পাশাপাশি পুলিশ আদালতে জানায় , সংসদে হামলা চালানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং এর পিছনে অন্য কোন শত্রু দেশ বা জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ‘সুপরিকল্পিত এই হামলার’ পিছনে আরও বড় ও গভীর ষড়যন্ত্র ছিল কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি পড়েন ললিত ঝাঁ। তিনিই একের পর এক প্ল্যান ফাঁস করছেন বলে জানা গিয়েছে। জেরায় তিনি জানান, প্রথমে লোকসভা কক্ষের ভিতরে নিজেদের গায়ে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। সরকারের কাছে তাঁদের বার্তা আরও জোরালোভাবে পৌঁছে দেওয়াই তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। সংসদ ভবনের বাইরেও এই পথে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হামলাকারীরা পরিকল্পনা করেছিলেন, শরীরে অগ্নিপ্রতিরোধ জেল লাগিয়ে তাঁরা অগ্নিসংযোগ করবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বদলান তাঁরা। লোকসভা কক্ষ তোলপাড় করে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকলেও, নিজেদের নিরাপত্তার দিকটি খেয়াল রাখেন হামলাকারীরা। শেষ পর্যন্ত, গায়ে আগুন লাগানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় স্মোক ক্যান ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের কাছে জেরায় সাগর এবং মনোরঞ্জন একথা স্বীকার করেছেন । পুলিশের দাবি, একটি-দুটি নয়, সাতটি স্মোক-ক্যান নিয়ে ওইদিন সংসদে ঢুকেছিল হামলাকারীরা।
ললিত-নীলমদের কাছে হাতিয়ার হিসেবে ছিল সংসদ ভবনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পুরনো ভিডিয়ো। ইন্টারনেট থেকে আশপাশের এলাকা সংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করা হয়। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে, নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে নিজেদের মধ্যে গোপন অ্যাপে চ্যাট করতেন হামলাকারীরা।
প্রসঙ্গত, ১৩ ডিসেম্বর দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র নিয়ে এবং জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি নামে দুই যুবক। লোকসভায় জ়িরো আওয়ারে দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে ছুড়তে থাকেন রংবোমা। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার অধিবেশন কক্ষের একাংশ। পরে সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন অমল শিন্ডে এবং নীলম। তাঁদের হাতেও ছিল ‘স্মোক ক্র্যাকার’। তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ভিকি শর্মা নামে এক জনকেও। পরে দিল্লি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ওই ঘটনার ‘মূল পাণ্ডা’ ললিত ঝা। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, বুধবার লোকসভায় ওই ঘটনা ঘটানোর পর হোয়াট্সঅ্যাপে সেই ঘটনার ভিডিও প্রথম পাঠিয়েছিলেন ললিত। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনায় বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিং-কেও জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ভাবছে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল। এই সেলের বিশেষ শাখার তরফে বিজেপি সাংসদের বয়ান রেকর্ড করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক।
স্পেশাল সেলের বিশেষ তদন্তকারী দল ৫ অভিযুক্তকে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। সংসদে হামলার আগে দিল্লিতে যেখানে তাঁরা দেখা করেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ধৃতদের জেরার পর ছুটির দিনে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে পারে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল।