নিউ দিল্লি, ১ ফেব্রুয়ারি: সামনেই ২০২৪ লোকসভা ভোট। তার আগে আজ সংসদে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটাই তাঁর ষষ্ঠ বাজেট। পাশাপাশি, এটি দ্বিতীয় মোদী সরকারের শেষ বাজেট। আজ, বৃহস্পতিবার বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, গত দশ বছরে অর্থনীতিতে ভারত গভীর ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় মেয়াদে আমাদের সরকার সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাসের দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করেছে”।
এদিন অর্থমন্ত্রী দেশের চারটি প্রধান স্তম্ভ – দরিদ্র, মহিলা, যুব এবং অন্নদাতা (কৃষক)-এর উপর গুরুত্ব আরোপ করার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে ভোটের আগে আয়করে নতুন করে কোনও ছাড়ের ঘোষণা তিনি করেননি। অর্থাৎ বর্তমানে দেশের আয়কর কাঠামো অপরিবর্তিত থাকল। অপরিবর্তিত থাকছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর। নতুন কর কাঠামোয় ৭ লক্ষ টাকা অবধি কোনও আয়কর নেই। সেই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত দশ বছরে প্রত্যক্ষ কর আদায় দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোদি জমানায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই।
ভোটের আগে পেশ করা এই বাজেটে দেশের মানুষের কাছে বেশ কিছু প্রত্যাশা পূরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন দ্বিতীয় মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ সরকার চালানোই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার দিতে বদ্ধপরিকর। আমাদের লক্ষ্য সব কা সাথ সব কা বিকাশ। জিএসটিতে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতির বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন অর্থনৈতিক করিডর গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে। ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের সব শ্রেণীর মানুষ যাতে সমস্ত সুবিধা পায়, সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা।’
নির্মলার এবারের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে মহিলাদের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মহিলাদের উন্নয়নে ১ কোটি মহিলার লাখপতি দিদি হওয়ার সুযোগ। সেজন্য আনা হচ্ছে বিশেষ প্রকল্প। আমরা তিন তালাক প্রথা রদ করেছি। মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের বিনামূল্যে জরায়ুর ক্যান্সারের টিকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ ৯ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের বিনামূল্যে জরায়ুর ক্যান্সারের টিকা দেবে কেন্দ্র সরকার।’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, আয়ুষ্মান ভারতের আওতায় দেশের সমস্ত আইসিডিএস ও আশা কর্মীদের আনা হয়েছে।
যুব সমাজের উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাজেটে বড় কোনও দিশা দেখা যায়নি। যদিও বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট পেশের সময় বলেন, ‘আমাদের সরকারের প্রতি দেশের যুব সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা বেড়েছে। চাকরি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সুযোগ বেড়েছে। মুদ্রা যোজনায় ৪৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। দেশের উন্নয়নে সবাই যাতে সামিল হয় সেটাই আমাদের সরকারের চেষ্টা।’
এপ্রসঙ্গে এদিন বাজেটে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরও কয়েকটি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ৩৯০ টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। এছাড়া দেশে অনেক নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা হবে। বলেন, ‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশনে ১ কোটি ৪০ লক্ষ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৩০০০ নতুন আইটিআই তৈরি করেছি। ৭ টি নতুন আইআইটি তৈরি করা হয়েছে।’
নির্মলার উল্লেখিত বাজেটে চতুর্থ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম কৃষি। তিনি বলেন, ‘কৃষিতে বেসরকারি লগ্নির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দেশে আগের থেকে অনেক বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। ১১ কোটি ৮০ লক্ষ কৃষক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব, কৃষক ও মহিলাদের উন্নয়নে সর্বদা কাজ করে যান। সামুদ্রিক মাছের রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তৈল্য বীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতায় জোর দেওয়া হয়েছে। দুধ উৎপাদনে ভারত বিশ্বের মধ্যে সর্ব বৃহৎ।’
দেশের গরিব মানুষের চিরস্থায়ী আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরাসরি বড় কোনও দিশা পাওয়া যায়নি এই সীমিত সময়ের বাজেটে। সম্বল সেই বিনা পয়সার রেশন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিয়েছি। ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার উপরে উঠে এসেছেন। এমনকি ভারত সারা পৃথিবীর খাদ্যভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। সরকারের পদক্ষেপে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। ১ কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হবে। খুব কম সুদে ঋণ দেওয়া হবে। মধ্যবিত্তদের জন্য নিজেদের বাড়ি প্রকল্প। পিএম আবাস যোজনায় আগামী পাঁচ বছরে আরও ২ কোটি বাড়ি তৈরি হবে।’
অর্থমন্ত্রী আজ বাজেট বক্তৃতায় আয়করে এবার কোনও পরিবর্তন করেননি। ফলে দেশজুড়ে চাকরিজীবী ও ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা অসন্তোষের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রীতি মেনে এবার কর কাঠামো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আয়করের হারে কোনও পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ আয়করের কাঠামো অপরিবর্তিত থাকছে। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করও অপরিবর্তিত থাকবে। ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় দেওয়া হবে।’
অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় পরিবহন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশে ১৪৯টি বিমানবন্দর তৈরি হয়েছে। এবার বন্দর করিডর তৈরি হবে। হাই ট্রাফিক করিডরও তৈরি হবে। রেল যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের উপর জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি ৩টি বিশেষ রেল করিডর তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। ৪০ হাজার সাধারণ রেলের কোচকে বন্দে ভারতের আদলে বানানো হবে বলে জানিয়েছেন।
পর্যটনের ক্ষেত্রেও অর্থমন্ত্রী এই সাময়িক বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এব্যাপারে তিনি দেশের সমস্ত রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লাক্ষাদ্বীপের পর্যটনে বিশেষ জোর দেওয়া হবে। দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে উন্নয়নের জন্য সব রাজ্যকে বিনা সুদে ঋণ দেবে কেন্দ্র। সব রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই আমরা। ‘
তবে যেসব রাজ্যে বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানে দুই সরকারের দড়ি টানাটানি অবশ্যম্ভাবী। মূলত যেখানে রাজ্য সরকারের ভূমিকা রয়েছে, সেখানে অর্থমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকরী হবে সেটা নিয়ে রয়েছে একাধিক সংশয়।
দেশের মানুষের বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও এবারের এই বাজেটে বাদ যায়নি প্রতিরক্ষার বিষয়। নির্মলা বলেন, ‘প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ১১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১১ লক্ষ কোটি টাকা।”
অর্থমন্ত্রী পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে এবারের বাজেটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর হবে বলে জানিয়েছেন।