ইম্ফল, ১৭ জানুয়ারি – দীর্ঘ সময় ধরে হিংসাত্মক বাতাবরণে থাকা উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু করেছিলেন রাহুল গান্ধি। যাত্রা শুরুর পর ২ দিন কাটতে না কাটতেই নতুন করে আবার অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ল। বুধবার সকালে রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরের সীমান্ত এলাকায় গুলি চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । ঘটনায় একজন পুলিশ কমান্ডোর মৃত্যু হয়। গত বছর মে মাস থেকে শুরু হওয়া হিংসার ঘটনার এখনও কোনও বিরাম নেই মণিপুরে।
বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ফের দৃষ্কৃতীদের হামলার শিকার হলেন মণিপুরের পুলিশ কমান্ডো। রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরের মায়ানমার সীমান্তবর্তী শহর মোরে-তে বুধবার সকাল থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী এবং দুষ্কৃতীদের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। মোরের কাছে এক নিরাপত্তা চৌকিতে বোমা ছোড়ে ও চৌকি লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। আচমকা হামলার শিকার হন এক পুলিশ কমান্ডো। নিহত কমান্ডোর নাম ওয়াংখেম সমরজিৎ। রাজ্য পুলিশের এই কমান্ডো ইম্ফল পশ্চিম জেলার মালোমের বাসিন্দা। তবে, গত বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি মোরে শহরে এক অস্থায়ী পোস্টে নিযুক্ত ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা সেই অস্থায়ী কমান্ডো পোস্টে আরপিজি শেল ছোঁড়ে। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কয়েকটি গাড়ির ক্ষতি হয়। সংঘর্ষের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর একটি ট্রাক মোরেতে ঢোকার সময়ে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা সেটি লক্ষ্য করে গুলি চালায় ।
কয়েকদিন আগে, মায়ানমার সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ মোরে-তে খুন হন এক পুলিশ আধিকারিক। সেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কুকি সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তিকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে পুলিশ। একে কেন্দ্র করে কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নতুন করে হিংসা ছড়ায় মোরেতে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কুকি উপজাতিদের দাবি, মোরে থেকে রাজ্য পুলিশের সব সদস্যদের সরিয়ে দিতে হবে। সেখানে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখতে হবে। রাজ্য পুলিশের উপর থেকে আস্থা চলে যাচ্ছে কুকি সম্প্রদায়ের। তাদের অভিযোগ, কুকি সম্প্রদায়ের অসামরিক ব্যক্তিদের উপরও হামলা চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ। যদিও মণিপুর পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, পাহাড়ি উপত্যকায় লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতীরাই রাজ্য পুলিশের কমান্ডোদের উপর হামলা চালাচ্ছে।
গত বছর মে মাস থেকে শুরু হওয়া হিংসার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলেছে মণিপুরে। কবে, কিভাবে এই ধারাবাহিক হিংসার অবসান ঘটবে তা এখনো অজানা উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের মানুষগুলির।