এ বছরের রেল বাজেটে (যা এখন সাধারণ বাজেটের অন্তর্ভুক্ত)শহরতলির ট্রেন চলাচল ব্যবস্থার ওপর যে গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে,তাকে কলকাতা,মুম্বই ও চেন্নাইয়ের মতাে মেট্রোপলিটন শহরগুলির নিত্যযাত্রীরা নিশ্চয়ই স্বাগত জানাবেন।
রেল যেমন গােটা দেশের জীবনরেখা।তেমনি লােকাল ট্রেনও সাধারণ মানুষের কাছে জীবনরেখা,যা গৃহের সঙ্গে কর্মস্থলের যােগাযােগ স্থাপন করছে।নগর পরিকল্পনার বাস্তববাদী চিন্তাধারার ফসল হিসাবে নগরগুলি যেমন আশেপাশে অনেকটা সম্প্রসারিত হয়েছে, তেমনি তার জনসংখ্যাও বেড়েছে।লােকাল ট্রেনের দৌলতে মফসসল শহরগুলি বড় বড় শহরগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।এই ট্রেনগুলিতে সর্বদাই ভিড় লেগে থাকে।তার মধ্য দিয়েই নিত্যযাত্রীদের যাতায়াত করতে হয়।সারা দিনের যাত্রীদের বড় অংশই বহন করে থাকে লােকাল ট্রেন।তাই রেলের এই অংশের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য নিত্যযাত্রীদের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানাে উচিত।
নির্মলা সীতারমন সুবার্বন রেল ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকেলস ’ চালু করার কথা বলেছেন।আঞ্চলিক যােগাযােগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এটা নিশ্চয়ই একটা উল্লেখযােগ্য ব্যাপার।বুলেট ট্রেনের ফানুস ওড়ানাের চেয়ে এটা অনেক কার্যকরী উদ্যোগ।এই লক্ষ্যে রিজিওনাল র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (আরআরটিএস)সংস্থা দিল্লি ও মিরাটের মধ্যে এবং রাজস্থানের আরওয়ার থেকে হরিয়ানার পানিপথ পর্যন্ত হাইস্পিড রেল করিডর নির্মাণ করছে।
একই যুক্তিতে কলকাতার উত্তর ও দক্ষিণে বাংলাদেশ সীমান্ত ও সুন্দরবন পর্যন্ত চাহিদার কথা মাথায় রেখে শহরতলির এই পরিবহণ প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের জন্যও নেওয়া যেতে পারে।এছাড়াও হাওড়া ও শিয়ালদা ডিভিশনে লােকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানাের জরুরি প্রয়ােজন রয়েছে।সেই সঙ্গে সুবার্বন সেকশনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধ করার ব্যবস্থাও নিতে হবে।যত বিনিয়ােগই হােক না কেন প্রতি আর্থিক বছরে রেল এই কারণে যথেষ্ট ক্ষতির শিকার হচ্ছে।শুনতে কড়া লাগলেও এটা সত্যি যে বেশিরভাগ লােকাল স্টেশনে চেকিংয়ের কোনও বালাই নেই,চলন্ত ট্রেনের মধ্যে চেকিং তাে অনেক দুরের ব্যাপার।
সীতারমনের প্রথম বাজেটের একটা উল্লেখযােগ্য দিক হল সরকারি বেসরকারি অংশীদারির প্রস্তাব।রেললাইনের দ্রুত উন্নয়ন ও সম্পূর্ণকরণ,রােলিং স্টক উৎপাদন এবং যাত্রী ও পণ্য পরিষেবার স্বার্থেই এটা ব্যবহৃত হবে।দীর্ঘ ব্যবহারে জীর্ণ রেললাইনগুলি পাল্টানাের জরুরি প্রয়ােজন রয়েছে।সরকারের যেসব স্বপ্নের প্রকল্প রয়েছে তার জন্য এই ধরনের রেললাইন একেবারেই অনুপযুক্ত।এইসব প্রকল্পের রূপায়ণ অনেকটাই বিনিয়ােগের ওপর নির্ভরশীল।পরিকাঠামোর জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ লক্ষ কোটি টাকার প্রয়ােজন আছে। অনুমােদিত প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হতে কয়েক দশক লেগে যাবে।মুলধনী ব্যয়বরাদ্দ প্রতি বছর ১.৫ লক্ষ কোটি থেকে ১.৬ লক্ষ কোটির মধ্যে থাকবে ধরে নিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতেই পারে।সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য স্টেশনগুলির আধুনিকীকরণেরও প্রয়ােজন রয়েছে , যার জন্য অর্থমন্ত্রী একটা ব্যাপক কর্মসূচি ঘােষণা করেছেন।
রেল ভ্রমণকে প্রতিশ্রুতিমতাে সুখকর অভিজ্ঞতায় পরিণত করতে হলে তার জন্য উন্নতির কিছু স্পষ্ট মাপকাঠি আছে -সেগুলি হল ট্রেনের মধ্যে জল সরবরাহ , পরিচ্ছন্ন টয়লেট ও খাবার যােগ্য খাদ্যের ব্যবস্থা।এই মৌলিক চাহিদাগুলির কিন্তু অভাব রয়েছে ।