• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থাই আনছে তৃণমূল

বিধাননগর পুরনিগমের মেয়রের পদ থেকে উনি যে পদত্যাগ করছেন না সেটা আগেই জানিয়েছিলেন সব্যসাচী দত্ত।

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। (File Photo: IANS)

বিধাননগর পুরনিগমের মেয়রের পদ থেকে উনি যে পদত্যাগ করছেন না সেটা আগেই জানিয়েছিলেন সব্যসাচী দত্ত। তাই এবার রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশেই শেষমেশ অনাস্থা আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল তৃণমূল বলে জানিয়েছেন ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়।

ইতিমধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাবে কাউন্সিলরদের সই করানাের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান ডেপুটি মেয়র। এই সংবাদেও অনড় ও অবিচল সব্যসাচী দত্ত হেসে তাঁর প্রক্রিয়ায় জানিয়ে বলেছেন দেখুন না আগে আগে কি হয়’।

তাঁর কাজকর্মে যথেষ্ট বিব্রত দল। একাধিকবার সতর্ক করা হলেও থােড়াই কেয়ার চলেছেন তিনি। সময় যত এগিয়েছে ততােই বিতর্ক বাড়িয়েছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। শেষে সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবনে তাঁর নেতৃত্বে হামলা ও রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বেলাগাম মন্তব্যে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের। শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া।

রবিবার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে তৃণমূল ভবনে কাউন্সিলদের নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বেশিরভাগ কাউন্সিলরই সব্যসাচীর বিরুদ্ধে মত পােষণ করেন বলে প্রকাশ। যদিও সেই বৈঠকে মেয়রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘােষণা কররা হয়নি। কিন্তু পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে বকলমে মেয়রের দায়িত্বভার সামলানাের জন্য বলা হয়।

অন্যদিকে, সব্যসাচীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা ঠিক হবে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিতে বলে জানান ফিরহাদ হাকিম। এরপরেই শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই।

ওইদিন রাতেই মুকুল রায়ের পাশে বসে সব্যসাচী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মুকুলের সঙ্গে সাক্ষাৎকে সৌজন্য আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন এই রাজনীতিক। সােমবার সকাল থেকেই একে অপরকে পাল্টা দেওয়ার পর্ব শুরু হয়।

প্রথম আসে পুরমন্ত্রীর তরফে। তিনি সব্যসাচীকে ‘বেইমান, মিরজাফর’ বলে আক্রমণ করে বলেন, ‘দল কোনও বিশৃঙ্খলা মানবে না। অনেকবার সুযােগ দেওয়া হয়েছে। সব্যসাচী যা করেছেন তা দলের পক্ষে অস্বস্তিকর। দলে থেকে এসব সহ্য করা যায় না’।

তিনি আরও বলেন, ‘সব্যসাচী দলের পক্ষে অপরিহার্য নন। দলকে যে বিপদে ফেলছে তাঁর সঙ্গে বারবার কথা নয়’। সব্যসাচী দত্তকে তাঁর স্পষ্ট বার্তা ‘যাওয়ার হলে চলে যাও। কিসের জন্য অপেক্ষা করছ? দু’নৌকায় পা রাখলে তাে ডুবে যাবে’।

তার পাল্টা দিয়ে সব্যসাচী বলেন যিনি এ সব বলছেন, তিনি নিজে কি একবার ভেবে দেখুন। তিনি আরও জানান, ‘মীরজাফরের নামটা অন্যভাবে আলােচিত হবে’।

এরপরেই সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, যা এদিন স্পষ্ট হয় ডেপুটি মেয়র তাপস চ্যাটার্জির বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘পুরমন্ত্রী তাঁকে অনাস্থা আনার কথা বলেছেন। এ নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলােচনা হয়েছে’।

কিন্তু ডেপুটি মেয়র হিসাবে আদৌ কি তিনি কাউন্সিলরদের কোনও নির্দেশ দিতে পারবেন? তিনি বলেন, ‘নিজের দফতর নিয়ে নির্দেশ দিতে পারেন। মেয়র ইন কাউন্সিল তাঁর নিজের দফতর নিয়ে ভাববেন। তিনি আরও বলেন, ‘কে থাকবেন, কে থাকবেন না, দল সিদ্ধান্ত নেবে। এতে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

এরপরেই বিস্ফোরক দাবি করেন তিনি। সব্যসাচী বাইরে গেলেও সৌজন্যের খাতিরেও দায়িত্ব ডেপুটি মেয়রকে দিয়ে যান। এটা তাঁর কালচারের মধ্যেই নেই। ওঁর সৌজন্য শুধু মুকুল রায়ের জন্যই। অন্য আর কারাের জন্যই ওঁর সৌজন্য নেই।

এরমধ্যেই সব্যসাচী মন্তব্য করে বসেন, ‘শ্রমিকের স্বার্থে দাঁড়ালে যদি বেইমানি হয় তাহলে বিগত দিনেও এই বেইমানি করেছি, আগামীতেও করব। কে কি বললেন তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। মুকুলদা দাদা হিসেবে এসেছিলেন। সৌজন্য দেখিয়েছি। এতে যদি বেইমান হই তাহলে যিনি বলছেন তিনি বেইমান কতটা সেটা উনি দেখুন। লিখিত এলে জানাবাে’।

এর কিছুক্ষণ পরেই পুর ভবনে প্রবেশ করেন সব্যসাচী। সেখানে ফের সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘মেয়র পদ তিনি ছাড়ছেন না। যেদিন ভােটাভুটি হবে সেদিন দেখতে পাবেন, ক’জন কাউন্সিলর তাঁর সঙ্গে রয়েছেন’।

এখনও মেয়র হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবেন। ইস্তফা দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া প্রসঙ্গে সব্যসাচী বলেন, ‘দলের তরফে কোনও নির্দেশ পাইনি। ফোন করে কেউ ইস্তফার কথাও বলেননি। ফোনে এই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ানাে যায় না’।

উল্লেখ্য, বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও বিধাননগরের মেয়র তথা রাজারহাট নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত রবিবার রাতে এক ফ্রেমে ধরা দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হয়েছে। কয়েক মাস আগে সব্যসাচীর বাড়িতে লুচি-আলুর দম থেকে গিয়েছিলেন মুকুল।

মাঝেমধ্যেই নানা কার্যকলাপে ও মন্তব্যে তৃণমূলের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়াচ্ছিলেন তিনি। কয়েক দিন আগে বিদ্যুৎ কর্মীদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে তৃণমূলেরই সরকারকে সব্যসাচী আক্রমণ করার পরে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

তৃণমূল সূত্রের খবর, সব কাউন্সিলরই সব্যসাচীকে সরানাের পক্ষে মত দেন ওই বৈঠকে। বৈঠক সেরে বেরনাের সময় ফিরহাদ জানিয়ে যান, কাউন্সিলরদের মতামত তিনি দলনেত্রীকে জানাবেন এবং যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিনিই নেবেন। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্তের কথা সােমবার বিকেল পর্যন্ত ঘােষিত হয়নি।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়র পদ থেকে সব্যসাচী আর পুরসভার কাজ দেখবেন না, সব সামলাবেন ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টেপাধ্যায়। তবে এরকম কোনও নির্দেশের বিষয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও স্পষ্ট ঘােষণা হয়নি।

তৃণমূল নেতৃত্ব এবং সব্যসাচী দত্তর মধ্যে সম্পর্কের এই টানাপােড়েনে বিধাননগরের পুর প্রশাসনে এখন সংশয়ের পরিবেশ। এক দল কাউন্সিলরকে পাশে বসিয়ে তাপস চট্টোপাধ্যায় এদিনই দাবি করেছেন যে পরিষেবা এত দিন ঠিকমতাে মিলছিল না। তিনি একা নন, কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে টিম হিসেবে আপাতত কাজ দেখভাল করবেন।

এরপরে কৃষ্ণাদেবী জানান, সব্যসাচী এখনও মেয়র তাই এসেছেন। তাঁর ঘরে সব কাউন্সিলরই আসতে পারেন। দল যতক্ষণ না কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তিনি সব্যসাচীকে আসতে বারণ করতে পারেন না। সব্যসাচী জানিয়ে দেন ১০ তারিখের মিটিংয়েও তিনি আসবেন।

যদিও তৃণমূল সূত্রে খবর, আর অপেক্ষা নয় এদিন সব্যসাচী যা মন্তব্য করেছে তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হবে। এই প্রসঙ্গে এদিন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দলের থেকে ব্যক্তি বড় হতে পারে না। দলের সময় দেওয়ার মানে দুর্বল ভাবার কোনও কারণ নেই। যার বুদ্ধিতে চলছে, যেখানে যাবেন সেখানে ধ্বংস করবে।