চণ্ডীগড়, ৫ ফেব্রুয়ারি – চণ্ডীগড় পুরসভার মেয়র নির্বাচন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল সুপ্রিম কোর্ট। যে পদ্ধতিতে বিজেপি নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন সেখানে আপ-কংগ্রেসের জোট প্রার্থীকে হারিয়েছেন, তাতে গণতন্ত্রকে ঠাট্টা করা হয়েছে বলে মত শীর্ষ আদালতের। চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে কংগ্রেস-আপ জোটকে হারিয়ে জেতেন বিজেপি প্রার্থীরা। কিন্তু সেই নির্বাচনে বিরোধীদের ৮ টি ভোট বাতিল করে বিজেপিকে অবৈধভাবে জিতিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে। একটি ভিডিও ফুটেজে প্রিসাইডিং অফিসারের আচরণ সন্দেহজনক দেখিয়েছিল। সেই অভিযোগেই সিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মেয়র নির্বাচনের সময় প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহা ব্যালট পেপার বিকৃত করেছিলেন। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’’ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পুরপ্রতিনিধিদের নির্ধারিত বৈঠকের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। আপ-কংগ্রেস জোটের আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ নরেন্দ্র মোদি সরকার তথা বিজেপির কাছে ‘বড় ধাক্কা’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত ৩০ জানুয়ারি মেয়র নির্বাচন ছিল চণ্ডীগড়ে। বিজেপিকে রুখতে ওই নির্বাচনে যৌথ ভাবে লড়াইয়ে নেমেছিল কংগ্রেস এবং আপ। পুরপ্রতিনিধিদের ভোটের হিসাবে প্রথমে এগিয়েও গিয়েছিলেন আপ-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী কুলদীপ সিংহ। মোট ৩৬টি বৈধ ভোটের মধ্যে জোট পায় ২০টি। অন্য দিকে, বিজেপির মেয়র পদপ্রার্থী মনোজ সোনকর পান ১৬টি ভোট। কিন্তু পরে জোটপ্রার্থী কুলদীপ সিংহের পাওয়া ৮টি ভোটকে বাতিল ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহা।
আপ-কংগ্রেস জোটের অভিযোগ, গণনার ঠিক আগে অনিল নিজেই কলম দিয়ে কয়েকটি ব্যালটে ‘দাগ’ দিয়েছিলেন। পরে সেগুলিই বাতিল করেন তিনি। মেয়র নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে ভোট দেন চণ্ডীগড়ের বিজেপি সাংসদ কিরণ খের। বিরোধী প্রার্থীর ৮টি ভোট বাতিল হওয়ায় তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১২তে। ১৬টি ভোট পেয়ে ৩৫ আসনের চণ্ডীগড় পুরনিগমে জয় পায় বিজেপি। ভোট বাতিলের ঘোষণা হওয়ার পরেই পুরনিগমে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আপ এবং কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধিরা। জোটের তরফে প্রথমে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টে আবেদন জানানো হলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এর পরে কুলদীপ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
বিতর্কিত চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচন নিয়ে সোমবার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল সুপ্রিম কোর্ট। ব্যালট গণনার সময় তাঁর ‘ন্যক্কারজনক ভূমিকা’র জন্য প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহাকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করলেন প্রদান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, “স্পষ্টতই তিনি ব্যালট পেপারে কারচুপি করেছেন। তিনি কি এভাবেই নির্বাচন পরিচালনা করেন? এটা গণতন্ত্রের উপহাস। এটা গণতন্ত্রের হত্যা। গণতন্ত্রকে এইভাবে খুন হতে দেওয়া যায় না। এই ব্যক্তির বিচার হওয়া উচিত।” শুধু প্রিসাইডিং অফিসারকে তিরস্কার করাই নয়, চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচন সম্পর্কিত সমস্ত ব্যালট পেপার এবং ভিডিয়োগ্রাফি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ৭ ফেব্রুয়ারিতে চণ্ডীগড় পুর কর্পোরেশনের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই বৈঠকও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ফলে, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি চণ্ডীগড়ে আবার মেয়র নির্বাচন হবে?