দিল্লি, ৫ ফেব্রুয়ারি– ফের মসনদে বসতে অযোধ্যার রাম মন্দির যে মোদির মোক্ষম অস্ত্র তা মেনে নিয়েছে সব বিরোধী শিবিরই৷ বিশেষ করে দক্ষিণ বিজয়ের ক্ষেত্রে অযোধ্যার রামমন্দির গেরুয়া শিবিরের পথ কতটা মসৃণ করে দিল তা আর কারও গোপন নয়৷ এজন্য উত্তর ভারতের সঙ্গে দক্ষিণের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক তুলে ধরতেও মরিয়া প্রধানমন্ত্রী৷ ঘন ঘন দক্ষিণ ভারত সফর করেছেন তিনি৷
আর মোদির এই লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে দিয়েছে কর্ণাটকের একমাত্র কংগ্রেস সাংসদ ডিকে সুরেশের পৃথক দক্ষিণ ভারত রাষ্ট্রের দাবি৷ কংগ্রেস সাংসদের এই দাবিকে হাতিয়ার করে বিচ্ছিন্নতাবাদকে উস্কাসি দেওয়ার অভিযোগে তুলে পথে নেমেছে কর্ণাটক বিজেপি৷ দক্ষিণের বাকি রাজ্যগুলিতেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই ইসু্যতে পথে নামতে চলেছে গেরুয়া শিবির৷ তারসঙ্গে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন পুত্র দয়ানিধির সনাতন ধর্ম বিরোধী মন্তব্য নিয়ে পদ্ম শিবির আগেই গোটা দক্ষিণ ভারত জুডে় হিন্দু ধর্ম বিপন্ন বলে প্রচার চালাচ্ছে৷ এবার কর্ণাটকের কংগ্রেস বিধায়কের বক্তব্য তাদের হাতে নয়া অস্ত্র তুলে দিয়েছে, মনে করছে গেরুয়া শিবির৷
অন্যদিকে, এই সময়ই দিল্লিতে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে ধর্নায় বসতে চলেছেন দক্ষিণের তিন অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে এই ধর্নার উত্তসূরী কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই৷ তিনি আগেই বকেয়া চেয়ে দিল্লিতে ধর্নায় বসেছেন মমতা৷ সেই পথে হেঁটেই এবার সিপিএম দিল্লির রাজপথে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যবিরোধী আচরণ ও বঞ্চনার প্রতিবাদে তাই ৮ ফেব্রুয়ারি পাওনা আদায়ের দাবিতে দিল্লির যন্তর মন্তরে দিল্লিতে ধরনায় বসবে মালয়ালি রাজ্যের এই বাম দল৷ নেতৃত্বে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন৷ তাঁর সঙ্গী হচ্ছেন গোটা মন্ত্রিসভা এবং এলডিএফ বিধায়ক দল৷ পরদিন ধর্নায় বসবেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি৷ দলের সব সাংসদ, মন্ত্রী ও বিধায়কদের ধরনায় যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন৷ বকেয়ার দাবির সঙ্গে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের সঙ্গে কেরলের বাম সরকারের দ্বন্দ্বও উঠে এসেছে সেই ধরনার পেছনের কারণ হিসেবে৷ বারবারই রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে মুখ খুলেছেন কমরেডকুলের নেতারা৷ কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে রাজ্যপাল সরকার বিরোধী কাজ করছেন বলে অভিযোগ পিনারাই বিজয়নদের
অন্যদিকে, দক্ষিণে মোদি বিজয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে চাইছেন কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও৷ দক্ষিণের সমস্ত অবিজেপি দলকে এক ছাতার তলায় আনতে ইতিমধ্যেই সমস্ত অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি শাসিত রাজ্যের বিরোধী দলনেতাদের ধরনায় যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি তার দলের৷
মুখ্যমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা বাসবরাজ রায়ারেডি দক্ষিণের রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন৷ চলতি সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রীদের আর্থিক উপদেষ্টাদের বৈঠকের তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷ দিল্লি দক্ষিণের রাজ্যগুলির সঙ্গে বঞ্চনা করছে এই অভিযোগকে হাতিয়ার করেই এক ছাতার তলায় সমস্ত অবিজেপি দলগুলিকে আনতে মরিয়া চেষ্টা করছে সিদ্দারামাইয়া৷ এলডিএফ সরকারের শিল্পমন্ত্রী পি রাজীবের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে ঘুরপথে অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ করছে কেন্দ্র৷ একই অবস্থান মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের ক্ষেত্রেও৷ আর কেরল থেকে জিএসটি বাবদ যে অর্থ আদায় করেছে মোদি সরকার, তার মাত্র ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর অভিযোগ, যৌথ প্রকল্পে গত অর্থবর্ষে কেরলের জন্য ৩০ হাজার কোটি বরাদ্দ করলেও চলতি বছরে তা কমিয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে৷ আবাস যোজনায় বাডি় তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছে৷ যেখানে রাজ্য সরকার নিজেই প্রতি বাডি় বাবদ ৫ লক্ষ টাকা করে দেয়৷ কেরলের ক্ষেত্রে প্রতিটা প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সেই অর্থ উত্তরপ্রদেশ-সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যের উন্নয়নে বরাদ্দ করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে বিজয়ন সরকারের কয়েকশো কোটি টাকা পাওনা রয়েছে৷ বারবার সরকারের তরফে চিঠি দিয়ে বা দপ্তরের মন্ত্রীরা দিল্লিতে এসে দরবার করলেও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি৷
দক্ষিণ ভারত থেকে কেন্দ্রীয় সরকার যে বিপুল রাজস্ব আদায় করে তার সামান্যই রাজ্যগুলি ফেরত পায়৷ রাজস্ব ভাগ বাটোয়ারার কাজ করে থাকে অর্থ কমিশন৷ অথচ কমিশনের বিচার্য ঠিক করার সময় রাজ্যগুলির মতামত নেওয়া হয় না৷ এই সমস্ত বিষয়ে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির দাবিদাওয়া একত্রে দিল্লির দরবারে তুলে ধরাই জোট গঠনের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন কর্ণাটকের উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার৷
তবে সাংসদের পৃথক রাষ্ট্র দাবি যাতে তাদের চেষ্টায় বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তারজন্য কংগ্রেস সুরেশের দাবির তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে তুলে ধরবে বলে ঠিক করেছে৷