• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

পুলিশের হাতেই গ্রেপ্তার সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহান

কলকাতা, ২৯ ফেব্রুয়ারি: অবশেষে গ্রেপ্তার সন্দেশখালি কাণ্ডের ‘কিং পিন’ শেখ শাহজাহান। গতকাল রাতে মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই তৃণমূল নেতাকে। ৫ জানুয়ারি ইডি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ৫৫ দিনের মাথায় গ্রেপ্তার হল শাহজাহান। আজ বৃহস্পতিবার ধৃত শাহজাহানকে বসিরহাট আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশ তাকে ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করে। আদালত ১০ দিনের

কলকাতা, ২৯ ফেব্রুয়ারি: অবশেষে গ্রেপ্তার সন্দেশখালি কাণ্ডের ‘কিং পিন’ শেখ শাহজাহান। গতকাল রাতে মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই তৃণমূল নেতাকে। ৫ জানুয়ারি ইডি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ৫৫ দিনের মাথায় গ্রেপ্তার হল শাহজাহান। আজ বৃহস্পতিবার ধৃত শাহজাহানকে বসিরহাট আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশ তাকে ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করে। আদালত ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে।

শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ন্যাজাট থানা ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৪১/১৮৬/৩৫৩/৩২৩/৪২৭/৩৭০/৫০৬/৩৪- সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলার রুজু করে। বসিরহাট মহকুমা আদালতে পাঠায় মিনাখাঁ থানার পুলিশ। সেই সব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এডিজি সুপ্রতিম সরকার এই ইডি-র দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তিনি বলেন, রাজ্য পুলিশের আইনি জটিলতা থাকলেও ইডির ক্ষেত্রে কিন্তু সেইসব আইনি বাধা ছিল না। তা সত্ত্বেও ইডি কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করল না? পাশাপাশি, তিনি সন্দেশখালিতে যাঁরা আসছেন তাঁদের কাছে তিনি বিশেষ আর্জি জানান। এডিজি বলেন, এমন কিছু করবেন না, যাতে এলাকায় বিভেদ সৃষ্টি হয়। এদিকে আজ গোটা সন্দেশখালি থানা জুড়ে ৪৯টি জায়গায় নতুন করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত সন্দেশখালি মামলায় আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ায় শাহ্জাহানকে গ্রেপ্তারির আইনি অধিকার নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। সম্প্রতি সেই সংশয় প্রকাশ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত রবিবার মহেশতলায় একটি জলপ্রকল্পের সূচনায় গিয়ে এই সংশয় প্রকাশ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, আদালতের বাধার কারণে শেখ শাহ্জাহানকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। পরের দিন সোমবার হাইকোর্ট শাহজাহান সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট করে জানায়, তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তারে কোনও আইনি বাধা নেই। তার গ্রেপ্তারে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি। এবিষয়ে গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট ফের আরও একটি নির্দেশ দেয়। সন্দেশখালি মামলার সেই নির্দেশে বলা হয়, যে কেউ শেখ শাহাজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। অর্থাৎ ইডি, সিবিআই অথবা রাজ্য পুলিশের যে কেউ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। রাজ্য প্রশাসনও জানায়, শেখ শাহজাহানকে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করবে রাজ্য পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এই গ্রেপ্তারির বিষয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে তিনি বলেন, শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাজ্য পুলিশের কাছে কিছু আইনি জটিলতা ছিল। গতকাল আদালত এবিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কোনও বাধা নেই বলে আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতেই শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে যায় ইডি। মূলত রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে তার বাড়িতে হানা দেয় ইডি। কিন্তু স্থানীয় জনরোষের মুখে পড়ে আক্রান্ত হন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। ফলে পালিয়ে ফায়ার আসতে হয়েছিল তাঁদের। তখন থেকেই শাহজাহান ছিল বেপাত্তা। এরপর শাহজাহানের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। শাহজাহান অনুগামীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামেন সন্দেশখালির বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আনেন গ্রামের মহিলারা। জোর করে গ্রামবাসীদের জমি কেড়ে নিয়ে মাছের ভেড়ি বানানোর অভিযোগ ওঠে। সন্দেশখালির বিক্ষুব্ধ জনতা শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ দুই নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরার বাড়ি ও খামারে হামলা চালায়। অগ্নি সংযোগ করে। তাদের গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে। জনতার সেই দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রথমে উত্তম ও পরে শিবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু দীর্ঘ দেড় মাস কেটে গেলেও মূল অভিযুক্ত শাহজাহানের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্দেশখালির মানুষ শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। শেষমেশ আদালতের সবুজ সঙ্কেত মিলতেই সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।

এদিকে এই গ্রেপ্তারির ঘটনায় রীতিমতো স্বস্তিতে সন্দেশখালির মানুষ। শাহজাহান গ্রেপ্তার হতেই সন্দেশখালিতে স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস। চলছে আবির খেলা। যদিও তাঁরা এখন শাহজাহান ফের ছাড়া পাওয়ার ভয় পাচ্ছেন। তাঁদের ধারণা, এই গ্রেপ্তারির পর শাহজাহান যদি কোনওভাবে জামিনে পুলিশের হাত থেকে মুক্ত হয়, তাহলে ফের সন্দেশখালিতে অশান্তি শুরু করতে পারে। এবং যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন করেছিল, গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিল তাঁদের ওপর দ্বিগুণ অত্যাচার হতে পারে।