• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

শোভনের ফ্ল্যাটে মমতার দূত

'কানন কার?' এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে টানটান উত্তেজনা রাজ্য রাজনীতিতে।

শােভন চট্টোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

‘কানন কার?’ এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে টানটান উত্তেজনা রাজ্য রাজনীতিতে।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাস, রাজ্য সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন তৃণমূলের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা শোভন  চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। এমনকি এর জেরে দলের অন্দরেও কোণঠাসা হতে হয় তাঁকে।

ইস্তফা দেওয়ার পর সাত মাস রাজ্য রাজনীতিতে এই দাপুটে নেতার ভূমিকা আদ্যোপ্রান্ত ধূসর। কিন্তু এই কয়েক মাসে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলেও সমান্য টোল পড়েনি শোভন  চট্টোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তায়। তাই ‘অভিমানী’ শোভন কে ঘরে ফেরাতে মরিয়া তৃণমূল।

তাই রবিবার ছুটির দিনে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের গােলপার্কের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমাের বিশেষ দূত রতন মুখােপাধ্যায়, সূত্রের খবর এমনটাই। শুধু তাই নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশেই প্রায় ঘন্টাদুয়েক এই দুজনের কথা হয়। এদিন জানা গেছে এমনটাই।

কিন্তু হঠাৎ করে সাত মাস পরে কেন শােভনের প্রত্যাবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন দল? রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, ২০১৯-এর লােকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বদলাতে শুরু করেছে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

বঙ্গে বিজেপির অভাবনীয় উত্থানে সমস্ত সমীকরণ বদলে গেছে হঠাই। তৃণমূলে একের পর এক ভাঙনের ঘটনায় দক্ষ সংগঠক শোভন  চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে আপশােস প্রকাশ করেছিল দলেরই একাংশ।

এদিকে রবিবার দিল্লির বৈঠকে এই অভিজ্ঞ নেতা প্রসঙ্গে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, এমনটাই গুঞ্জন গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। উল্লেখযােগ্যভাবে এতদিন পর্যন্ত মেয়রের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যােগাযোেগ রেখেছিল বিজেপির একাংশ, কানাঘুষােয় শােনা যাচ্ছিল এমনটাই।

স্বাভাবিকভাবেই শোভন  চট্টোপাধ্যায় গেরুয়া শিবিরের দিকে পা বাড়ালে তা একটি বড় ধাক্কা রাজ্য শাসক দলের জন্য। ফলে তড়িঘড়ি ময়দানে নেমেছে তৃণমূলও।

শোভন  ঘনিষ্ঠদের কথায়, রাজনীতিতে এই নেতার হাতেখড়ি তৃণমূল হাত ধরেই। ১৯৮৫ সালে প্রথম কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বাম জামানায় তৃণমূল সুপ্রিমাের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সব লড়াইয়ে সঙ্গ দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন শোভন । এমনকি দলের প্রতি দীর্ঘ আনুগত্যে ছেদ পড়েনি গত বছরে তাঁর পদত্যাদের সময়ও। মেয়র পদ থেকে পর পরবর্তী মেয়র নির্বাচনী ভােটে কাউন্সিলর হিসাবে ভােট দেন তিনি।

এই সময় বিজেপির তরফে ফিরহাদ হাকিমের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন মীনাদেবী পুরােহিত। বামেরা অবশ্য এই মেয়র নির্বাচন প্রক্রিয়া বয়কট করেছিলেন। সেই সময় মীনাদবী পুরােহিত ভােট দেওয়ার জন্য অনুরােধও করেছিলেন শোভন  চট্টোপাধ্যায়কে।

কিন্তু মেয়র নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের তরফে কোনও ক্রস ভােটিং হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই শেষবেলাতেও দলের প্রতিই আনুগত্য দেখিয়েছিলেন এই তৃণমূল নেতা। শুধু তাই নয়, বিগত সাত মাসে একবারও দলের সামান্যতম বিরােধিতা করতেও দেখা যায়নি তাঁকে।

অন্যদিকে আরএসএস সমর্থিত একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন শোভন  চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিত হওয়ার পর থেকেই জোর শােরগােল শুরু হয়েছিল। কিন্তু মঞ্চের পেছনে বিজেপির রাজনৈতিক স্লোগান দেখে অনুষ্ঠান কক্ষ ত্যাগ করেন এই দুজনেই।

২০২০ সালেই একাধিক পুরসভায় নির্বাচন। এদিকে বেহালার চারটি ওয়ার্ডে তৃণমূলে বড়সড় ভাঙন ধরেছে। প্রায় ৫০০ তৃণমূল কর্মী যােগ দিয়েছেন বিজেপিতে, যা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা বাড়িয়েছে তৃণমূলের। বেহালা পূর্বে তৃণমূলের বিধায়ক এখনও শোভন  চট্টোপাধ্যায়। এলাকায় তাঁর প্রভাব এবং দাপট এখনও যথেষ্ট। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর উপস্থিতি সত্ত্বেও দলের এই ভাঙন নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য শাসক দল।

এদিকে সম্প্রতি কলকাতা পুরসভাতেও ভাঙন ধরাতে পারে বিজেপি, এমনটাই রটেছিল। এমনকি পূর্ব ও পশ্চিম বেহালার ১৯ কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমাে স্বয়ং। স্বাভাবিকভাবেই এই টলমল অবস্থায় শোভন  চট্টোপাধ্যায়কে যেনতেন প্রকারে দলে চাইছে তৃণমূল। শোভন কে দলে ফেরাতে চেয়ে কিছুদিন আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের তরফে।

১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দেখভালের দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হয় শোভন পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। প্রসঙ্গত, শোভন  চট্টোপাধ্যায়ের মেয়র পদ থেকে পদত্যাগের পর তাঁর ওয়ার্ডের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রত্নাদেবীকে।

সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয় দলীয় তরফে। এদিকে এই হেভিওয়েট নেতা প্রসঙ্গে সবুজ সংকেত দিয়েছে বিজেপিও। এখন দেখার শোভন  চট্টোপাধ্যায় কি অভিমান ভুলে তৃণমূলের ওপরেই বিশ্বাস রাখবেন, নাকি যােগ দেবেন গেরুয়া শিবিরে!