• facebook
  • twitter
Sunday, 24 November, 2024

পুরমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী

নিজস্ব প্রতিনিধি— ববির বিধানসভা এলাকা গার্ডেনরিচে ভেঙ্গে পড়ল পাঁচতলা বাডি়৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা৷ ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ গার্ডেনরিচ এলাকা মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত৷ তিনি ওই এলাকার বিধায়ক৷ তাঁর বিধানসভা এলাকায়, তাঁর নাকের ডগা দিয়ে পুরসভার অনুমোদন ছাড়া বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, আর সেই খবর বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম জানেন না, এ

নিজস্ব প্রতিনিধি— ববির বিধানসভা এলাকা গার্ডেনরিচে ভেঙ্গে পড়ল পাঁচতলা বাডি়৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা৷ ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ গার্ডেনরিচ এলাকা মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত৷ তিনি ওই এলাকার বিধায়ক৷ তাঁর বিধানসভা এলাকায়, তাঁর নাকের ডগা দিয়ে পুরসভার অনুমোদন ছাড়া বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, আর সেই খবর বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম জানেন না, এ কথা মানতে নারাজ শুভেন্দু অধিকারী৷ সোমবার তিনি টুইটার হ্যান্ডেলের পোস্ট করে, এই বিষয়ে চারটি বিষয়ের উপর প্রশ্ন তুলেছেন৷ তিনি পুরমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ এমনকি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তিনি একাধিক অভিযোগ তুলেছেন৷

সেই সবের অবশ্য পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র শান্তনু সেন৷ তাঁর বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ এবং সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন৷ তাই এ বিষয়ে শুভেন্দুর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই৷ রবিবার রাতেই শুভেন্দু গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে পোস্ট করেছিলেন৷ সোমবার সকালেও তিনি আরও একটি পোস্ট করেন৷ যাতে তিনি লিখেছেন, ” গার্ডেনরিচে পাঁচ তলা বাডি় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পডে়ছে৷ ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধার এবং আহতদের চিকিৎসার ওপরেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত৷ কিন্ত্ত এই ঘটনা বেশকিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ প্রথমত, বাম সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করে তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে কলকাতা পুরসভা এলাকার মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি জলাজমি বেআইনি ভাবে ভরাট করা হয়েছে৷ স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ এবং তৃণমূল নেতাদের মদতেই এই বেআইনি কাজগুলি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়, কারণ কোনও ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে বাধা আসেনি৷ বর্তমানে শুধু গার্ডেনরিচেই বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা ৮০০ র বেশি৷

এলাকাটি ফিরহাদের ‘দুর্গ’৷ ওঁর এলাকায় ওঁর নাকের ডগা দিয়ে এই বেআইনি কাজ হচ্ছে আর উনি কিছু জানেন না, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? ” শুভেন্দুর কটাক্ষ, দোষী নিজেই রক্ষকের ছদ্মবেশে উদ্ধার কাজে সামিল হয়েছেন৷ বিরোধী দলনেতা দ্বিতীয় প্রশ্ন, গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামস ইকবালকে নিয়ে৷ তিনি এই বিষয়ে লিখেছেন, “ভেঙ্গে পড়া বহু তলের প্রোমোটারের পাশাপাশি এলাকার কাউন্সিলরকেও গ্রেফতার করা উচিত৷ ২০২১ সালের পুরসভা নির্বাচনে তিনি ৯৮.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন৷ যা কলকাতা পুরসভার সর্বোচ্চ৷ বেআইনি নির্মাণের রাজা এই শামস ইকবাল৷ তিনি একবার অযাস্টন মার্টিন গাডি় নিয়ে পুরসভায় গিয়েছিলেন এবং শিরোনামে উঠে এসেছিলেন৷ মানুষের জীবনের মূল্যে বিলাসবহুল জীবন গডে় তুলেছেন তিনি৷ সম্প্রতিদের গাডি়টি তিনি কিনেছেন তার বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকা৷ একজন সাধারণ কাউন্সিলের কিভাবে এত টাকা রোজকার করতে পারেন?”

যদিও শুভেন্দুর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন জানিয়েছেন, ” বিরোধী দলনেতাকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ কারণ মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং এলাকার মানুষ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন৷৷ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেআইনি কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সকলকে শাস্তি দেওয়া হবে৷ দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না৷ “এর আগে পুরমন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, “একজন কাউন্সিলরের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় কোনটা বৈধ নির্মাণ এবং কোনটা অবৈধ৷ এটা প্রশাসনের দায়িত্ব৷” গার্ডেনরিচের ঘটনা মৃতদের পরিবার কিছু পাঁচ লক্ষ এবং আহতদের ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম৷

এই ক্ষতিপূরণের অংক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু৷ ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছেন তিনি৷ শুভেন্দুর কথায়, ঘটনাটি ‘তৃণমূল নির্মিত বিপর্যয়’৷ শুভেন্দুর দাবী, মৃতদের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত ছিল৷ এছাড়াও শুভেন্দুর প্রশ্ন, আদর্শ আচরণবিধির মাঝে কিভাবে ফিরহাদ হাকিম ক্ষতিপূরণের অংক ঘোষণা করলেন? শুভেন্দুর কথায়, ” মেয়র হন বা মুখ্যমন্ত্রী, ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর আদর্শ আচরণবিধির মাঝে তাঁরা কেউই প্রকাশ্যে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করতে পারেন না৷ আমি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি৷ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিবর্তে প্রশাসনের কোনও অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে দিয়ে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করানো উচিত ছিল৷ ”

বিরোধী দলনেতার ক্ষতিপূরণের এই প্রশ্নের শান্তনু জানিয়েছেন, “যতটা প্রয়োজন বিবেচনা করেই ক্ষতিপূরণের অংক ঠিক করা হয়েছে৷ পরে দরকার হলে আরও সাহায্য করা হবে৷” আর আদর্শ আচরণ বিনি লঙ্ঘনের অভিযোগের ভিত্তিতে শান্তনুর মন্তব্য, “যেকোন বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আদর্শ আচরণবিধির ঊর্ধ্বে গিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হয়৷ এক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে৷ বিরোধী দলনেতা যা বলেছেন, তা ধরা হলে তো দেশের কোথাও এখন ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হলে প্রধানমন্ত্রীও সাহায্য করতে পারবেন না৷ বিজেপি সব সময় ভোটের রাজনীতি করে৷ এই ঘটনাকে তাই শুভেন্দু রাজনীতির সঙ্গে মেলাচ্ছেন৷ আসলে সঙ্গে নির্বাচনের যোগাযোগ নেই৷” গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও৷ তাঁর আক্রমণের কেন্দ্রে রয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবাল৷ এক্স হ্যান্ডলে শামস ইকবালের ছবি পোস্ট করে সুকান্ত লিখেছেন, “কলকাতা বন্দর এলাকায় ফিরহাদের হয়ে বেআইনি নির্মাণের কাজ দেখাশোনার করেন এই কাউন্সিলর৷”