জয়পুর, ৫ ডিসেম্বর – ভোটের ফলাফল ঘোষণার হতে না হতেই হত্যাকাণ্ড রাজস্থানে৷ ভর দুপুরে জয়পুরে রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণি সেনা প্রধান সুখদেব সিং গোগামেরিকে তাঁর নিজের বাড়িতে ঢুকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিল দুষ্কৃতীরা৷ সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিষ্ণোই গ্যাং থেকে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন তিনি৷ সম্প্রতি, করণি সেনার মূল সংগঠন থেকে আলাদা হয়ে নিজস্ব দল তৈরি করেছিলেন এই সুখদেব সিং গোগামেরি৷ এই রাজপুত করণী সেনা বারে বারেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। পদ্মাবত সিনেমার শ্যুটিংয়ের সময় সঞ্জয় লীলা বনশালির সেটে ঢুকে ঝামেলা বাঁধিয়েছিল এই করণী সেনারাই। এমনকী সঞ্জয় লীলা বনশালিকে চড় মারার অভিযোগও ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। রানি পদ্মাবতীর চরিত্র করার জন্য দীপিকা পাড়ুকোনের নাক কেটে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল করণী সেনারা। তবে নাকি গোগামেদির করণী সেনার সংগঠন তাদের থেকে আলাদা ছিল। ২০১৫ সালেই নিজের আলাদা দল গড়েছিলেন গোগামেদি। খুনের দায় নিয়েছে সলমনকেও হুমকি দেওয়া লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং।
ঘটনাটি ঘটে রাজস্থানের শ্যামনগরের ‘দানাপানি’ নামের এক রেস্তোরাঁর পিছনের দিকে৷ রাজস্থান পুলিশের ডিজি উমেশ মিশ্র বলেছেন, “প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, গোগামেডি উপস্থিতিতে তাঁর বাড়িতে চারজন প্রবেশ করেছিল এবং তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। গোগামেডির একজন নিরাপত্তা কর্মী এবং অন্য আর একজনও গুলিতে আহত হয়েছেন।” জয়পুরের পুলিশ কমিশনার বিজু জর্জ জোসেফ বলেছেন, “গোগামেডিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। শ্যাম নগর থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। আততায়ীদের সম্পর্কে কোনও সূত্রের সন্ধানে তারা ওই এলাকার সবকটি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে। তারা মোটরবাইকে করে এসেছিল। গুলি ছোড়ার পর বাইকে করেই পালায়।
রাজপুত করনি সেনার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অজিত সিং মামদোলি জানিয়েছেন, “৩-৪ জন লোক সুখদেব সিং গোগামেডির) বাড়িতে এসেছিল। নিরাপত্তারক্ষীদের তারা বলে যে তারা সুখদেব সিং গোগামেডির সাথে দেখা করতে চায়। গার্ড তাদের ভিতরে নিয়ে যায় এবং চা খাওয়ায়। এরপর তারা হঠাৎ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।”
এর আগে, সুখদেব সিং গোগামেডিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল কুখ্যাত গ্যংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাংয়ের সদস্য সম্পত নেহরা। সেই হুমকির বিষয়ে তিনি জয়পুর পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। সেই হুমকির সঙ্গে এদিনের ঘটনার কোনও যোগ আছে কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ভোট মিটতেই এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যাতে হিংসা না ছড়িয়ে পড়ে, তার জন্য সতর্ক রয়েছে পুলিশ। কিছুদিন আগেই সম্পত নগরের লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং থেকে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন সুখদেব সিং গোগামেরি৷ হুমকির কথা পুলিশকেও জানিয়েছিলেন৷ এখন এটি ‘গ্যাং ওয়ার’, না এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়নি এখনও৷
চলতি বছরেই জুন মাসে মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে একটি হোটেলের ঘরে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় এক করণিসেনা কর্মীর৷ তাঁর শরীরে গুলির ক্ষত পাওয়া গিয়েছিল৷
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দায় স্বীকার করেছেন রোহিত গোদারা নামে একজন। তিনি নিজেকে লরেন্স বিষ্ণোই দলের সদস্য হিসেবে দাবি করেছেন। এই রোহিত গোদারা বিষ্ণোই দলের এক কুখ্যাত গ্যাংস্টার বলেই জানা গেছে। রাজস্থানের আরও এক দুষ্কৃতী রাজু ঠেঠকে খুনে নাম জড়িয়েছিল এই গোদারার। তাকে খুঁজছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসে ওয়ালাকে খুনের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে লরেন্স এখন জেলে। তবে তার সহযোগী ও ঘনিষ্ঠরা দল চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই রোহিত গোদারার নামে একাধিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। তাঁর খোঁজে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।