দিল্লি, ১২ ফেব্রুয়ারি– বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খুব জোর গলায় বলেন তিনি সৎ, জীবনে কখনও কারুর কাছ থেকে এক টাকা নিজের স্বার্থে নেননি৷ যদিও তাঁর কথার বিরুদ্ধে বিরোধীরা নানান টিপ্পনি কাটে৷ কিন্তু নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করেছিল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর যে রিপোর্ট পেশ করেছে তা দেখার পর বিরোধীদের মুখে কুলুপ এটে যাওয়ার কথা৷ কারণ রিপোর্ট বলছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দেশের সবথেকে গরিব মুখ্যমন্ত্রী৷
২০২৩ সালে ভারতের সব মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করেছিল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর৷ তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের সবথেকে ধনী মুখ্যমন্ত্রী হলেন, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি৷ স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে, তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা! যা ভারতের অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীর সম্মিলিত সম্পদের থেকেও বেশি৷ আর ভারতের সবচেয়ে কম সম্পদ রয়েছে যে মুখ্যমন্ত্রীর, তিনি আর কেউ নন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা৷ স্থাবর সম্পত্তি বলতে কিছু নেই তাঁর, সবটাই অস্থাবর সম্পত্তি৷
তিনিই আসলে ভারতের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর সম্পদ ১ কোটি টাকার নীচে৷ তাঁর সহজ সরল জীবন যাত্রা নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়৷ বিদেশ সফরে গিয়েও কীভাবে শুধু মুডি় খেয়ে থেকে খরচ বাঁচান, সেই কাহিনিও সুপরিচিত৷ তাঁর সম্পত্তির ছবিতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহজ-সরল জীবনযাত্রার ছবিটা স্পষ্ট৷ ‘দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রী’র তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন৷ সর্বশেষ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, সিপিআই(এম) নেতার সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি টাকা৷ আর ১ কোটি টাকার সামান্য বেশি সম্পত্তি নিয়ে দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর৷
অন্যদিকে, ধনী মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত জগনমোহন রেড্ডির পরই আছেন, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমু খান্দু৷ তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৬৩ কোটি টাকা৷ ওডি়শার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে রয়েছে ৬৩.৮৭ কোটি টাকার সম্পত্তি৷ তিনি আছে ধনীতমদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে৷ এরপর আছেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও, সম্পত্তির পরিমাণ ৪৬ কোটি টাকা৷ পঞ্চম স্থানে আছেন পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী র সম্পদের মালিক এন রঙ্গস্বামী, তিনি ৩৮ কোটি টাকার মালিক৷ এছাড়া, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সম্পত্তি রয়েছে ১৭ কোটি টাকার, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার সম্পত্তির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা৷
এডিআর-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের মোট ২৯ জন ‘কোটিপতি’ মুখ্যমন্ত্রীর গড় সম্পদের পরিমাণ ৩৩.৯৬ কোটি টাকা৷এডিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে ঋণ সবথেকে বেশি রয়েছে তেলঙ্গানার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের৷ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৩.৫ কোটি টাকা, আর ঋণ ছিল প্রায় ৮.৮ কোটি টাকা৷ এই তালিকায় কেসিআর-এর পরই ছিলেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই৷ তাঁর সম্পদ ছিল ৮.৯২ কোটি টাকা, আর ঋণ ৪.৯ কোটি টাকা৷ তৃতীয় স্থানে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে৷ মোট সম্পদ ১১.৬ কোটি টাকা এবং ঋণ রয়েছে ৩.৭৫ কোটি টাকার৷ তবে, ঋণ তালিকায় প্রথম দুজন এখন আর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে নেই৷