দিল্লি, ১৯ ডিসেম্বর – ফের করোনার চোখ রাঙানি দেশজুড়ে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সোমবার দেশের সমস্ত রাজ্যকে সতর্ক করে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেরলে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবেশী রাজ্য কর্নাটকে ষাটোর্ধ্ব সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন। মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১,৮২৮ জন। রাজ্যগুলির মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি কেরলে। সোমবার কেরলে আরও ১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এর মধ্যে তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির বাসিন্দা এক ব্যক্তির দেহে জেএন ১ এর ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে ।
গত কয়েক মাস ধরেই ফের ধীরে ধীরে দেশে মাথা চাড়া দিচ্ছিল কোভিড সংক্রমণ। এর মধ্যেই কেরলের তিরুবন্তপুরম জেলায় ৭৯ বছর বয়সি এক মহিলার দেহে মিলেছে করোনা ভাইরাসের নয়া প্রজাতি। এর জেরে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে কেরল-সহ গোটা দেশে। এই অবস্থায় কর্নাটকে ষাটোর্ধ্বদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে। এইসঙ্গে যাঁদের কোমর্বি়ডিটি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে খবর।
উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের নয়া প্রজাতি। কেরলের সত্তরোর্ধ্ব ওই মহিলার পর করোনার নয়া ভ্যারিয়ান্ট জেএন ১-এর হদিশ মিলল আরও এক ব্যক্তির দেহে। এবার তামিলনাড়ুর এক ব্যক্তির দেহে এই সাব-ভ্যারিয়ান্টের হদিশ মিলেছে। যা স্বাভাবিকভাবে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কেবল কেরল বা কর্নাটক নয়, গোটা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। আইএমএ-র কোভিড টাস্ক-ফোর্সের চেয়ারম্যান রাজীব জয়াদেবান জানান, আগে যাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ভ্যাকসিন নেওয়া রয়েছে, তাঁদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম করোনার নয়া ভ্যারিয়ান্ট। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বেড়েছে।
এর মধ্যে তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির বাসিন্দা এক ব্যক্তির দেহে জে এন ১ -এর হদিশ মিলেছে। ওই ব্যক্তি গত অক্টোবরে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ সিঙ্গাপুর থেকেই ওই ব্যক্তির দেহে করোনার নয়া প্রজাতির প্রবেশ হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যগুলিকে কোভিড-সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র।
এদিকে কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডুরাও জানিয়েছেন, কেরলের পরিস্থিতি দেখেই কোনও রকম ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে না। ভাইরাসের নয়া প্রজাতি মেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাঁরা। তবে এখনই ভিড়, জমায়েত, সভা, সমিতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে না। গুন্ডুরাও আরও জানিয়েছেন, কেরল সীমান্ত ঘেঁষা জেলাগুলির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়াও কেরল থেকে আসা যে দর্শনার্থীরা শবরীমালা যাচ্ছেন, তাঁদের দিকেও নজর রাখছে কর্নাটক প্রশাসন।
রাজ্যগুলিকে সতর্ক বার্তায় কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, উৎসবের মরসুমে সংক্রমণের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে রাজ্যগুলিকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার উপর নজরদারি চালাতে হবে এবং দৈনিক রিপোর্ট করতে হবে। আরটি-পিসিআর এবং অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সব রকম স্বাস্থ্য পরিষেবায় জোর দিতে বলা হয়েছে। করোনার নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট অল্প বয়সীদের কাবু করতে পারবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা ।যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে এবং বেশি বয়স্ক, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নয়া ভাইরা ঝুঁকির কারণ হতে পারে । হাসপাতালগুলিতে করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।