কলকাতা, ২০ জানুয়ারি – এ যেন সেই সুবোধ ঘোষের ‘অযান্ত্রিক’ গল্পের প্রতিচ্ছবি। সাবেক আমলের ফোর্ড গাড়ি , যার চেহারায় ‘ভিনটেজ’ ছাপ, তুবড়ে যাওয়া বনেট, ধুলোয় মলিন কাঁচে অপটু হাতে আঁকিবুকি কাটা। চারটে চাকারও হতশ্রী অবস্থা । এই চার চাকার ফোর্ড গাড়িটি যে আবার কোন দিন রাস্তায় চলবে তা কারও ভাবনাতেও ছিল না। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করল ‘দা স্টেটসম্যান’ পত্রিকার কর্তাদের লেগে থাকা উদ্যোগ। ২০২৪-এর স্টেটসম্যান পত্রিকা আয়োজিত গাড়ির সমাবেশে ফের দেখা যাবে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী ‘ফোর্ড মডেল টি’-র এই গাড়িটিকে।
১৯২৮ সালে নির্মিত ‘ফোর্ড মডেল টি’ স্টেটসম্যানের মালিকানাধীন গাড়িটি বহু বছর পর ‘স্টেটসম্যান ভিনটেজ এবং ক্লাসিক কার গাড়ির সমাবেশে অংশ নেবে। গাড়িটি ব্যবহার করতেন ‘দা স্টেটসম্যান’- পত্রিকার এডিটর। প্রায় দুই দশক আগে ‘দা স্টেটসম্যান’ এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই গাড়িটি নিয়েই অংশ নিয়েছিলেন গাড়ির সমাবেশে । এর বেশ কয়ে বছর পর শুরু হয় নানান যান্ত্রিক সমস্যা, যার জেরে শেষ পর্যন্ত অচল হয়ে পড়ে এই গাড়ি। ‘অযান্ত্রিক’ গল্পের ‘জগদ্দল’- নামের তকমাকে সার্থক করে স্টেটসম্যান হাউসে চত্ত্বরে বছরের পর বছর পড়ে ছিল সে।
বহু বছর পর স্টেটসম্যান পত্রিকার অবহেলিত সেই ‘জগদ্দল’ গাড়িটিকেই ফের ‘করিতকর্মা’ করে তুলেছেন পুরোনো গাড়ি উদ্ধারে বিশারদ রাজীব ঘোষ। প্রাচীন এই গাড়িটির পুরোনো রোগ সারিয়ে তাতে ফের প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তিনি জানান, গাড়িটির ইঞ্জিন ব্লক হয়ে যাওয়ায় ফাটল ধরেছিল এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশও ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গাড়ির গিয়ার বক্সটিও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেরামত করা হয়েছে। রাজীব ঘোষ বলেন, ‘এখন সে খুব ভাল কাজ করছে এবং গাড়িটিকে একটি নতুন জীবন দেওয়া হয়েছে।’ স্টেটসম্যান পত্রিকার বহু বছরের বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই গাড়িটির গায়ে এখন নতুন রংয়ের পোচ, তার বিশ্রামের জন্য তৈরী হয়েছে একটি নতুন কাপড়ের ছাদ । মি: ঘোষ বলেন, অনুষ্ঠানের পর গাড়ির ফাইন টিউনিং করা হবে।
আজ থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগে ‘ফোর্ড মোটরস’-এর অন্যতম জনপ্রিয় গাড়ি ছিল ‘ফোর্ড মডেল টি।’ কর্দমাক্ত, কাঁচা রাস্তায় গাড়ি চালানো যেত বলে বাংলার অনেক জমিদারেরই ফোর্ড মডেল ছিল। দুই দশক আগের এই গাড়ির পুনরুদ্ধার ‘দা স্টেটসম্যান ভিনটেজ কার অনুষ্ঠানে বাড়তি রঙ যোগ করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।