• facebook
  • twitter
Sunday, 24 November, 2024

ভারত উন্নতিতেও চিনকে ছাড়িয়ে যাবে

দিল্লি, ২৯ ফেব্রুয়ারি– ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে৷ সেই অবকাঠামোর উন্নত মান দেখে অনেকেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছেন৷ আরও অনেক বিষয় এখন ভারতের অনুকূলে রয়েছে৷ সিএনএনের এক সংবাদ বিশ্লেষণে সে রকম একটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে৷ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে জয়পুর পর্যন্ত যে সড়ক আছে, গত

দিল্লি, ২৯ ফেব্রুয়ারি– ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে৷ সেই অবকাঠামোর উন্নত মান দেখে অনেকেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছেন৷

আরও অনেক বিষয় এখন ভারতের অনুকূলে রয়েছে৷ সিএনএনের এক সংবাদ বিশ্লেষণে সে রকম একটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে৷ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে জয়পুর পর্যন্ত যে সড়ক আছে, গত তিন দশকে সেটির অনেক উন্নয়ন করা হলেও সেগুলো তেমন কাজে আসছিল না৷ কিন্ত্ত সম্প্রতি একই গন্তব্যে নুন এক্সপ্রেসওয়ের কল্যাণে মানুষ নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন৷

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিল ম্যাথিউস এশিয়ার পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক হিসেবে আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় নাগরিক পিউস মিত্তাল ৩০ বছর ধরে দিল্লি থেকে জয়পুর পর্যন্ত যাতায়াত করছেন৷ কর্মস্থল থেকে দেশে ফিরলে তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে দিল্লি থেকে জয়পুর যেতেন৷ ১৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সংস্কার করা হয়েছে, এক লেন থেকে দুই লেন, সেখান থেকে তিন লেনে উন্নীত হয়েছে সড়কটি৷ কিন্ত্ত কিছুতেই যেন কিছু কাজ করছিল না, যাত্রার সময় সেই ছয় ঘণ্টাই লাগছিল৷

কিন্ত্ত গত বছর ভারতে এসে পিউস মিত্তালের তাক লেগে যায়৷ দিল্লি-জয়পুরের মধ্যে যে নতুন এক্সপ্রেসওয়ে বা দ্রুতগতির সড়ক তৈরি হয়েছে, সেই সড়কে গাড়ি নিয়ে উঠেই তিনি রীতিমতো চমকে যান৷ তাঁর মনে হয়েছে, ভারতে কি এটাও সম্ভব৷ বাস্তবতা হলো, সেই সড়কে তিনি ৭৫ মাইল গতিতে গাড়ি চালিয়ে তিন ঘণ্টায় জয়পুর পৌঁছে গেছেন৷ অর্থাৎ যাত্রার সময় অর্ধেক কমে গেছে৷ সে জন্য আরও অনেকের মতো তিনিও ভারতের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে আস্থা পাচ্ছেন৷ ফলে ভারতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে তাঁরা আশাবাদী হয়ে উঠছেন৷

২০১৪ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তাঁর শাসনামলে ভারত কী করছে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের আর্থিক খাতের পেশাজীবীরা সেদিকে দৃষ্টি রেখেছেন৷ নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে তিনি ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করবেন, অর্থাৎ ভারতের বার্ষিক জিডিপির আকার ৫ লাখ কোটি ডলারে তুলতে চান তিনি৷

এদিকে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ তৈরি হলেও চীনে ঠিক তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে৷ আবাসন খাত, ঋণসংকটসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চীন৷ এর একটি বড় কারণ হলো, বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, যদিও এর পেছনে ভূরাজনৈতিক কারণও আছে৷

২০২১ সালে চীনের স্টক মার্কেট সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠার পর পতন শুরু হয়েছে৷ গত কয়েক বছরে সাংহাই, সেনজেন ও হংকং স্টক মার্কেট থেকে বিভিন্ন কোম্পানি প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি ডলারের বাজার মূলধন হারিয়েছে৷ এ ছাড়া গত বছর দেশটিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এফডিআই ১২ শতাংশ কমেছে৷
অন্যদিকে একই সময়ে ভারতের স্টক মার্কেটও নতুন উচ্চতায় ওঠে৷ গত বছর ভারতের স্টক মার্কেটে নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে৷ বিশেষ করে ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তে ভারতের স্টক মার্কেটে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন বেড়ে ৪ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷

এখানেই শেষ নয়, ভারতের স্টক মার্কেট নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছে৷ বিশ্লেষকেরা বাজারের প্রত্যাশার সঙ্গে একমত৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেফরিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের স্টক মার্কেটে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ১০ ট্রিলিয়ন বা ১০ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে৷ ফলে বিশ্বের বড় বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ভারতকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না৷

এই বাস্তবতায় পিউস মিত্তাল বলেন, বিনিয়োগকারীরা আর চীনে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন না; এই বাস্তবতায় চীনের বিকল্প কী হবে৷ নিজের প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দেন এভাবে: চীনের মতো আর কোনো দেশ যদি হতে পারে, সেটা ভারত ছাড়া আর কেউ নয়; কোনো না কোনোভাবে ভারতের সেই সক্ষমতা আছে৷ সম্ভবত চীনের বিকল্প হিসেবে পৃথিবী ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে; ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে বিনিয়োগকারীরা ভারতকেই চাইবেন৷

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক কারণ আছে৷ যেমন তরুণ জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে কারখানার উৎপাদন ও অবকাঠামো—সবকিছুই এখন তার অনুকূলে রয়েছে৷

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ৷ অন্যদিকে চীনের জন্য আইএমএফের পূর্বাভাস হলো, ৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি৷ এই বাস্তবতায় জেফরিজের বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির তকমা পাবে৷

এখন ভারতের যে অবস্থা, আজ থেকে তিন দশক আগে চীনের পরিস্থিতিও ঠিক এ রকম ছিল৷ তখন তারা এক অবকাঠামোগত রূপান্তরের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে৷ সে সময় চীনও সড়ক, বন্দর, বিমানবন্দর এবং রেলপথ নির্মাণে ভারতের মতো শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে৷

বিশ্লেষকেরা বলেন, ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগের বহুমুখী প্রভাব অর্থনীতিতে অনুভূত হয়৷ এগুলোর সুবিধা হলো, এসব খাতে একবার বিনিয়োগ করা হলে সেখান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই৷ এর সুফল বহুকাল ধরে পাওয়া যায়৷ ভারত এখন ঠিক সে কাজটিই করে চলেছে৷