পরিমাপের রিপোর্টে কিছুদিন আগেই বলা হয়েছে, দেশের ধনীতম মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের সম্পদের ২২.৬ শতাংশ ভাগ৷ দেশের ধনীতম ১০ শতাংশের হাতে রয়েছে সম্পদের ৫৭.৬ শতাংশ৷ মোদির ভারতে আর্থিক বিকাশ তো কয়েকজন কোটিপতির বিকাশ৷ বিকাশ তো তাঁদের যাঁরা নির্বাচনী বন্ড কিনে মোদি সরকারকে গদিতে রেখে দিয়েছে৷ কর্পোরেটদের বছর বছর কর মকুব করা তো দেশের সম্পদের একটা বড় অংশ দেশের আর্থিক উন্নতি থেকে সরিয়ে ফেলা৷ অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে আর্থিক বিকাশকে পিছিয়ে দেওয়া বা শ্লথ করার সবরকম চেষ্টা করে চলেছে মোদি সরকার৷ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার ‘বিকাশ’ হয় না, ‘বিকাশ’ হয় বৃহৎ পুঁজি ও মোদির কর্পোরেট বন্ধুদের৷