স্কুলে তেষ্টায় গলা ফাটলেও জল ছোঁয়ার অধিকার ছিল না তাঁর।কুয়াের পাশে অপেক্ষায় থাকতেন যদি কোনও উঁচু জাতের কেউ দয়া করে তাঁর গলায় ঢেলে দেয় কয়েক ফোঁটা জল।দেশের আইনপ্রণেতা আম্বেদকরের নিজের জীবনীতে পাওয়া যায় এই লাইনগুলি।সমস্যাটা অন্তর দিয়ে বুঝেছিলেন ড.বি আর আম্বেদকর।তাই হয়তাে দেশের বুকে অনন্তকাল ধরে বাসা বেঁধে থাকা জাতিভেদের এই অন্ধকারকে চিরতরে মুছে ফেলতে সংবিধানে রেখেছিলেন মুসলিমদের আলাদা অধ্যায়।
কিন্তু না,একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার এতবছর পরও বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে জাতের নামে নৃশংস এই বজ্জাতি।তাও আবার আম্বেদকরের নিজের রাজ্যে,যদিও তা এখন যােগী-রাজ্য নামেই বেশি পরিচিত উত্তরপ্রদেশ।খাতায়-কলমে আষাঢ় পড়লেও সেভাবে বৃষ্টির দেখা নেই এখনও।জলের অভাবে ধুঁকছে গােটা দেশ।পুকুর,কুয়াে থেকে শুরু করে নদী,নালা খাঁ-খাঁ করছে জলের সমস্ত উৎস।এই মুহুর্তে চেন্নাইয়ের পাশাপাশি ভয়াবহ অবস্থা উত্তরপ্রদেশেও।এই রাজ্যের বুন্দেলখণ্ড জেলার দশা আরও করুণ।বৃষ্টির অভাবে একলহমায় যেন মরুভূমির আকার নিয়েছে এই জেলা।তীব্র জলসংকটের মাঝে যােগী রাজ্যের এই জেলায় চলছে জাতের খেলা।
দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে জল অধিকার।জাতের ভিত্তিতে চলছে জলের বাঁটোয়ারা।একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা আপনার কাছে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক বুন্দেলখণ্ডে।জলের অভাব ঘোচাতে এখানে সরকারি যে জলের ট্যাঙ্ক আসে,সে জলের বেশির ভাগটাই যায় উচ্চবর্ণের গ্রামে।আর উচ্চবর্ণের দয়ায় সরু পাইপে একটা অংশ যায় দলিতদের জন্য।কিন্তু সে জলে ঘোচে না অভাব।কখনও আবার দলিতদের জন্য ওই সরু পাইপটারও দেখা পাওয়া যায় না উচ্চবর্ণের দাপটে।
স্থানীয়দের দাবি,যে কয়টি হাতকল রয়েছে গ্রামে,তার সবটাই অধিকার করে রেখেছে উচ্চবর্ণের লােকেরা।ওই কল ছোঁয়ার অত্যাচার অধিকার নেই নীচু বর্ণের।তন্দুরা গ্রামের দলিত বাসিন্দা নিতু কুমারীর কথায়,’দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে থাকতে যদি ওদের মনে দয়া হয়,তবে উঁচু থেকে আমাদের পাত্রে জল ঢেলে দেয় ওরা।কিন্তু এক পটের বেশি কখনও নয়।’তাঁরই কথায়,জলের জন্য তন্দুরা গ্রাম থেকে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার হেঁটে গেলে একটি দলিত গ্রাম রয়েছে।দলিতদের জন্য ওখানেই রয়েছে একটি হাতকল।গ্রামের দলিতদের জন্য ওই একটি কল শুকিয়ে আসছে,ফলে একটি পাত্রের বেশি জল নেওয়ার অনুমতি নেই সেখানে।ফলে জলের অভাবে সাংঘাতিক পরিস্থিতি এখানে তৈরি হয়েছে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।