লখনউ, ২৭ ফেব্রুয়ারি– একদিকে হিমাচল, অন্যদিকে কর্ণাটক ও উত্তরপ্রদেশ৷ মঙ্গলবার রাজ্যসভা ভোটে হিমাচল প্রদেশের পাশাপাশি ‘ক্রস ভোটিং’ হল উত্তরপ্রদেশ এবং কর্ণাটকেও৷ তবে হিমাচলের সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে কর্ণাটক ও উত্তরপ্রদেশে৷ কারণ কর্ণাটকে ঘর ভাঙছে বিজেপির অন্যদিকে হিমাচল তথা উত্তরপ্রদেশে সিদ কাটার সম্ভাবনা কংগ্রেসের ঘরে৷
উত্তরপ্রদেশে প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র পাঁচ বিধায়ক বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পরে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে৷ অন্য দিকে, কর্ণাটকে শাসকদল কংগ্রেসের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন প্রভাবশালী বিজেপি বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী এসটি সোমশেখর গৌড়া৷
কর্ণাটকের কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি তাঁর বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বী হর্ষ মহাজনকে হারাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হচ্ছে৷ হিমাচলে রাজ্যসভার একটি আসনে সরাসরি লড়াই কংগ্রেস এবং বিজেপির৷ ফলে ক্রস ভোটিংয়ের কারণে কংগ্রেস প্রার্থী হেরে গেলে সরাসরি প্রশ্ন উঠবে সুখু সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যেই গণনাপর্ব শেষ হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর৷
অন্যদিকে, মঙ্গলবার নীতীশ মন্ত্রিসভার উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরির উপস্থিতিতে কংগ্রেসের দুই এবং আরজেডির এক বিধায়ক বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণা করেন৷ আর এই ঘোষণার পরই বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, বিহারে শাসকজোটের বৃহত্তম শরিক বিজেপি বিরোধী জোটে ভাঙন ধরানোর কাজ শুরু করেছে৷
কংগ্রেসের মুরারী গৌতম এবং সিদ্ধার্থ সৌরভের পাশাপাশি প্রভাবশালী আরজেডি বিধায়ক সঙ্গীতা দেবী মঙ্গলবার সম্রাটের পাশে বসে বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণা করেন৷ রোহাতাস জেলার চেনারীর বিধায়ক মুরারী বিহারের পূর্বতম মহাগঠবন্ধন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন৷ সিদ্ধার্থ পটনা জেলার বিক্রম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গত দু’টি নির্বাচনে জিতেছেন৷ কৈমুর জেলার মোহানিয়া কেন্দ্রে বিধায়ক সঙ্গীতা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন৷
উল্লেখ্য, জোট বদলের পরে বিহার বিধানসভায় আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে রয়ে গিয়েছেন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার৷ তারপরেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল কংগ্রেসের ১৯ জন বিধায়কের অন্তত ১০ জন দল ছাড়তে চলেছেন৷ ভাঙন ঠেকাতে সে সময় তডি়ঘডি় বিধায়দের কংগ্রেস শাসিত তেলেঙ্গনার একটি রিসর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু এতকিছু করেও শেষ পর্যন্ত লোকসভা ভোটের আগে দলের ভাঙন এড়াতে পারলেন না রাহুল গান্ধি-মল্লিকার্জুন খাড়গেরা৷
উত্তরপ্রদেশে রাজ্যসভার ১০টি আসনে নির্বাচন হয় মঙ্গলবার৷ সংখ্যার হিসাবে সাতটি আসনে বিজেপি প্রার্থীর জয় নিশ্চিত৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের দলের তিন প্রার্থীর জয় চলতি মাসের গোড়া পর্যন্ত নিশ্চিত ছিল৷
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় লোক দলের এনডিএ-তে যোগদান এবং দু’জন এসপি বিধায়কের প্রকাশ্যে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থনের ঘোষণার পরে চিত্র পাল্টেছে৷ বিজেপি প্রথমে সাত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল৷ কিন্ত্ত বিরোধী শিবিরের হালচাল দেখে অষ্টম আসনেও প্রার্থী দিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে অখিলেশের উপর চাপ বাডি়য়ে ‘বাহুবলী’ বিধায়ক রাজা ভাইয়া এবং তাঁর দল জনসত্তা পার্টির এক বিধায়ক বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন৷
আগামী এপ্রিলে ১৫টি রাজ্যের ৫৬ জন রাজ্যসভার সদস্য অবসর নিতে চলেছেন৷ উত্তরপ্রদেশের ১০ জন ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ, অন্ধ্রপ্রদেশের তিন, বিহারের ছয়, ছত্তিশগঢে়র এক, গুজরাতের চার, রাজস্থানের তিন, হরিয়ানার এক, হিমাচল প্রদেশের এক, কর্ণাটকের চার, মধ্যপ্রদেশের পাঁচ, মহারাষ্ট্রের ছয়, তেলঙ্গানার তিন, উত্তরাখণ্ডের এক এবং ওডি়শা থেকে তিন জন নির্বাচিত হওয়ার কথা৷ কিন্ত্ত পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের বিধায়ক সংখ্যার অনুপাতে প্রার্থী দিলেও ভোট হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ, কর্শাটক এবং হিমাচল প্রদেশে৷
প্রসঙ্গত, বতর্মানে ৪০৩ আসনের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় চারটি আসন খালি৷ ভোট দিয়েছেন ৩৯৯ জন বিধায়ক৷ রাজ্যসভায় এক জন প্রার্থীকে জিততে পেতে হবে ৩৭টি ভোট৷ আট প্রার্থীকে জেতাতে বিজেপির প্রয়োজন ২৯৬টি ভোট৷ তাঁদের পক্ষে রয়েছে ২৮৬টি ভোট (বিজেপি: ২৫২, আপনা দল: ১৩, নিষাদ দল: ৬, এসবিএসপি: ৬, আরএলডি: ৯)৷ সব মিলিয়ে ১০টি ভোট কম রয়েছে বিজেপির৷ রাজ্যসভা ভোটে ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনাকে আরও উস্কে দিয়ে মঙ্গলবার সকালে পদত্যাগ করলেন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় এসপি-র মুখ্যসচেতক মনোজ পাণ্ডে৷ তিনি এবং আরও চার এসপি বিধায়ক মঙ্গলবার বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেন বলে সূত্রের খবর৷
তিন প্রার্থীকে জেতাতে অখিলেশের দলের প্রয়োজন প্রয়োজন ১১১টি ভোট৷ তাদের বিধায়ক সংখ্যা ১০৮৷ কিন্ত্ত তার মধ্যে দু’জন জেলবন্দি৷ এসপির পক্ষে কংগ্রেসের দুই বিধায়ক ও নির্দলের দু’জন প্রার্থী৷ ফলে তিন প্রার্থীর জেতা নিশ্চিত ছিল এসপি-র৷ কিন্ত্ত দলের পাঁচ বিধায়ক বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়ায় পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পডে়ছে৷ অন্য দিকে, কর্ণাটকে পরিষদীয় পাটিগণিত অনুযায়ী চারটি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের তিনটি এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপির একটিতে জেতার কথা৷ কিন্ত্ত আর এক বিরোধী দল জেডিএসের সঙ্গে জোট বেঁধে দু’টি আসনে লড়তে নেমেছে পদ্মশিবির৷ কিন্ত্ত সেখানে ‘ক্রস ভোটিং’ বুমেরাং হতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলের৷
অন্যদিকে, ৬৮ আসনের হিমাচল বিধানসভায় কংগ্রেসের আসনসংখ্যা ৪০৷ এ ছাড়া তিন জন নির্দল বিধায়ক সুখু সরকারকে সমর্থন করছেন৷ অন্য দিকে, বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ২৫৷ অর্থাৎ, সরকার পক্ষের ন’জন বিধায়ক বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিলেই সঙ্কটে পড়বে সুখু সরকার৷