কলকাতা, ৫ জানুয়ারি: আজ, শুক্রবার সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনার পর রাজ্যপাল এক অডিও বার্তায় রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের রীতিমতো হুমকির সুর শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনার দ্রুত পদক্ষেপ না করলে, ফল ভোগার জন্য তৈরি হোন। একই সঙ্গে রাজ্যপাল এদিন রাজ্য প্রশাসনের তিন গুরুত্বপূর্ণ কর্তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। এই তিন জনের মধ্যে আছেন, রাজ্যের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও ডিজি। সন্দেশখালির ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানতে রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে রাজভবনে তলব করেছেন।
এদিন তিনি এক অডিও বার্তায় প্রচ্ছন্নভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের পদক্ষেপ করার মতো ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। এদিন তিনি বলেন, ‘যে ভয়াবহ ঘটনার খবর সন্দেশখালি থেকে পেয়েছি, তা উদ্বেগজনক ও গ্রহণযোগ্য নয়। গণতন্ত্রে যে কোনও সভ্য সরকারের দায়িত্ব বর্বরতা ও তাণ্ডব বন্ধ করা। সরকার তার প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সংবিধান তার নিজের পথে চলবে। রাজ্যপাল হিসাবে এই ঘটনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে আমি আমার সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষিত রাখছি’।
রাজ্যপাল হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘পেশিশক্তির প্রদর্শন ও কাগুজে বাঘদের দিয়ে কদমতাল করিয়ে বাংলার মানুষের কোনও উপকার হবে না। জঙ্গলরাজ ও গুন্ডারাজ শুধু মুর্খের স্বর্গে কাজ করে। বাংলা কোনও বানানা রিপাবলিক নয়। এব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ করা উচিত। ভোটপূর্ববর্তী এই হিংসা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। এই হিংসার দায় শুধুমাত্র সরকারের ওপর বর্তায়। সরকারের উচিত, চোখ মেলে বাস্তবকে দেখা এবং যথাযথ পদক্ষেপ করা। নইলে এর ফল ভোগার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত’।
উল্লেখ্য, আজ সকালে রেশন দুর্নীতির তদন্তে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। সেখানে তাঁর বাড়িতে গিয়ে ইডি আধিকারিকরা ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়াশব্দ পাননি। অগত্যা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। সেই সময় এলাকার কয়েকশ নারী-পুরুষ জনরোষে ফেটে পড়েন। বিক্ষুব্ধ জনতা ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলা চালায়। তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে। ভয়ে তাঁদের গাড়ি চড়ে পালানোর চেষ্টা করেন আধিকারিকরা। কিন্তু উত্তেজিত জনতা গাড়িতে হামলা চালায় ও ভাঙ্গচুর করে। ইডি আধিকারিকদের কেউ কেউ তখন অটো চড়ে পালিয়ে যান। আবার কেউ সংবাদ মাধ্যমের গাড়িতে গিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন।
কিন্তু সাংবাদিক এবং সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরাও এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পাননি। ইডি-র তদন্ত অভিযানের খবর করতে গিয়ে জনতার হাতে আক্রান্ত হন তাঁরা। তাদের কয়েকজনকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া দেয়। কেড়ে নেওয়া হয় ক্যামেরা ও বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম। একজন চিত্র সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার খবর পেয়েই ক্ষুব্ধ হন রাজ্যপাল।