চণ্ডীগড়, ৩০ জানুয়ারি – চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে ইন্ডিয়া জোটকে হারিয়ে মেয়রের কুর্সি দখল করল বিজেপি। জোট বেঁধেও গেরুয়া শিবিরকে হারাতে পারল না আপ এবং কংগ্রেস। চণ্ডীগড়ের এই নির্বাচনের আগেই জয় ঘোষণা করে দিয়েছিল আম আদমি পার্টি। তাঁদের দাবি ছিল, আপ এবং কংগ্রেস জোট বাঁধছে মানেই এই নির্বাচনে সহজ জয় আসবে ইন্ডিয়া শিবিরে। তেমনটাই হওয়ার কথাও ছিল। জানা গেছে, বিজেপির মনোজ সোনকার চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচন জিতেছেন এবং সব মিলিয়ে বিজেপি জিতেছে ১৬টি আসন। আপ আর কংগ্রেসের জুটেছে ১২টি আসন। ৮টি ভোট বাতিল হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভোটের আগে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল বিরোধী শিবির। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার ধাক্কা খেল ইন্ডিয়া।
নেহাতই এক পুরসভার মেয়র নির্বাচন। তবে মেয়র নির্বাচন হলেও, গোটা ভারতের চোখ ছিল এই নির্বাচনের দিকে।বলা হচ্ছিল ইন্ডিয়া জোটের ‘লিটমাস টেস্ট’ এই নির্বাচন। আসলে, চণ্ডীগড় পুরসভার মেয়র নির্বাচনে যৌথভাবে লড়েছিল আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেস। এই প্রথম আসন ভাগাভাগি করেছিল ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক দল। কিন্তু চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে একসঙ্গে লড়াই করেও হারতে হল ইন্ডিয়া জোটকে।
চণ্ডীগড় বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। সেখানে গেরুয়া শিবিরকে চ্যালেঞ্জ করতে জোট করে কংগ্রেস এবং আপ। মেয়র পদের জন্য প্রার্থী দিয়েছিল আপ। তাঁকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। সিনিয়র ডেপুটি মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র পদে জন্য প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস, যাকে সমর্থন করেছিল আপ। তবে, কার্যক্ষেত্রে জোটে বিশেষ লাভ হয়নি। জয়ের পরই, সোশ্যাল মিডিয়ায় জেপি নাড্ডা লেখেন, “মেয়র নির্বাচনে জয়লাভের জন্য বিজেপির চণ্ডীগড় শাখাকে অভিনন্দন। প্রধানমন্ত্রীর শ্রী নরেন্দ্র মোদিজির নেতৃত্বে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি রেকর্ড উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে। ইন্ডিয়া জোট এখানে তাদের প্রথম নির্বাচনী লড়াই করেছিল। তারপরও তারা বিজেপির কাছে হেরেছে। এর থেকেই স্পষ্ট, না তাদের জোটের অঙ্ক কাজ করছে, না তাদের রসায়ন।”
তবে, বিজেপির এই জয় প্রশ্নাতীত নয়। মেয়র নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী মনোজ কুমার সোনকার মোট ৩৬টি ভোটের মধ্যে ১৬টি ভোট পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রাক্তন সদস্য তথা সাংসদ কিরন খেরের ভোট রয়েছে। অন্যদিকে, ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী কুলদীপ সিং পেয়েছেন ১২টি ভোট। তিনি অবশ্য আরও ৮টি ভোট পেয়েছিলেন। যেগুলিকে অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করা হয়েছে। ৮টি ভোট বাতিল হতেই আপ-কংগ্রেসের যৌথ প্রার্থী কুলদীপ সিং পরাজিত হন। এই ৮টি ভোট অবৈধ ঘোষণা করায় পৌরসভা কক্ষে তীব্র বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আপ পরে জানিয়েছে, ৮টি ভোট অবৈধ করার সিদ্ধান্তকে তারা পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করবে।
প্রথমে এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ১৮ জানুয়ারি। সেদিন প্রিসাইডিং অফিসারের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ভোট বাতিল করা হয়। মঙ্গলবার ফের ভোটগ্রহণ হয়। ভোট গণনার সময় দেখা যায়, বিজেপি ১৭টি এবং বিরোধী শিবির ১৯টি ভোট পেয়েছে। কিন্তু এর পরই বদলে যায় ফলাফল। প্রিসাইডিং অফিসার ৮টি ভোট বাতিল ঘোষণা করে দেন। ফলাফল গিয়ে দাঁড়ায় বিজেপি ১৬ এবং ইন্ডিয়া জোট ১২। বিজেপি প্রার্থী মনোজ সোনকার মেয়র ঘোষিত হন। প্রিসাইডিং অফিসারের সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আপ-কংগ্রেসের দাবি প্রিসাইডিং অফিসারের ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত অনৈতিক। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছে বিরোধী শিবির।
চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচন ছিল বিজেপির ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। কারণ, উত্তর ভারতে এই প্রথম সরাসরি ইন্ডিয়া বনাম বিজেপির লড়াই হয়েছে। আর সেই প্রেস্টিজ ফাইটে জিতে শেষ হাসি হাসল গেরুয়া শিবির। বিহারে নীতীশ কুমারের পালটির পর চণ্ডীগড়ের ফলাফল পালটে যাওয়া, দুটোই ইন্ডিয়ার জন্য বিরাট ধাক্কা। যদিও এই ভোট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, প্রথমে কংগ্রেস এবং আপের জোট ২০টি ভোট পেয়েছিল। কিন্তু পরে ৮টি ভোট বাতিল করা হয়। সেই ভোট কেন বাতিল করা হল, তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এই ভোট বাতিলের ফলে ১৬টি ভোট পেয়ে ৩৫ আসনের চণ্ডীগড় পুরনিগম জিতে নিয়েছে বিজেপি।