বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের যে অর্থনৈতিক সমীক্ষা সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, তাতে চলতি আর্থিক বছরে আর্থিক বিকাশ বা জিডিপি’র হারের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৭ শতাংশ।
এই লক্ষ্যমাত্রা গত আর্থিক বছরের ৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধির চেয়ে অধিক। যদি সরকারের ধার্য করা ৭ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ভারত পুনরায় একবার বিশ্বের দ্রুততম উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
গত আর্থিক বছরে আর্থিক বিকাশের হার নেমে গিয়েছিল ৬.৮ শতাংশে, যে হার পাঁচ বছরে ভারতের আর্থিক বিকাশের নিরিখে সর্বনিম্ন। এর ফলে আর্থিক বিকাশের নিরিখে ভারত পিছিয়ে পড়েছিল চিনের কাছে।
এদিনের আর্থিক বিকাশের রিপোর্ট তৈরি করেছে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমুরথি সুব্রহ্মনিয়ন। অর্থনীতির শ্লথগতির ফলে ভারত রাজস্ব ঘাটতির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে, কারণ ইতিমধ্যে কর আদায় কমে গেছে এবং কৃষিক্ষেত্রে সরকারি খরচ বেড়েছে।
কিন্তু সরকার আশাবাদী যে আগামী দিনে বিনিয়ােগ বাড়বে কারণ ভােগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে এবং সেই সঙ্গে বাড়বে ব্যাঙ্ক প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ। এর ফলেই আর্থিক বিকাশের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৭ শতাংশে বলে জানানাে হয়েছে আর্থিক সমীক্ষার রিপাের্টে।
জিডিপি বাড়ার সম্ভাবনার পিছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে মুখ্য হল দেশে জাতীয় উৎপাদনশীলতা সংক্রান্ত অর্থনীতির (ম্যাকরাে ইকনমিক্স) পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং পরিকাঠামো সংস্কারের কাজ এখনও চলছে।
তবুও অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এ বলে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে যে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশিও হতে পারে আর্থিক বিকাশের হার আবার কমও হতে পারে সেই হার।
সমীক্ষায় জানানাে হয়েছে গ্রামীণ মজুরির গড় একেবারে নীচে নেমে গিয়েছিল যার ফলে মানুষর খরচের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। যদি খরচ করার সাধ্য না থাকে তাহলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে এবং ভােগ্যপণ্যের চাহিদাও কমবে।
কিন্তু সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মাঝামঝি গ্রামীণ মজুরিতে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যার ফলে গ্রামীণ চাহিদা এখন উর্ধ্বমুখী। ২০১১-১২ সালে বিনিয়ােগ কমে গিয়েছিল, সেই বিনিয়ােগ এখন ২০১৯-২০ সালে বাড়তে শুরু করেছে কারণ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানানাে হয়েছে সমীক্ষায়।
২০১৮-১৯ সালে সরকার রাজস্ব খাতে যেভাবে একত্রীকরণের (কনসলিডেশন) পথে হেঁটেছিল, যার ফলে ২০১৭-১৮ সালে রাজস্ব ঘাটতি যেখানে ছিল ৬.৪ শতাংশ, সেটা ২০১৮-১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছিল ৫.৮ শতাংশে।
জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে বার্ষিক উন্নয়ন কমে দাঁড়িয়েছিল ৫.৮ শতাংশ কিন্তু গত মার্চ মাসে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে আর্থিক উন্নয়ন দাঁড়িয়েছে ৬.৮ শতাংশে যদিও এটাও ৫ বছরে বিকাশের সর্বনিম্ন হার।
অপরদিকে শিল্প উৎপাদনে পতন এবং গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার ফলে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে অর্থনীতির গতি আরও শ্লথ হতে পারে। ফলে ৭ শতাংশ বিকাশের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া অসম্ভব না হলেও কঠিন তাে বটেই ।
এই আর্থিক সমীক্ষার পর আজ নির্মলা সীতারমণ পেশ করতে চলেছে দ্বিতীয় মােদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তাঁর সামনে রাজস্ব ঘাটতি সামলানাে হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের মতে সরকারের মাট আয়ে ২০১৮-১৯ সালে খরচের তুলনায় ঘাটতি ছিল ১.৪৬ ট্রিলিয়ন, পরে সংশােধিত হিসেব অনুযায়ী সেই আর্থিক বছরে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪.৮ ট্রিলিয়ন।
এই ঘাটতিকে বাগে আনার জন্য হয় সরকারি খরচ কমাতে হবে, যেটা সম্ভব নয় কারণ উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ হতে পারে না কিংবা বাড়াতে হবে সরকারের আয়। যার ফলে নতুন কর চাপানাের সম্ভাবনা থেকেই যায়। এখন দেখার নির্মলা সীতারমণ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ সামলান আজ।
দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আর্থিক সমীক্ষা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, এই সমীক্ষায় প্রতিটি ক্ষেত্রের বিকাশের কোনও লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখ নেই। মনে হয় সরকার দেশের অর্থনীতির ব্যাপারে খুবই নিরাশাজনক মানসিকতায় ভুগছে।
তিনি বলেন যে, আর্থিক সমীক্ষা এদিন সংসদে পেশ করা হয়েছে, সেটি সদর্থক এবং উৎসাহব্যঞ্জক নয়। সমীক্ষায় অর্থনীতির শ্লথ গতির উল্লেখ করা হয়েছে, অপরদিকে কমে যাচ্ছে কর আদায়।
সরকার নতুন আয়ের উৎসের সন্ধান দিতে পারেনি কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য কিংবা পঞ্চদশ আর্থিক কমিশনের সুপারিশগুলির প্রভাব অর্থনীতিতে কীভাবে সামলাবে সরকার তারও দিশার সন্ধান নেই সমীক্ষায়।
এগুলি কোনওটাই কিন্তু সরকারের সদর্থক ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ নয় বলে মন্তব্য করেন চিদম্বরম।