কলকাতা, ৭ মার্চ: বেশ কয়েকদিন ধরে গুঞ্জন চলছিল, তিনি রাজনীতিতে যোগ দেবেন। কিন্তু কবে? অবশেষে সেই প্রতীক্ষার শেষ হল। পিছিয়ে পড়া পশ্চিমবঙ্গকে টেনে তুলতেই বিজেপি-তে যোগ দিলেন হাইকোর্টের সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর আগে গত মঙ্গলবার নিজের বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে ঘোষণা করেন, তিনি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। আদালত চত্বরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তিনি সেই ঘোষণা করেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন। সেদিন তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে বিজেপি নেতারা যোগাযোগ করেছিলেন। তিনিও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
পূর্ব ঘোষণা মতো আজ, বৃহস্পতিবারই ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তিনি বিজেপির রাজ্য দপ্তরে গিয়ে বিজেপি-তে যোগদান করলেন। হাতে তুলে নিলেন পদ্মফুলের ঝান্ডা। গলায় পরলেন গেরুয়া উত্তরীয়। দলের রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা তাঁকে বিজেপি কর্মী হিসেবে বরণ করে নিলেন। যোগদানের পর তিনি বলেন, ‘একটি নতুন জগতে পা দিলাম। দলের একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক হিসাবে কাজ করতে চাই। দল যা দায়িত্ব দেবে, সেটাই পালন করব। পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরাতেই সর্বভারতীয় দল বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। বাঙালি হিসাবে খারাপ লাগে পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে দেখে। তাই অবিলম্বে বাংলায় বিজেপির আসাটা খুবই দরকার। রাজ্যের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের বিদায়লগ্নের সূচনা করতে হবে। সেজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তেই বিজেপিতে যোগ দিলাম।’
তবে আজ তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগদানের পর বেশি কথা বলেননি। তিনি শুভেন্দু অধিকারীর এক ইঙ্গিতে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদদের মতো সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরপর্ব এড়িয়ে যান। সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করতে গেলে অভিজিতের ডান পাশে বসা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কোনও প্রশ্ন নেবেন না!’’ এদিন দেখা যায়, বাধ্য সৈনিকের মতো অভিজিৎ বাবুও সে কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘ মঙ্গলবার তো দীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। আজ এইটুকুই থাক। এর বেশি কিছু বলছি না।’’ তার পরে সাংবাদিকরা তাঁকে আর প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি। পদ্মশিবিরের নেতাদের বক্তব্য, ইঙ্গিতে অভিজিৎকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, দল কী চায়।
উল্লেখ্য, বিজেপি-র দলীয় রীতি অনুযায়ী, দলের মুখপাত্র ছাড়া সংবাদমাধ্যমে কেউ কথা বলতে পারেন না। বিরোধী দলনেতা পরিষদীয় বিষয়ে কথা বলতে পারেন। রাজ্য সভাপতি সার্বিক সব বিষয়ে কথা বলতে পারেন। তা ছাড়া সাংসদ, বিধায়ক বা বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রার্থী তাঁদের এলাকার বিষয়ে কথা বলতে পারেন। তার বাইরের কিছু কেউ বলতে পারেন না। ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্রে বলার প্রয়োজন হলে আগেভাগে দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হয়। পদ্মশিবির সূত্রে খবর, হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে এখন সে সব দলীয় রীতিনীতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আজ বিজেপি-তে যোগদানের আগে তাঁর বাড়িতে যান বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল। অগ্নিমিত্রার সঙ্গে ছিলেন বিজেপির নেতা কর্মীরাও। তাঁকে সেখান থেকে রাজ্য বিজেপি-র সদর দপ্তরে নিয়ে আসেন বিধায়িকা। বিজেপির নেতা কর্মীরা বিচারপতির উদ্দেশ্যে পুষ্প বৃষ্টি করে স্বাগত জানান। এরপর রাজ্য ও কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিজেপি-তে যোগদান করেন। যোগদানের কিছুক্ষণ পরই রাজ্যনেতাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণের বিশেষ বৈঠকে যুক্ত হয়ে যান।