দিল্লি, ১২ মার্চ: সিএএ কার্যকর হতেই বিরোধিতার পথে হাঁটল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ। আজ মঙ্গলবার এই বিতর্কিত আইনের বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে ভারতীয় মুসলিম লিগ, ডিওয়াইএফআইয়ের মতো একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠন। মামলাকারীরা প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে আবেদন জানিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪-এর আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসা নির্যাতিত অমুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে চায়। এই আইন অসাংবিধানিক ও মুসলিম বিরোধী।
মামলাকারীদের প্রশ্ন, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানরা CAA এর অধীনে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। কিন্তু মুসলিমরা নয় কেন?
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আইনটি পাস হওয়ার চার বছরেরও বেশি সময় পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিএএ বাস্তবায়নের নিয়মগুলিকে অবহিত করার একদিন পরে মুসলিম সংগঠনগুলি শীর্ষ আদালতে পদক্ষেপ করে। ইতিমধ্যে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) সমস্ত সম্প্রদায়ের লোকদের শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছে। তারা বলেছে যে, এই আইনি কমিটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তিটি অধ্যয়ন করছে।
AIMPLB-এর মাওলানা খালিদ রশিদ ফারঙ্গী মাহালী বলেন, “আমরা জানতে পারলাম, সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সমস্ত সম্প্রদায়ের সদস্যদের কাছে আমার আবেদন যে, আমরা সকলে শান্তি বজায় রাখব। আমাদের আইনি কমিটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি অধ্যয়ন করবে। তারপরে যে কোনও বিবৃতি দেওয়া যেতে পারে।”
এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও সিএএ বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই আইনটি মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের চিন্তাধারা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করার জন্য।
আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এক্স-এ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “সিএএ নিয়ে আমাদের আপত্তি একই রয়েছে। সিএএ বিভাজন এবং গডসের চিন্তার উপর ভিত্তি করে এটি মুসলমানদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করতে চেয়েছে। নির্যাতিত যে কাউকে আশ্রয় দিন। কিন্তু নাগরিকত্ব অবশ্যই ধর্ম বা জাতীয়তার ভিত্তিতে হবে না।”
তৃণমূল, কংগ্রেসও এই আইনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। তবে এই আইন প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ উলটো সুরে মুসলিম জামাত। তাদের মতে,“এই আইন আরও আগে আনা উচিত ছিল। মুসলিমদের মধ্যে এই আইন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় মুসলিমদের নাগরিকত্ব কাড়বে না এই আইন।” জামাত প্রেসিডেন্ট মৌলানা শাহাবুদ্দিন রাজভি বরেলিভির অনুরোধ, সিএএ-কে স্বাগত জানান ভারতীয় মুসলিমরা।
২০১৯ সালে সিএএ পাশ হওয়ার পরেও শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ভারতীয় মুসলিম লিগ। আবারও এই আইন কার্যকর করার নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেল কেরলের সংগঠন। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার পাঁচ বছরের বিলম্বের পরে কেন এই আইন চালুর বিজ্ঞপ্তি জারি করল, তার ব্যাখ্যা করুন।
“সরকারকে ব্যাখ্যা করা উচিত যে, তারা কেন এই নিয়মগুলি পাঁচ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছিল। এবং এখন কেন সেগুলি প্রয়োগ করছে। ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)-এর পাশাপাশি ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি), সিএএ শুধুমাত্র মুসলমানদের টার্গেট করে চালু করা হয়েছে। এটি অন্য কোনও উদ্দেশ্য পরিবেশন করে না। যে ভারতীয়রা সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি-র বিরোধিতা করতে রাস্তায় নেমেছিল, তাঁদের ফের বিরোধিতা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।”