• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

জিতিয়ে আবার পাঠাতে হবে মহুয়াকে, জবাব দেবে জনতা: মমতা

জনতার গর্জন, বিজেপির বিসর্জন রথীন পালচৌধুরী: রবিবার নদিয়ার ধুবুলিয়ায় প্রথম নির্বাচনী জনসভা থেকেই প্রচারে ঝড় তুললেন মমতা৷ শুধু বিজেপি নয়, কংগ্রেস, সিপিএম এবং আইএসএফ-কেও এক হাত নিলেন৷ তাঁর বক্তব্য থেকে ক্যা, এনআরসি, একশো দিনের কাজ, লক্ষ্মীরভাণ্ডার কিছুই বাদ যায়নি৷ প্রথম নির্বাচনী জনসভা থেকেই মমতা অল আউট অ্যাটাকে গেলেন এবং পশ্চিমবঙ্গে কোনও ইন্ডিয়া জোট হয়নি, তৃণমূল একাই

জনতার গর্জন, বিজেপির বিসর্জন

রথীন পালচৌধুরী: রবিবার নদিয়ার ধুবুলিয়ায় প্রথম নির্বাচনী জনসভা থেকেই প্রচারে ঝড় তুললেন মমতা৷ শুধু বিজেপি নয়, কংগ্রেস, সিপিএম এবং আইএসএফ-কেও এক হাত নিলেন৷ তাঁর বক্তব্য থেকে ক্যা, এনআরসি, একশো দিনের কাজ, লক্ষ্মীরভাণ্ডার কিছুই বাদ যায়নি৷ প্রথম নির্বাচনী জনসভা থেকেই মমতা অল আউট অ্যাটাকে গেলেন এবং পশ্চিমবঙ্গে কোনও ইন্ডিয়া জোট হয়নি, তৃণমূল একাই চলবে একথা স্পষ্ট করলেন৷

এদিকে মিনিট চল্লিশের বক্তৃতায় তৃণমূল সুপ্রিমো পার্লামেন্টে মহুয়ার প্রশ্ন তোলা, পরিণামে তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার, তাঁর পিছনে ইডি-সিবিআইকে লাগিয়ে দেওয়া৷ মহুয়ার বৃদ্ধ বাবা-মাকেও তদন্তের মধ্যে এনে ফ্ল্যাটে তল্লাশির তীব্র সমালোচনা করেন৷ মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘বিজেপির নেতারা কেন ক্যা-তে আবেদন করছেন না৷’ মমতার আবেদন ‘কেউ ক্যা ফর্ম ফিলাপ করবেন না৷ করলে বেনাগরিক হয়ে যাবেন৷ এনআরসি-তে পড়ে যাবেন৷ ক্য মাথা, ল্যাজা এনআরসি৷ মোদি গ্যারান্টি জিরো, আমাদের গ্যারান্টিতে মানুষ হিরো৷ এখানে ক্যা, এনআরসি করতে দেব না৷ বিজেপির লক্ষ্য হিন্দু ভোট ভাঙা, মুসলিম ও মতুয়া ভোটে ভাঙন ধরানো৷ বারো বছরে পশ্চিমবঙ্গে অত্যাচার কারোর ওপর হয়নি৷ সংখ্যালঘুদের বিজেপি মানুষই মনে করে না৷’

ধুবুলিয়ায় বক্তব্যের শুরুতেই মমতা জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তৃণমূলকে কেন ভোট দেবেন, কেন বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না৷ ইন্ডিয়া জোট আমি তৈরি করেছি৷ নামটাও আমার দেওয়া৷ কিন্ত্ত বাংলায় কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম ও একটি মুসলিম সংগঠন একসঙ্গে চলছে৷ এখানে কোনও জোটই হয়নি অথচ ওরা ইন্ডিয়া জোটের নামে লড়ছে৷’ বিজেপিকে জুমলা পার্টি বলে আক্রমণ মমতার৷ মোদিকে ঝুটা বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার রাজ্যের৷ বিজেপি না হিন্দুদের, না মতুয়াদের—কারোর জন্যই কিছু করেনি৷ ওরা শুধু ঘোঁট করে—তোপ মমতার৷

বিজেপির এক নেতা বলছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে তিন হাজার টাকা করে দেবে৷ অভিষেকের ভাষায় মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘আগে একশো টাকা দিয়ে দেখাক বিজেপি৷ গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করেনি৷ ১লা এপ্রিল থেকে আটশো ওষুধের দাম বাড়ছে৷ ভাল থাকতে হলে তৃণমূল ছাড়া বিকল্প নেই৷’

ক’দিন আগে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ইডির উদ্ধার করা টাকা মানুষকে ফেরৎ দেওয়া হবে৷’ এদিন মমতা বক্তৃতায় বলেন, ‘কাউকে কাউকে ফোন করে বলছে, ‘ইডি-র টাকা জনগণকে ফেরৎ দেব৷’ আর সেই ফোন বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে৷ পেগাসাসের দরকার নেই৷ নিজেরাই পেগাসাস করছে৷’ মমতার প্রশ্ন, ‘বছরে দু’কোটি চাকরি দেব বলেছিল৷ কাউকে দিয়েছে? বছরে পনের লক্ষ টাকা দেব বলেছিল৷ দিয়েছে?’ কৃষ্ণনগরে বিজেপির প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে মমতা রাজপরিবারের ইতিহাস তুলে ধরেন৷ এখানে যিনি বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁকে বলা হচ্ছে রাজমাতা৷ যাঁরা যাঁরা রাজা আছেন রাজপ্রসাদে গিয়ে থাকুন৷ মোদিবাবু কি ইতিহাস ভুলে গেলেন৷ এই পরিবার সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ক্লাইভের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন৷ বিজেপি একটা রাজনৈতিক দল৷ প্রার্থী খঁুজে পায় না৷ শুধু ইডি-সিবিআই করে৷ মেধাশ্রী, কন্যাশ্রী, একশো দিনের কাজের টাকা দেয়নি—মুখে বড় বড় কথা৷ আমি এখানে অন্য নামে পঞ্চাশ দিনের কাজ শুরু করেছি৷ কেউ চাইলে ষাট দিনও করতে পারেন৷ আটাশ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে আছে৷ ক’দিন আগে ওড়িশা থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এলাম৷ বিজেপি অত্যাচার করছিল৷’

সামনে রামনবমীর প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘ওরা রামনবমীতে দাঙ্গার চেষ্টা করবে৷ ওরা ইট মারলে আপনি কখনও পাটকেল মারবেন না৷ ওরা বলছে চারশো আসন পার হয়ে যাবে৷ আগে দু’শো আসন পার হোক৷ গো হারা হারবে বিজেপি৷ ভাঁওতাবাজ দলের নাম বিজেপি৷ বিজেপিকে বাংলা থেকে দেশ থেকে তাড়াতে হবে৷ দেশ আজকে ভাল নেই৷ আমার জেলা প্রেসিডেন্টদের ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দিচ্ছে৷ একটা নোটিশও সিপিএম-কংগ্রেসকে দিচ্ছে না৷ আমি চাই না—ওদের নোটিশ দিক৷’

বক্তৃতার শেষ লগ্নে মহুয়ার হাত ধরে জনতার উদ্দেশ্যে মমতার আবেদন, ‘কৃষ্ণনগরে মহুয়াকে জেতান, রানাঘাট সহ সব জায়গায় তৃণমূলকে জেতান৷’ মহুয়া জিতলে আমি ধুবুলিয়ায় এসে সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে যাব—এমন প্রতিশ্রুতি দিলেন মমতা৷ এদিন গুজরাট দাঙ্গায় বিলকিস বানুর ওপর অত্যাচার ও উত্তরপ্রদেশে হাথরসের ঘটনা উল্লেখ করে মমতা বিজেপিকে একটি দাঙ্গাবাজ পার্টি বলেন৷ তাঁর প্রত্যয়, কাউকে উদ্বাস্ত্ত হতে দেব না৷ কারওর গায়ে হাত দিতে দেব না৷’

পশ্চিমবঙ্গে সাত দফার নির্বাচন৷ এপ্রিলের ৪ এবং ৭ রাজ্যে আসছেন নরেন্দ্র মোদি৷ মমতার কংগ্রেস-সিপিএমকে নিশানা প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট করতে হবে৷ আজ দিল্লির রামলীলা ময়দানে ইন্ডিয়া জোটের সভায় মমতা যাওয়ার সাহস পেলেন না৷’ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ বলেন, ‘সনিয়া গান্ধি অসুস্থ শরীর নিয়ে গেলেন৷ এখানকার পিসি-ভাইপো যাওয়ার সাহস দেখাতে পারল না৷ আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করছি৷’

কৃষ্ণনগর দিয়েই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে জেতানোর আবেদন জানানোর পাশাপাশি স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই তুমুল আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপিকে৷ তৃণমূল সুপ্রিমোর রোষের মুখে পডে়ছে বাম-কংগ্রেসও৷ এছাড়াও মতুয়াদের মন পেতেও তৃণমূলনেত্রীর দরাজ ভাষণ নজর কেডে়ছে রাজনৈতিক মহলের৷

রবিবার কৃষ্ণনগরের ধুবুলিয়া মাঠে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে নির্বাচনী সভায় স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই ঝাঝাঁলো আক্রমণ শানালেন বিরোধীদের৷ বাংলা তথা দেশ থেকে বিজেপিকে তাড়ানোর অঙ্গীকার তৃণমূলনেত্রীর৷ সেই সঙ্গে লোকসভা ভোটে দলের ফল ভালো হলেই মিষ্টি খাওয়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷