• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বঙ্গ দর্পণ: বসন্তোৎসব

কবিতায় বাংলা ও রোম বাংলা ও রোমানিয়ান কবিতার মেলবন্ধনে একটি আবৃত্তিসন্ধ্যার আয়োজন আয়োজন করা হয়েছে আগামী একুশ মার্চ রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারেরে শিবানন্দ সভাঘরে৷ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ব্রততা পরম্পরা ও ইনস্টিটিউট অফ রাশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক স্টাডিজ৷ কলকাতায় রোমানিয়ান বাংলা কবিতার মেলবন্ধনের অনুষ্ঠান এই প্রথম৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রোমানিয়ার জাতীয় কবি মিহাই এমিনেস্কুর কবিতাকে কেন্দ্রে রেখে

কবিতায় বাংলা ও রোম
বাংলা ও রোমানিয়ান কবিতার মেলবন্ধনে একটি আবৃত্তিসন্ধ্যার আয়োজন আয়োজন করা হয়েছে আগামী একুশ মার্চ রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারেরে শিবানন্দ সভাঘরে৷ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ব্রততা পরম্পরা ও ইনস্টিটিউট অফ রাশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক স্টাডিজ৷ কলকাতায় রোমানিয়ান বাংলা কবিতার মেলবন্ধনের অনুষ্ঠান এই প্রথম৷

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রোমানিয়ার জাতীয় কবি মিহাই এমিনেস্কুর কবিতাকে কেন্দ্রে রেখে আবৃত্তি করা হবে কবিতা৷ এমিনেস্কুর কবিতা পড়া হবে রোমানিয়ান ভাষায় এবং বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদে৷ রোমানিয়ান ভাষায় কবিতা পড়বেন রোমানিয়ার লেখক ও সম্পাদক কারমেন কোমান৷ তিনি রাষ্ট্রসংঘের পুরস্কারসহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন৷

রোমানিয়াতে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিচর্চার একজন ধারক কারমেন৷ কীভাবে তিনি এই চর্চা শুরু করেন এবং এখন কীভাবে বাংলাভাষার প্রসার চালিয়ে যাচ্ছেনে সে বিষয়ে বলবেন কারমেন৷
অনুষ্ঠানটির ভাবনায় এবং ভাষ্যরচনায় বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক শ্রাবন্তী বসু৷ বাংলা আবৃত্তিতেও অংশ নিয়েছেন শ্রাবন্তী৷ সমগ্র অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধানে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়৷

তনয় স্মরণে
শিল্পীর কোনওদিন মৃতু্য হয় না৷ তিনি বেঁচে থাকেন শিল্পের মধ্যে৷ ঠিক একইভাবে শিল্পী তনয় চৌধুরীও বেঁচে থাকবেন মানুষের হূদয়ে৷ সারা জীবন যেসব শিল্প তিনি সৃষ্টি করেছেন তার প্রায় তিনশো ছবি নিয়ে এক অনন্য চিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেল গত তেরো মার্চ গঙ্গারামপুর হাইস্কুল প্রাঙ্গণে৷ এই উপলক্ষে এক অঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় সেদিন৷ প্রায় সাতশো প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন৷ তাঁদের ছবিও প্রদর্শনীতে স্থান পায়৷

চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সুরনন্দন ভারতীর সর্বভারতীয় সম্পাদক ঋতীশ রঞ্জন চক্রবর্তী৷ অধ্যক্ষা লিপিকা বসাক চৌধুরী শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ এবং অন্যান্য শিল্পীদেরে ভাবধারায় প্রাণিত হয়ে এক অসাধারণ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন৷ প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রও স্থান পেয়েছিল৷

এদিন প্রয়াত শিল্পী তনয় চৌধুরীর স্মৃতিতে পুরস্কার দেওয়া হয়৷ এই পুরস্কার পান ঋতীশ রঞ্জন চক্রবর্তী, শান্তনু মিশ্র, শিক্ষাবিদ জ্যোতির্ময় রায় এবং মাজিদুর রহমান৷

নারী দিবসে
মার্চের দশ তারিখ নিউটাউন নজরুলতীর্থে ছায়ানট (কলকাতা)-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল)৷ অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল শতকন্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্মবোধক গান এবং আম্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এই বছরেরে নারী সম্মাননা প্রদান৷ উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন পবিত্র সরকার৷ সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও লেখক সৈয়দ হাসমত জালাল এবং অন্যান্যরা৷

নারী সম্মাননা ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’ -এর প্রাপকরা হলেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী উর্মিমালা বসু, সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও লেখক সেমন্তী ঘোষ এবং অধ্যাপক গজালা ইয়াসমিন৷

একক পরিবেশনায় অংশ নেন স্বপ্নিকা দাস রায়, স্বর্ণিকা দাস রায়, দেবযানী বিশ্বাস, সুকন্যা রায়, মৌমিতা চক্রবর্তী, সংহিতা চ্যার্টার্জি, রাকা দাস, ললিতা মণ্ডস প্রমুখ৷ দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেন গীতিলোক সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টস, গীতলেখা, সাংস্কৃতিকী, কলকাতা স্বরলিপি, নবমূর্ছনা, ঐকতান, কলাপী (নিউটাউন), সুরশৃঙ্গ এবং আমরা-এর শিল্পীবৃন্দ৷

অনুষ্ঠান শুরু হয় শতকন্ঠে দুটি নজরুল সঙ্গীত — ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, এবং ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’৷ পরিকল্পনা এবং পরিচালনায় ছিলেন ছায়ানট (কলকাতা) -এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক৷ অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছিল পাকড়াশি হারমোনিয়াম, আল আমিন মিশন এবং ফরেস্ট ইন (লাটাগুড়ি)৷

বাপ্পি’সুরে বিবেক
বাপ্পি লাহিড়ির প্রয়াণ ঘটেছিল দু বছর আগে এক ফেব্রুয়ারি মাসে৷ তাঁর প্রতি সুরে সুরে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিলেন রাজ্য সরকারের আমলা বিবেক কুমার৷

জন্মসূত্রে তিনি বাঙালি না হলেও বাংলা গানের প্রতি তাঁর বিশেষ টান রয়েছে৷ এই টানেই তিনি গলায় তুলে নিলেন বাংলা গানের তান৷ এর আগে তাঁর বাংলা গানের একটি মিউজিক ভিডিও সবাইকে চমকে দিয়েছিল৷ রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রেমে গেয়ে শুনিয়েছেন — কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি৷

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে বাপ্পি লাহিড়িকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর অনুষ্ঠানে তিনি গাইলেন একটি জনপ্রিয় গান – চিরদিনই আমি যে তোমার, যুগে যুগে আমি তোমারই৷ এদিন তাঁর সঙ্গে থাকা যন্ত্রাণুসঙ্গীদেরও তিনি সম্মান জানালেন গানটি পরিবেশনের আগে৷

গুরুমহিমার গান
ছাত্রী সবিতা দে তাঁর দুই গুরু — সঙ্গীতাচার্য ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় এবং সঙ্গীতার্ণব তারাপদ চক্রবর্তীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন একটি প্রকাশিত বইতে৷ বইটির নাম গুরুপদতলে সবিতাদেবী৷ বইটির সম্পাদনা করেছেন মালবিকা চট্টোপাধ্যায়৷ প্রকাশক- শ্রী প্রকাশনা৷ একাশি পৃষ্ঠার ঝকঝকে ছাপা বই৷
সাদা-কালো এবং রঙিন অনেক ঐতিহাসিক ফোটোগ্রাফের  প্রতিলিপি আছে এখানে৷ দুই সঙ্গীত গুরুর সংক্ষিপ্ত  জীবনী যেমন আছে তেমনই আছে সবিতাদেবীর লেখা অনেক কবিতা৷ এই বইটি একটি গবেষণার ফসল৷ নিষ্ঠাভরে সম্পাদনা করেছেন মালবিকা দেবী৷ যিনি আবার ভীষ্মদেব মেমোরিয়াল  ট্রাস্টের সচিব৷ ভীষ্মদেবের পুত্র জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের সহধর্মিনী৷

এই বইতে সবিতাদেবীর জীবনপঞ্জী খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷ বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্ম সবিতার উনিশশো তিরিশ সালে৷ প্রয়াতা সবিতা দেবীকে নিয়ে এইরকম বই প্রকাশ করে প্রকাশনা সংস্থা একটি অমূল্য সম্পদ তুলে দিলেন পাঠকদের হাতে৷ গানের ভুবনের অমূল্য সম্পদ এই বইটি৷ বইটির তথ্যের উৎস সবিতাদেবীর স্বামী অনিল দে৷ অনিলবাবুর সঙ্গে মালবিকা দেবী যখন যোগাযোগ করেন তখন অনিলবাবুর বয়স সাতানব্বই৷ চোখে দেখেন না৷ কানে শোনেন না৷ স্মৃতিচারণই একমাত্র ভরসা৷

সুকল্প’র শ্রুতি সন্ধ্যা
শ্রুতিনাটক সংস্থা ‘সুকল্প’ একটি নিয়মিত শ্রুতিনাট্যচর্চা কেন্দ্র৷ সম্প্রতি অবনীন্দ্র সভাঘরে র্যামেক্স মিডিয়া এবং অনুষা কালচারাল আকাদেমিকে সঙ্গে নিয়ে একটি মনোরম শ্রুতিসন্ধ্যা উপহার দিল৷ বহু গুণীজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি মনোজ্ঞ হয়ে ওঠে৷

প্রথমে মঞ্চস্থ হয় আয়োজক সুকল্প-এর দুটি শ্রুতিনাটক — কী তার জবাব দেবে এবং আমি সুরঞ্জন৷ নাট্যকাররা হলেন যথাক্রমে বিশ্বজিৎ দেবরায় ও মনোজ দাশ৷ শ্রুতি সম্পাদনা চঞ্চল ভট্টাচার্যের৷ নির্দেশনায় শঙ্খ ভট্টাচার্য৷

এরপর অনুষা কালচারাল আকাদেমি দুটি হাস্যরসাত্মক শ্রুতিনাটক পরিবেশন করে দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা পায়৷ এই নাটকদুটি ছিল — ওপরতলা নীচেরতলা এবং বঙ্কুবাবুর দাম্পত্য৷ নির্দেশনায় ছিলেন অজন্তা চক্রবর্তী৷

ডাক্তার অমিতাভ ভট্টাচার্যরচিতন ক্যানসার সচেতনতার ওপর লেখা শ্রুতিনাটক — তৃতীয় পক্ষ ৷ সম্পাদনায় ড. সুভাষ রায়, নির্দেশনায় বিশ্বরঞ্জন চৌধুরী, সুব্রত চক্রবর্তী এবং পর্ণালী ব্যানার্জি৷
এদিন শ্রুতিনাটক সন্ধ্যার শেষে ‘সুকল্প’ সম্মাননা দেওয়া হয় সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক অরূপ বসুকে৷ বিশেষ অতিথি শুচিতা রায়চৌধুরী চলচ্চিত্র ও নাটকের সুন্দর বক্তব্য রাখেন৷ বইমেলায় স্টল নেই, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, হাতে বই নিয়ে বইমেলা প্রাঙ্গনে ঘুরে বেড়ানো, সোস্যাল মিডিয়ায় পুস্তকের ফেরিওয়ালা একালের দাদাঠাকুর অলোক দত্ত এদিন সন্ধেয় সম্পূর্ণ অন্যমাত্রায়, ভিন্ন স্বাদের সরস কবিতা ও শ্রুতিনাটক পরিবেশন করেন৷ সমগ্র অনুষ্ঠান সুপরিচালনায় ছিলেন শঙ্খ ভট্টাচার্য, অভিনেতা অরিন্দম মুখোপাধ্যায় ও রীণা ভট্টাচার্য৷

রূপশ্রী কাহালী স্মরণে
সম্প্রতি (গত চব্বিশ ফেব্রুয়ারি) জীবনাবসান হল বাচিক শিল্পী রূপশ্রী কাহালীর৷ তাঁর স্মরণে শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চ এক স্মরণসভা আয়োজন করেছিল, শনিবার (ষোলো মার্চ), বিকেল
পাঁচটায়, কলেজ স্কোয়ার সংলগ্ন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্টুডেন্টস হলে৷

আবৃত্তি শেখা, মঞ্চে দাঁড়িয়ে দু-চারশো লোক থেকে ঘেরাও অবস্থান, জন জোয়ারের চলমান মঞ্চ, জনসভায় হাজারো মানুষের সামনে আবৃত্তি বা শ্রুতিনাটক করা, শিশু-কিশোর-তরুণদের আবৃত্তি শেখানো — এসব রূপশ্রীর কাছে ছিল সংগ্রামের শিক্ষানবিশী থেকে সংগ্রামী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার সচেতন ও অবচেতনের প্রয়াস৷ কবি তরুণ সান্যাল রূপশ্রী কাহালী সম্পর্কে প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিলেন তাঁর মতো একজন শিল্পীর গণশিল্পী হয়ে ওঠার কথা৷

সংগ্রাম ছিল রূপশ্রীর রক্তধারায়৷ ঠাকুরদা আশুতোষ কাহালী, বাবা সন্তোশ কাহালীর থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত৷ রূপশ্রী ছিলেন একাধারে গান্ধিজির ভক্ত, অন্যদিকে মার্ক্স-লেনিনে অনুরক্ত৷
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগে ভাষাতত্ত্ব পড়ার সময়ে ছাত্র পরিষদের সমর্থক থাকলেও কমিউনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী ছাত্রদের সঙ্গে মিশতেন৷ মাত্র এগারো বছর বয়সে এআইসিসি অধিবেশনে আবৃত্তি শুনিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধিকে৷ ইন্দিরা গান্ধি শীতে কাঁপতে থাকা সেই কন্যার গায়ে পরিয়ে দিয়েছিলেন নিজের চাদর৷ প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীকে বলেছিলেন রূপশ্রীকে একটা শাল কিনে দিতে৷ আকাশবাণী ও দূরদর্শনে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন৷ একসময় মহাবোধি স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন৷ পরে বাচিক শিল্প চর্চাতেই সম্পূর্ণ মনোনিবে করেন৷ তাঁর শ্রুতি নাটকের ক্যাসেট যাক ছিঁড়ে যাক মিথ্যার জাল অভিনয়ের প্রসাদগুণে বিপুল সাড়া ফেলেছিল নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলনে৷

অশ্বডিম্ব
হিঃ বলে হা হা করে, দেই বলে ছুট
চোখ বুজে ঝাঁকালেও, পড়ে শুধু পুট৷
হাই তুলে সাঁই করে, নাকে দিয়ে নস্যি-
দাপাদাপি থই থই, মেয়ে অতি দস্যি৷
তেড়ে গিয়ে ফস করে, উড়ে গিয়ে আহারে
নাগালের বহুদূরে, ধরে কেবা তাহারে৷
তাই দেখে বুকে ছোটে, ধুকপুক সাঁই সাঁই,
নোলা তার লকলকে, করে শুধু খাই খাই৷
হুশ করে ফুস বলে, আসি বলে যাই, যেই–
ফিরে দেখি গোল্লায়, কিছু আর বাকি নেই৷
বকে বকে যাই ঘেমে, কাজ মোর নেই তাই,
প্যাঁচালের ডিম পেড়ে, এইবার আমি যাই৷
— প্রীতম কাঞ্জিলাল