ইম্ফল, ২০ জানুয়ারি-– কিছুতেই মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পারছে না কেন্দ্র সরকার। গত তিন মাসে ৬০০-এর বেশি মায়ানমার সেনা সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। মায়ানমার থেকে সীমান্ত এলাকায় এই গতিবিধি রুখতেই এবার কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এবার মায়ানমার সীমান্ত সিল করছে কেন্দ্র। শনিবার একথা জানিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।গত ৩ মে মণিপুরে শুরু হয় মেতেই-কুকি জাতিদাঙ্গা। এই সাত মাস ধরে চলতে থাকা অশান্তিতে এখন পর্যন্ত সরকারি পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, প্রায় শ-দুয়েক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। নিখোঁজ ৩২ জন। জীবন বাঁচাতে ঘর ছাড়তে হয়েছে প্রায় লাখ খানেক মানুষকে । দুষ্কৃতীরা পাঁচ হাজার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ৩৮৬টি ধর্মীয়স্থানে হামলা হয়েছে বলে খবর। অশান্তি আগের তুলনায় কমলেও নতুন বছরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারেনি উত্তপূর্বের রাজ্য।
এরই মধ্যে মায়ানমারের জনতা সরকারের তান্ডবে হাজারে-হাজারে মানুষ মণিপুরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মণিপুর ও মিজোরাম লাগোয়া মায়ানমার। দুই রাজ্যেই সীমান্তবর্তী। ‘ল্যান্ড বর্ডার ক্রসিং’ লাগোয়া মোরে শহর। দুই দেশের আদিবাসীরা ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ভিসা ছাড়া যাতায়াত করতে পারেন। এবার সেই অবাধ যাতায়াতে লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। এ প্রসঙ্গে এদিন অসমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ সীমান্তের মতোই নিরাপত্তার চাদরে মুড়বে মায়ানমার সীমান্তও।” শীঘ্রই মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে সে দেশের আদিবাসীদের ভিসার প্রয়োজন হবে। শেষ হবে ১৯৭০-এর ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ চুক্তি।
সেনাকর্তাদের মতে, প্রথমত মণিপুরে অশান্তির শিকড় রয়েছে আসলে মায়ানমারে। কীভাবে? সেনাকর্তার বক্তব্য, মায়ানমার গৃহযদ্ধের প্রভাব পড়ছে মিজোরাম এবং মণিপুর দুই রাজ্যেই। সংঘর্ষ না থামার দ্বিতীয় কারণ, মেতেই ও কুকি দুই গোষ্ঠীর কাছে রয়েছে প্রচুর হাতিয়ার। মনে করা হচ্ছে, চিন থেকে মায়ানমার হয়ে অস্ত্র ঢুকছে বিদ্রোহীদের হাতে। আবার গত তিন মাসে মায়ানমারের প্রচুর সেনা মিজোরামে ঢুকেছে। গৃহযুদ্ধের ফলে মায়ানমারের সেনার ক্যাম্প দখল করেছে আরাকান আর্মি। এর পরই সেখান থেকে ভারতে ঢুকে পড়ে ৬০০ সেনা। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার ভারত মায়ানমার সীমান্ত সিল করতে চলেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।