• facebook
  • twitter
Thursday, 21 November, 2024

ভাবমূর্তি তলানিতে

জার্মানি, আমেরিকার পর এবার রাষ্ট্রসংঘ৷ ভারতের নরেন্দ্র মোদির ‘গণতন্ত্র’ আরও একবার কড়া হুঁশিয়ারির মুখে৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মুখপাত্র স্তেফান জুয়ারিক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ‘ভারতে নির্বাচন হচ্ছে৷ দেখতে হবে, সেই সময় যাতে সকলের অধিকার সুরক্ষিত থাকে৷ রাজনীতি এবং নাগরিক সংগঠনের সকলের গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত থাকাই কাম্য৷ সুনিশ্চিত করতে হবে, ভয়ের আবহে যেন ভোটগ্রহণ না হয়৷ প্রত্যেকে যেন স্বাধীন

জার্মানি, আমেরিকার পর এবার রাষ্ট্রসংঘ৷ ভারতের নরেন্দ্র মোদির ‘গণতন্ত্র’ আরও একবার কড়া হুঁশিয়ারির মুখে৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মুখপাত্র স্তেফান জুয়ারিক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ‘ভারতে নির্বাচন হচ্ছে৷ দেখতে হবে, সেই সময় যাতে সকলের অধিকার সুরক্ষিত থাকে৷ রাজনীতি এবং নাগরিক সংগঠনের সকলের গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত থাকাই কাম্য৷ সুনিশ্চিত করতে হবে, ভয়ের আবহে যেন ভোটগ্রহণ না হয়৷ প্রত্যেকে যেন স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে ভোট দিতে পারে৷’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি এবং কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রসংঘের মুখপাত্র এই হুঁশিয়ারি দেন৷

যদিও জার্মানি ও আমেরিকার বিরূপ সমালোচনাকে ‘অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত সরকার৷ কিন্ত্ত আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন রাষ্ট্রসংঘের বিরুদ্ধে এখন কী বলবে মোদি সরকার৷ রাষ্ট্রসংঘ সাধারণত এতটা চড়া সুরে আক্রমণে যায় না৷ বরং বলে থাকে, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা মন্তব্য করবে না৷ ২০২৪ সালেই তার ব্যতিক্রম ঘটল৷

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হেনরি জন টেম্পল বিদেশনীতি প্রসঙ্গে একটি নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন উনিশ শতকের গোড়ার দিকে৷ তিনি বলেছিলেন, বিদেশনীতিতে স্থায়ী বন্ধু বলে কিছু হয় না৷ আবার কোনও স্থায়ী শত্রুও হয় না৷ বিদেশনীতিতে একমাত্র স্থায়ী হল স্বার্থ৷ তাঁর এই ব্যাখ্যা আজও আন্তর্জাতিক মহলে বিদেশনীতির শেষ কথা৷

নরেন্দ্র মোদি বিদেশ সফরে গিয়ে কখনও সেখানকার রাষ্ট্রনায়ক ও তাঁর পরিবারকে ব্যক্তিগত উপহার দিয়েছেন৷ কখনও বারাক ওবামাকে ডাক নামে সম্বোধন করেছেন৷ আবার কখনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার জন্য সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক সম্মেলন মঞ্চকে ব্যক্তিগত প্রচারে ব্যবহার করে গত ১০ বছরে বারে বারে প্রোটোকল ভেঙেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷ ভেবেছিলেন, বিদেশনীতিতে তাঁর সরকার চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে৷ কিন্ত্ত দ্বিতীয় মোদি সরকারের অন্তিম পর্বে এসে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাঁর৷ পশ্চিমী দুনিয়া থেকে একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছেন মোদি৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি, কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ, অথবা বিরোধী তথা সংবাদমাধ্যমের বাক্-স্বাধীনতার প্রশ্নে বারবার মোদি সরকারকে আক্রমণ করে চলেছে বিদেশি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংগঠন৷

এর পাশাপাশি মোদির অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা আমেরিকার ‘দ্য ইকনমিস্ট’৷ এই পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় একটি নিবন্ধের শিরোনামে ভারতকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে৷ ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘নরেন্দ্র মোদি স্বৈরাচারী এবং একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন৷ হয়তো তৃতীয়বারের জন্য সরকারেও আসতে পারেন মোদি৷ আর সেক্ষেত্রে ভারতের গণতন্ত্র আরও অনেকটা অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাবে৷’ নিবন্ধটির লেখিকা যামিনী আইয়ার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের কন্যা৷ বিখ্যাত সমীক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ’-এর প্রেসিডেন্ট হলেন যামিনী৷ তবে ওই নিবন্ধ প্রকাশের পর তিনি হঠাৎ ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন৷ এর কারণ অবশ্য জানা যায়নি৷ তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ‘ইকনমিস্ট’-এর মতো সংবাদ-সাময়িকী মোদি-বিরোধী এমন একটি সমালোচনামূলক লেখা কেন প্রকাশ করল! আন্তর্জাতিকস্তরে মোদির ভাবমূতি‘ যে তলানিতে পৌঁছেছে, এটাও তারই একটি প্রমাণ৷