রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখা হােক। পুনরায় এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে চিঠি পাঠালেন মখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই ‘বাংলা’ নামের সঙ্গে রাজ্যবাসীর আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। রাজ্যের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রাজ্যের পরিচিতি সমার্থক হয়ে গিয়েছে এই নামের সঙ্গে। এই ‘বাংলা’ নামকে মান্যতা দিতে বর্তমান শাসক সরকার কেন্দ্রের প্রস্তাবমতাে প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেছে।
এদিনের চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন চিঠিতে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বাংলার সঙ্গে নেতাজি, মহাত্মা গন্ধি, বিদ্যাসাগর, রামমােহন প্রমুখ মনীষীর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ‘বাংলার নবজাগরণ’ এক বিরাট অধ্যায়। বাংলা ভাষা পৃথিবীর মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। রাজ্যের নাম পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশােধনের যে প্রয়ােজন হয়, তা খুব সাধারণ একটি প্রক্রিয়া।
এর আগে ওড়িশা, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চেন্নাই অনেক রাজ্যেরই নাম পরিবর্তন হয়েছে। মমতার প্রশ্ন, সেক্ষেত্রে এই রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করতে কেন্দ্রীয় সরকারের আপত্তি হচ্ছে কেন?
বুধবার রাজ্যসভায় এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়ে দেন, এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা কোনও অনুমােদন দেয়নি।
এই ‘বাংলা’ নাম খারিজ করা নিয়ে বিধানসভাতেই তীব্র প্রতিবাদে সামিল হতে তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস একজোট হয়।
বামফ্রন্টের সুজন চক্রবর্তী বলেন, এই নামকে মান্যতা দেওয়া উচিত ছিল। বিধানসভাতেই সর্বদলীয় প্রস্তাব নিয়ে ‘বাংলা’ নামটি পাশ করা হয়েছিল। সেই নাম খারিজ করার অর্থ বিধানসভাকে অবমাননা করা।
আবদুল মান্নান বলেন, কেন্দ্র বাংলার একটি দলকে দেখতে পারে না বলে, তাদের সঙ্গে এমন বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। এই আচরণকে ধিক্কার জানাচ্ছি।
বিধানসভাতেই বাংলার নাম পরিবর্তন নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বক্তব্য রাখেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাজই হল এই রাজ্যকে অপমান করা। এই নিয়ে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি প্রস্তাব আকারে দেওয়ার জন্য আগামী দিনে এই বিষয়ে বিধানসভায় আলােচনা করা যায়। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করা জন্য ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঘটনাক্রমের উল্লেখ করেন।
২০১১ সালের ১৯ আগস্ট তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরেই বিধানসভায় সর্দলীয় প্রস্তাব নেওয়া হয়, রাজ্যের নাম ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই পশ্চিমবঙ্গ রাখা হােক। ওই বছরেরই ২ সেপ্টেম্বর বিল পাশ হয়ে যায়। এবং ১৪ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি পাঠানাে হয়।
২০১২ সালের অক্টোবরে ইউপিএ সরকারের আমলে জানানাে হয় এই বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এরপর রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখার জন্য দাবি ওঠে। ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট রাজ্য বিধানসভায় দাবি ওঠে রাজ্যের নাম বাংলাভাষায় ‘বাংলা’, ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ এবং হিন্দিতে ‘বাঙ্গাল’ রাখা হােক।
এরপর দিল্লি থেকে বলা হয়, একই রাজ্যের তিনভাষায় তিন রকম নাম হতে পারে না। এরপর ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিন ভাষাতেই রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখার সর্বদলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিধানসভায়।