প্রয়াগরাজ, ১৯ ডিসেম্বর – জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলায় ফের ধাক্কা খেল মসজিদ কমিটি। মসজিদ প্রাঙ্গনে হিন্দু মন্দির রয়েছে বলে দাবি করে হিন্দু পক্ষ যে আবেদন করেছিল, তা খারিজ করার জন্য এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জনিয়েছিল মসজিদ কমিটি। তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। মামলা শোনার জন্য বারণসী জেলা আদালতকে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ। মসজিদ চত্বরে মন্দিরের পুনর্নির্মাণের আবেদনগুলোর দ্রুত শুনানি শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বারাণসীর আদালতকে।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির প্রাঙ্গনে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ করে বারণসীর জেলা আদালতে হিন্দু সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। সেই সঙ্গে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি আছে দাবি করে উপাসনার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। হিন্দু পক্ষের এই আবেদন খারিজ করার জন্য মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে আগামী ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-কে পুরো মসজিদের জরিপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ১৯৯১ সালের মামলার রক্ষণাবেক্ষণ যোগ্যতাকে সমর্থন করেছে। রায় ঘোষণা করে বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল বলেছেন, ” বারাণসী আদালতে দায়ের করা মামলাটি রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং ধর্মীয় উপাসনার স্থান আইন ১৯৯১ দ্বারা নিষিদ্ধ নয়।”
উল্লেখ্য, বারাণসী আদালতে হিন্দু পক্ষের দায়ের করা মামলার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি, উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড-সহ আরও কয়েকটি মুসলিম সংগঠন। তাদের দাবি, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন মোতাবেক জ্ঞানবাপীর ধর্মীয় চরিত্র ও শৈলী বদলানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওয়ের সরকার দেশকে সাম্প্রদায়িক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে ধর্মস্থান আইন প্রণয়ন করে। জ্ঞানবাপী মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের কাছে যে আরজি পেশ করেছে, তার ভিত্তিও ওই কেন্দ্রীয় আইন, যাতে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় ধর্মস্থানগুলির চরিত্র যেখানে যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। কোনওরকম অদলবদল ঘটানো যাবে না। একমাত্র অযোধ্যা ছাড়া দেশের আর কোনও ধর্মস্থানের চরিত্র কোনওভাবেই বদলানো যাবে না।
এদিকে মসজিদের ভিতরে ভিডিয়োগ্রাফি চলাকালীন শিবলিঙ্গের খোঁজ মেলে বলে অভিযোগকে ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক। সেই সঙ্গে মন্দির ভেঙে মসজিদ করা হয়েছে বলে দাবি করে হিন্দু সংগঠনগুলি। বারাণসী জেলা আদালতে একটি মামলা হতেই বিতর্কিত স্থানটি ঘিরে ফেলা হয়েছিল।
বিতর্কিত স্থান ছাড়া মসজিদ জরিপের জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল বারাণসীর জেলা আদালত। যদিও নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয় মসজিদ কমিটি। পরে সেই মামলা ফেরৎ পাঠানো হয় এলাহাবাদ হাইকোর্টে। জরিপ নিয়ে জেলা আদালতের নির্দেশকেই বহাল রাখে উচ্চ আদালত।
সোমবারই জ্ঞানবাপীর বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা নিয়ে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। তার পরের দিনই দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিল উচ্চতর আদালত। ১৯৯১ সালে জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে পুজো করার অনুমতি চেয়ে বারাণসী আদালতে মামলা দায়ের হয়। পালটা আবেদন করে আদালতের দ্বারস্থ হয় মুসলিম পক্ষও। তবে দীর্ঘ শুনানির পরেও জ্ঞানবাপী মসজিদের বিবাদ নিষ্পত্তি হয়নি। এহেন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মুসলিম পক্ষের দায়ের করা মামলাগুলো খারিজ করে দিয়েছে এলাহাবাদ হাই কোর্ট। মসজিদ চত্বরে মন্দিরের পুনর্নির্মাণ চেয়ে যে আবেদনগুলো জমা হয়ে রয়েছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে তার শুনানি শেষ করতে হবে বলেও বারাণসীর আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এলাহাবাদ হাই কোর্ট জানায়, মসজিদ চত্বরটি হয় হিন্দু নয় মুসলিম- কোনও এক পক্ষের বৈশিষ্ট্যই বহন করবে। এভাবে মামলা চলতে থাকলে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন মামলা চলার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভারতের বৃহত্তম দুই সম্প্রদায়ের উপর। তাই দ্রুত শুনানি করে ছমাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করে ফেলতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০২১-এর আগস্টেও পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়েছিলেন বারাণসী আদালতে। সেই মামলায় বারাণসী দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর নিযুক্ত কমিটির নির্দেশে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিতরে শুরু হয়েছিল ভিডিও সার্ভে। তার পরে সোমবার আদালতে জমা পড়ে এএসআইয়ের রিপোর্ট।